ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি

শেলী-মহিবুরের দ‍ুই বছরের কারাদণ্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
শেলী-মহিবুরের দ‍ুই বছরের কারাদণ্ড

ঢাকা: শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায়ে সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম)  চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও বিনিয়োগকারী সৈয়দ মহিবুর রহমানকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১৫ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

 

১৯৯৮ সালের এসপিএমের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার রায়ে বুধবার (২০ এপ্রিল)  এ দণ্ডাদেশ দেন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং করপোরেশনে অবস্থিত দ্রুত পুঁজিবাজারের মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ূন কবির।

 

এ নিয়ে মোট ছয়টি মামলার রায় ঘোষণা করলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে চারটিতে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর বাকি দু’টিতে আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে।          

রায়ে বিচারক বলেন, অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন। তারা ৩৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করে মোট ৩৩ লাখ টাকা  হাতিয়ে নিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারা লঙ্ঘন করেছে। যা একই অধ্যাদেশের ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য।

তাই কোম্পানির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও বিনিয়োগকারী সৈয়দ মহিবুর রহমানকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ২৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যককে ২ বছর করে কারাদণ্ড ও নগদ ১৫ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারের দিন থেকেই এ কারাদণ্ড কার্যকর হবে। এ আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ সর্বনিন্ম ৫ লাখ টাকা থেকে  যতো ইচ্ছা ততো জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ রানা খান আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামিরা অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন- তা প্রমাণে সফল হয়েছি। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা পলাতক। তাদের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ১২ এপ্রিল মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করা হয়। তবে মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় শুধুমাত্র বাদীপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়।

মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- বিএসইসি’র উপ-পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবের রহমান ও সিডিবিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী। তবে মামলার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকায় তার সাক্ষ্য আমলে নেননি ট্রাইব্যুনাল।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডসহ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও বিনিয়োগকারী সৈয়দ মহিবুর রহমানের অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে কমিশন ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরী। খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুর পর তার স্থলে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির তদন্তে কাশেম সিল্ক মিলসের শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে।

১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর ২০ লাখ শেয়ারের কোম্পানিটির ১ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টি শেয়ার ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। এ লেনদেন ও দাম বৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক।

১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর এসপিএম কাশেম সিল্কের ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ক্রয় ও ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রি করে। যা কাশেম সিল্কের ওইদিনের শেয়ার লেনদেনের ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

তদন্ত কমিটি দেখতে পায়, মো. মহিবুর রহমান ২৪ দশমিক ২৭ টাকা দরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন ও ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। তিনি দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে টানা ২২ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করেন। এরপরে ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আরও ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০টি শেয়ার কেনেন। তিনি ২১ দশমিক ৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৯০ টাকা দামে শেয়ার কেনেন।

এতে একই দিনে নিষ্পত্তির ব্যর্থতা এড়াতে বিক্রেতারা সৈয়দ মহিবুর রহমানের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য হন। এ পরিস্থিতিতে মহিবুর রহমান ডিকটেটেড মূল্য ২৬ টাকা করে বিক্রি শুরু করেন। এবং ২৫ দশমিক ৯০ টাকা দামে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে মহিবুর রহমান ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৯ টাকা ও বাকি থাকা ৯২ হাজার ৩০০ শেয়ারে মুনাফা করেন।

মহিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করেন। যা প্রকৃতপক্ষে শেলী রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তার স্বামী লুৎফর রহমান চেকের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন। যা ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার কেনায় ব্যবহার করা হয় না। মহিবুর রহমান এ শেয়ার ক্রয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকার রেমিটেন্স ব্যবহার করেন। এখান থেকে তদন্ত কমিটি বুঝতে পারে যে, ডিপোজিটকৃত টাকা অর্থায়ন করেন শেলী রহমান।

মহিবুর রহমান ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকা অর্থায়ন করে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। যা ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় জালিয়াতি। এক্ষেত্রে এসপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও মহিবুর রহমান যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন বলে তদন্তে বলা হয়।

বিএসইসি’র এ তদন্তের প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনে ২৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

পুঁজিবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এটি এ আদালতের ষষ্ঠ রায়। ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় ছিল, ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর দায়ে মাহবুব সারোয়ার নামে একজনের ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা। এছাড়া দণ্ড হয়েছে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডেইলি ইন্ডাস্ট্রিজ পত্রিকার সম্পাদকের। তাদের প্রত্যেককে ৩ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। শেয়ার প্রতারণার দায়ে চার বছরের জেল ও ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে চিক টেক্সটাইল লিমিটেডের দুই পরিচালককে। আর খালাস দেওয়া হয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাত্তারুজ্জামান শামীম ও সাবিনকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুতুব উদ্দিনকে। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মামলা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬

এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।