ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

কোম্পানির ঠিকানায় আবাসিক বাসা, ক্লিনিক

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৪
কোম্পানির ঠিকানায় আবাসিক বাসা, ক্লিনিক

ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের তালিকাভুক্ত সাত কোম্পানির কোনো অস্তিত্বই নেই। ডিএসইর কাছে কোম্পানির যেসব ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এখন কোথাও আবাসিক বাসা আবার কোথাও বেসরকারি ক্লিনিক বসিয়ে ব্যবসা চলছে।


 
সম্প্রতি ডিএসইর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওটিসিতে তালিকাভুক্ত রয়েছে মোট ৬৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে তালিকাভুক্তির পর একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি ২৫ কোম্পানির। এছাড়া অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি ৭টি কোম্পানির এবং নামমাত্র লেনদেন হয় ৩৪টি কোম্পানির শেয়ার।
 
ডিএসইর ওটিসি মার্কেটে অস্তিত্বহীন কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো, চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডাটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্টস, ফার্মাকো এবং সালেহ কার্পেট।
 
ওটিসির কয়েকটি কোম্পানির ঠিকানায় সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো কোনো কোম্পানির ঠিকানায় আবাসিক বাসা আবার কোথাও ক্লিনিক। আবার কোথাও ওই নামে কোনো কোম্পানিই নেই। এমনকি কোম্পানির ঠিকানায় যে ই-মেইল ও ফোন নম্বর দেওয়া আছে সেগুলোও সক্রিয় নেই। আবার অনেক কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে ওইসব কোম্পানির প্রকৃত মালিক কে তা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
 
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানি প্রোফাইলে দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র ও তথ্য। ডিএসইতে ফার্মাকোর ঠিকানা দেওয়া আছে ৫০/১ পুরানা পল্টন লাইন, ঢাকা। সম্প্রতি ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ফার্মাকোর অফিসের কোনো অস্তিত্ব নেই।

পুরানা পল্টনের ওই ঠিকানায় কর্মরত নিরাপত্তাকর্মী মো. নূর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘এই ভবনে কোনো অফিস ছিল না, এখনও নেই। বাড়ির মালিকই দীর্ঘদিন ধরে এই বাসায় বসবাস করেন। ’
 
ভবনের বিপরীতে বিজয়নগর ফার্মেসির মালিক সারোয়ারুল আলম বাংলানিউজকে জানান, ‘আমি গত ১০ বছর ধরে এখানে ওষুধের দোকান চালাচ্ছি। কিন্তু ওই বাড়িতে ফার্মাকো নামের কোনো কোম্পানি দেখিনি। এমনকি ওই কোম্পানির নামও আমি কখনও শুনিনি। ’
 
অন্যদিকে, এম হোসেন গার্মেন্টসের কোম্পানি প্রোফাইলে ঠিকানা দেওয়া আছে বাসা নম্বর-২ (তৃতীয় তলা), রোড-২৭, ব্লক-কে, বনানী, ঢাকা। সরেজমিনে ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের একপাশে একটি ব্যাংকের এমডি ভাড়া থাকেন। অন্যপাশে তৃতীয় তলায় মিনহাজ গ্রুপ নামের একটি কোম্পানির অফিস।
 
ওই কোম্পানির অফিসে যোগাযোগ করা হলে নাম জানাতে অসম্মতি প্রকাশ করে এক কর্মকর্তা জানান, ‘২০০৭ সাল থেকে তারা এখানে অফিস করছেন। এর আগে এম হোসেন গার্মেন্টস নামে কোনো কোম্পানি ছিল কি-না তা আমাদের জানা নেই। আমরা আসার আগে হয়তো এখানে ওই কোম্পানির অফিস থেকে থাকতে পারে। ’
 
ডিএসইতে রাসপিট ডাটা ও রাসপিট ইনকরপোরেশনের প্রোফাইলের ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর গ্রিণ রোডে একে কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বার। এছাড়া ওই ভবনের চতুর্থ তলায় অন্য দুটি কোম্পানির অফিস রয়েছে।
 
ভবনের কেয়ারটেকার লাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১০/১১ বছর ধরে এ ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু এই নামে কোনো কোম্পানি দেখিনি। তবে লোকের মুখে শুনেছি অনেক আগে ভবনের চার তলায় ওই নামে দুটি কোম্পানি ছিল। কিন্তু আমি এসে দেখিনি। ’
 
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময় আপনাদের মতো অনেকে এ দুটি কোম্পানির খোঁজ খবর নিতে আসেন। কিন্তু আমি এ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে কিছুই জানি না।
 
ওটিসি মার্কেটের উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ওটিসি মার্কেট বলতে মূলত যেটা বুঝায় আমাদের দেশে সেটা নেই। এখানে ওটিসি মার্কেটের সঠিক কার্যক্রম হয় না। বিভিন্ন সময় যেসব কোম্পানিগুলো ওটিসিতে পাঠানো হয়েছে তা মূল মর্কেটে ফেরাতে আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেহ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিভিন্ন সুপারিশ করেছি। তবে কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাই বিএসইসি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ’
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অস্তিত্ব না থাকা কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিএসইসির কিছুই করার নেই। তবে কোম্পানিগুলো এখন অবলুপ্ত হতে পারে। তবে কোম্পানি অবলুপ্তির দায়িত্ব আমাদের না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বা কোনো পরিচালক যদি আমাদের কাছে অবলুপ্তির আবেদন করেন তবে আমরা অবলুপ্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। ’
 
তিনি আরও বলেন, শেয়ার ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। বিনিয়োগকারীদের দেখে শুনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি কোম্পানি মুনাফা না করতে পারে তবে কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডাররাই কোম্পানি অবলুপ্ত করবে। এখানে বিএসইসির কিছুই করার নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।