ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

আলোচনায় মুরাদ-জাহাঙ্গীর, রক্তক্ষয়ী ইউপি ভোট

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
আলোচনায় মুরাদ-জাহাঙ্গীর, রক্তক্ষয়ী ইউপি ভোট

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর পার করলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বছরের অধিকাংশ সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত থাকলেও বেশ কিছু আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এ বছরটি পার করলো।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল একজন প্রতিমন্ত্রী ও এক সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে বহিষ্কারের ঘটনা।  

এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  

এ বছর ছিল মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সেইসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী মুজিব বর্ষের কর্মসূচি উদযাপিত হয়। প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দসহ সার্কভুক্ত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। এছাড়া ভিডিও বার্তা ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র সরকার প্রধানরা শুভেচ্ছা জানান।

বছরের বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বক্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। এ সমস্ত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে কয়েকজনকে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন পদত্যাগে বাধ্য হওয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দলের পদ ও মেয়রের চেয়ার হারান গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলম। বিতর্কিত বক্তব্য-কর্মকাণ্ডে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বছরের শেষ পর্যায়ে এসে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের কারণে মুরাদ হাসানের পদত্যাগের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। ৭ ডিসেম্বর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। মুরাদ হাসানের এই ঘটনা ছিলো বহুল আলোচিত বিষয়। এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে গত ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর তাকে মেয়র পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এরপর দল থেকে বহিষ্কার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতা করার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন আব্বাস আলী। আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে গত ২৫ জুলাই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ২৯ জুলাই তিনি গ্রেফতার হন।

দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ১৪ এপ্রিল মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরই মারা যান সবেক ডেপুটি স্পিকার ও আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান অধ্যাপক আলী আশরাফ।

এ বছর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে হতাহতের ঘটনা ছিলো আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এই নির্বাচনে অধিকাংশ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আওয়ামী লীগ। দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে অধিকাংশ ইউপিতেই আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায়। আগে থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় এক শ’ জনের মতো প্রাণ হারান এবং সহস্রাধিক আহত হন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।