ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ খুলে দেয় আইন সংস্কারের পথ

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ খুলে দেয় আইন সংস্কারের পথ

ঢাকা: ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেলো আরেকটি বছর। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২০। সেই সঙ্গে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০১৯। নানা ঘটনা-পরিক্রমায় মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিদায়ী বছর। 

বিদায়ী বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর। আইনটি পাস করার পর এবং কার্যকর করার পর পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন সাধারণ মানুষকে হতবাকও করে।

এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলে।  

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রোববার দুপুর ১২টায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের দু’টি বাস প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। বাস চাপায় সেখানেই প্রাণ হারান কলেজের দু’শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া খানম মিম। দু’জনের মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে নিরাপদ সড়ক পরিবহন আইনের দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনটির গেজেট প্রকাশিত হয়। এর ১১ মাস পর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়।  

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের পহেলা নভেম্বর কার্যকর করা হয় বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এর ফলে প্রায় ১৩ মাস পর তা কার্যকর করে সরকার। তবে বিধি প্রণয়ন না থাকা ও নানা অসঙ্গতি থাকায় সরকারকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়। আইনটি কার্যকর করার পর সংশোধনের দাবিতে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটও করে মালিক-শ্রমিকরা। পাশাপাশি দুর্ঘটনার মামলাকে জামিন যোগ্য করাসহ কয়েকটি ধারা সংশোধনেরও দাবি তোলে তারা। ফলে সরকার আলোচনায় নমনীয় হওয়ায় ধর্মঘট তুলে নেয় শ্রমিকরা।  

তবে ১ নভেম্বর ঘোষণা দিলেও আইনটি কার্যকর হয় মাসখানেক পর। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে প্রথম মামলা হয় ৩০ নভেম্বর। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয় সরণিতে উল্টো পথে চালানোর দায়ে আমিনুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল চালককে আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। আইন ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে নতুন আইনে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়।  

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গেজেটে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ১-এর উপধারা (২)-এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর তারিখকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার বিধান রাখা হয়।  

ভুয়া লাইসেন্সের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয় নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা।

লাইসেন্সে রয়েছে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড, হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে।

নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি করা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। আইনের ১০৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, মোটরযান চলাচলজনিত দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সেটি ১৮৬০ সালের পেনাল কোড অনুযায়ী অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। আইনটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- ১০৫ নম্বর ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য করা। মূলত এ জায়গাটিতেই আপত্তি ছিলো পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
টিএম/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।