ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

নান্দনিকতায় অনন্য খুবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
নান্দনিকতায় অনন্য খুবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খুবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ যেন নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি অসাধারণ কারুকাজে সজ্জিত করা হয়েছে।

সুপরিসর মসজিদটি ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট (শুক্রবার) উদ্বোধন করা হয়। অনন্য সৌন্দর্যের আঁধার এবং স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন দেখতে ও নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে আসেন।  

খুবি সূত্রে জানা যায়, নান্দনিকতায় অনন্য খুবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ১৪৫০০ বর্গফুট আয়তনের একতলার এক গম্বুজ বিশিষ্ট। এ গম্বুজটি খুলনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবদুল কাদির ভূঁইয়া ২০০৩ সালে এ মসজিদটির নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের তৎকালীন শিক্ষক মুহাম্মদ আলী নকী মসজিদটির প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করেন। তবে, মসজিদের প্রাথমিক ভিত্তির কাজ শুরুর পর দীর্ঘদিন আর এর নির্মাণকাজ এগোয়নি। বর্তমান উপাচার্য মসজিদের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরুর এবং তা শেষ করার নিরন্ত উদ্যোগ নেন। এ সময় মসজিদটির নকশার কিছুটা পরিবর্তন সাধন করে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কটকা স্মৃতিসৌধের অদূরে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে এ মসজিদটির অবস্থান। এর অদূরেই রয়েছে ছাত্রদের তিনটি হল, যথাক্রমে: খানজাহান আলী হল, খানবাহাদুর আহছানউল্লা হল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। অপরদিকে মসজিদটির উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে ড. সত্যেন্দ্র নাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন এবং কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ফলে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এ মসজিদে নামাজ আদায়ে সুবিধা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, খুবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি জামে মসজিদ ছিল এতদিন। তৎকালীন ভিসি নজরুল ইসলামের সময় একটি জামে মসজিদ হয়েছিল। কোন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ছিল না। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী আমাদের একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হওয়ার কথা সে হিসেবে অনেক আগেই মসজিদের পাইলিং হয়েছিল। অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। গত ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামানেরর আমলে আবার কাজ শুরু হয়। বাজেট অনুযায়ী পুরোদমে মসজিদের কাজ শুরু হয়। এখন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামাজ পরার জন্য উন্মুক্ত। যদিও কিছু কাজ বাকি ছিল। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রথম জুমা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পরে মসজিদের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি যাবতীয় অসমাপ্ত কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের সংখ্যা বাড়ছে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে একটু বড় করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। ছাত্রীদের একটি দাবি ছিল তাদের একটি নামাজের জায়গা। ভিসি স্যারের কাছেও তারা এ দাবি করেন। ভিসি স্যার মসজিদ উদ্বোধনের দিন মেয়েদের জন্য নামাজের জায়গা করার নির্দেশ দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি সাইড করে দিয়েছি। সেখানে আলাদা ওজুখানা রয়েছে। যাওয়া আসার আলাদা রাস্তা রয়েছে। ক্লাস করতে করতে নামাজের সময় হলে ছাত্রীরা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেলে ঘুরতে আসা অন্যান্যরা সেখানে গিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। খুবির কেন্দীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, ১৪৫০০ স্কয়ার ফুট দৈর্ঘ্য মসজিদটিতে ৩ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের ভেতরে ২০ কাতার ও বাইরে ১০ কাতারে লোক নামাজ পড়তে পারেন। প্রতি কাতারে ১শ জন করে দাঁড়াতে পারবেন। মধ্যপ্রাচ্যের মসজিদের মতো এক ফ্লোরে একসঙ্গে নামাজ আদায় করার বৈশিষ্ট্যে এই মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। এ রকম মসজিদ এ এলাকায় কম পাওয়া যায়। মসজিদকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য অতীত থেকে গম্বুজ তৈরি করা হয়। মহানবী (স.)- এর স্মৃতি বিজরিত মক্কা মদিনার মসজিদগুলোতেও গম্বুজগুলো বড় বড় দেখা যায়। ওপরে গম্বুজ থাকার কারণে এসি ছাড়াও প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও মসজিদের মধ্যে অনেক ঠাণ্ডা। তিন দিকে খুলে রাখা একদিকে দালান। শো-শো করে বাতাস আসতে থাকে। যেসব মুসল্লি জানালার কাছে দাঁড়ায় তারা বলেন হুজুর এসির মতো বাতাস আসছে।
খতিব বলেন, বর্তমান উপাচার্য মসজিদের মধ্যে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা এক কথায় বলা যায় আমার জানা মতে পদ্মার এ পাড়ে কয়েকটি মসজিদে এ সুবিধা রয়েছে। নারীরা জামাতে নামাজ পড়তে আসেন না। তবে নামাজের সময় হলে নারীরা মসজিদে এসে নামাজ পড়তে পারেন। তাদের জন্য আলাদা আসা যাওয়ার রাস্তা, ওজুখানা রয়েছে। এর ফলে অনেক ছাত্রী সহজেই নামাজের জায়গা পেয়ে যাচ্ছে। মসজিদে সরকারি নিয়ম অনুসারে খতম তারাবি হচ্ছে। মসজিদের সৌন্দর্য কোরবানির আগে দৃশ্যমান হবে আরও বেশি। সামনের অংশটা আরও সুন্দর করা হবে। কাজটি রোজার আগে শুরু করা যায়নি। রোজার পরে শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ঘরকে আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত। বাইরের অনেক মসজিদের যেমন নানা সমস্যা থাকে জুমার দিনে নামাজ পড়তে মুসল্লিদের বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়। আমাদের এখানের মসজিদটি এসব সমস্যা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রদের সঙ্গে বাইরের লোক এসে নামাজ পড়েন। দূর-দূরান্ত থেকে মোটরাসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে এ মসজিদে আসেন মুসল্লিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।