ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১৩ সালে নিহত ১১২

মাসুক হৃদয়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১৩ সালে নিহত ১১২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১৩ সালে নান‍া ঘটনা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনকি ট্রেন থেকে ফেলে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে মারা গেছে ৩৬ জন,  সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জন, গ্রাম্য সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৩০ এবং ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।



এছাড়াও আত্মহত্যা, ধর্ষণ, অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার এবং ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বছরটি।

জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে। এর অধিকাংশই ঘটেছে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে। বাকি দুর্ঘটনাগুলো স্থানীয় বিভিন্ন সড়কে ঘটেছে।

জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ও ট্রেন থেকে ফেলে পাঁচজনের মৃত্যু এবং একজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বাড়িউড়া এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে এক যাত্রী নিহতসহ আটজন আহত হয়।

৩১ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর কুরুলিয়া রেলসেতু এলাকায় আখাউড়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনের একটি বগিতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত হানা দিয়ে ছিনতাইয়ের পর পাঁচ যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এতে চার যাত্রী নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া ১৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মধ্যবর্তী জলাশয় থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪০ জনের মৃত্যু এবং এক কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে ১, ১০ ও ৩০ তারিখে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানপুর, রামরাইল এবং বাঞ্ছারামপুরে বাসের ধাক্কায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক ও যাত্রী এবং ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীসহ চারজন নিহত হয়।

২ মার্চ শহরের কালাইশ্রীপাড়া কারখানা ঘাট এলাকার তিতাস নদী থেকে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২২ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামে টর্নেডো আঘাত হানে। এতে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩৬ জনের প্রাণহানী ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ১৬০ কোটি টাকার।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টর্নেডোতে জেলার সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার মোট ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় ওইসব এলাকার মোট সাড়ে আট হাজার বাসিন্দা ক্ষতির শিকার হন। খুব বেশি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৭৩১টি পরিবার। এর মধ্যে ১৭৭৮টি বাড়ি সম্পূর্ণরুপে ও ৭৪৪টি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়। এসব পরিবারের নারী, শিশু ও পুরুষসহ ৩৬ জন নিহত ও ৪৩১ জন আহত হয়।  

এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানপুরে ট্রাকের চাপায় এক বৃদ্ধ নিহত ও সরাইলের শাহজাদপুর ইউনিয়নের মলাইশ গ্রাম সংলগ্ন তিতাস নদী থেকে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়।

মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। ৪, ১১ ও ২৯ তারিখে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগরের চান্দুরা, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর ও সরাইল-নাসিরনগর সড়কের মেন্দুরা এলাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।

জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা তিন। ১, ২২ ও ২৯শে জুন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের রাধিকা, শহরের মৌলভীপাড়া ও  ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৯, ১২, ১৪, ২২ ও ৩১ তারিখে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ, বিজয়নগর ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানপুরে স্কুল শিক্ষক, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও পথচারীসহ আটজন নিহত হয়। ১৭ জুলাই আখাউড়া সীমান্তের কাঁটাতারের অভ্যন্তরে ভারতীয় এলাকায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
 
আগস্টের ২, ১১, ১২, ১৬ ও ২৮ তারিখে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের কুট্টাপাড়া, শাহবাজপুর, নবীনগর, আশুগঞ্জ ও শহর বাইপাস সড়কের দক্ষিণ পৈরতলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, শিশু ও পথচারীসহ সাতজন নিহত হয়।

৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ঘাটুরা ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় দুইজন।

অক্টোবর মাসের ১৬ ও ৩১ সরাইল ও আখাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়।

নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে ১৬ তারিখে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুহিলপুরে ট্রাক্টর (পাওয়ার টিলার) ও দু’টি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার ছয় যাত্রী ও ২২ নভেম্বর শহরের উত্তর মৌড়াইলে এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়।

এছাড়া নভেম্বরের ১৭ ও ২৯ তারিখে কসবার সালদা নদী থেকে এবং আশুগঞ্জের চরচারতলা ইউনিয়নের গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীর বৈদ্যুতিক খুঁটির কাছ থেকে অজ্ঞাতপিরচয় তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ডিসেম্বর মাসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় অটোরিকশার সঙ্গে ভ্যানগাড়ির মুখোমখি সংঘর্ষে আতাউর রহমান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত হয়।    

২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ সংঘর্ষ যেন নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। বিশেষ করে এখানকার সরাইল উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই  ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। এছাড়া অন্য উপজেলাতেও প্রায়শই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার, জমি ও বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ ছাড়াও অন্যান্য তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এসব সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এসব সংঘর্ষে টেঁটা-বল্লমসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত এক বছরে ৩০ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা এবং আখাউড়ায় দুইজনকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৪
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।