ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ব্যাংকিংখাতে আলোচনায় মালিকানা-পরিচালনায় বদল

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
ব্যাংকিংখাতে আলোচনায় মালিকানা-পরিচালনায় বদল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংকের লোগো

ঢাকা: নানা ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৭ সাল। ব্যাংকিংখাতে এ বছর আলোচনায় ছিল কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন। নতুন বছরের শুরুতেই পরিবর্তন আসে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা-পরিচালনায়।

এ নিয়ে ব্যাংকটির মধ্যে শঙ্কার মেঘও তৈরি হয়। এমন পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বছরের শেষ দিকে দেখা যায় বেসরকারি খাতের স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও।

আর  সর্বশেষ পরিবর্তন আসে আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে।

ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় পরিবর্তন
বছরের শুরুতেই ৫ জানুয়ারি বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংকে পরিবর্তন আনা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের গ্রাসমুক্ত করতে সেসময়কার চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে সরিয়ে এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় আরাস্তু খানকে। পদত্যাগ করেন ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে এ পদে আনা হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞাকে। চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ব্যাংকটির ফাউন্ডেশন পদ থেকেও পদত্যাগ করেন মুস্তাফা আনোয়ার।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলেন ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা মীর কাসেম আলী। তিনি একসময় ইবনে সিনা ট্রাস্টেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। জামায়াত-ঘনিষ্ঠ ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন মুস্তাফা আনোয়ার। তাকে সরিয়ে দিতে এবং ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করতেই এ প্রশংসনীয় পরিবর্তন আনে সরকার।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে রদবদল
৩০ অক্টোবর বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আসে। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা লোপাট করে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশব্যাপী নাশকতায় অর্থায়ন, ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদের সহযোগিতায় নামি-বেনামি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে ওই টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতা, পছন্দের লোকদের ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া, দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলা, সিএসআরের টাকার অপব্যবহার, কর্মী নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রেজাউল হক। পাশপাশি পদত্যাগ করেন ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল হক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহীদ হোসেনও।

নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ পান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি কাজী ওসমান আলী। আর নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ।

মালিকানা পরিবর্তনের আলোচনায় এবি ব্যাংকও
বিধিবহির্ভূত অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চারটি বিদেশি কোম্পানির নামে ৩৪০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ এবং বিভিন্ন সময় ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ মাথায় নিয়ে চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় পদত্যাগ করেন বেসরকারিখাতের প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও পরিচালক ফাহিমুল হক।

তাদের বিদায়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এম এ অ‍াওয়াল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান পরিচালক ফিরোজ অ‍াহমেদ। এছাড়া পরিচালিক পদে নির্বাচিত হন শিরিন শেখ, সাজির অহমেদ ও মোশতাক অ‍াহমেদ চৌধুরী।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ
ঋণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং দায়িত্বে পালনে ব্যর্থতার কারণে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন দিন পর ১০ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ফরাছত আলী। ব্যাংকের এক বিশেষ বৈঠকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানও পদত্যাগ করেন।

এনআরবি কমার্শিয়ালের নতুন চেয়ারম্যান পদে এখন দায়িত্ব পালন করছেন তমাল এসএম পারভেজ। এমডি পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমডি কাজী মো. তালহা।

ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, এমডিকে অপসারণ
আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড। শেষ পর্যায়ে এসে গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় ফারমার্স ব্যাংকের পাশে দাঁড়‍ায় ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যে ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতি। নতুন চেয়ারম্যান হন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ। এছাড়া ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়।

এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর ১৯ ডিসেম্বর তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঋণ বিতরণের অভিযোগে ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

১০০ শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ
চলতি বছরের ১০ জুলাই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ঋণ খেলাপি ১০০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি সেসময় জানান, দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩ হাজার ৪৩৫ কোটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে ক্ষোভ
গত ২১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী ২০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক অধ্যাপক তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতের কর্মকাণ্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপ বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন। তার দাবি, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি তৈরি বা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কোনো ক্ষেত্রেই স্বাধীন নয়। কারণ মুদ্রানীতি তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর সুদ হার ঠিক করে সরকার। আবার সরকার ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ করে। আর তাদের উপযুক্ততা যাচাই করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সরকারের নিয়োগকৃত পরিচালকদের বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করতে পারে না। ’ এ নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এসই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।