ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ধৈর্য, সহনশীলতা ও তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২০
ধৈর্য, সহনশীলতা ও তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য

রমজান মাস সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা মোত্তাকি (আল্লাহ ভীরু) হতে পার। (সূরা বাকারা : ১৮৩)।
 

মোত্তাকি সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি সংযমের জীবনযাপন করেন। লাগামহীন জীবনযাপন যার অভ্যাস নয়।

সংযমের জীবনে অভ্যস্ত করার জন্যই আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর এক মাসের সিয়াম সাধনা ফরজ করেছেন। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা সংযমের প্রশিক্ষণ নেয়। আর এটা সম্ভব হয় একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতার চর্চার মাধ্যমে।

ধৈর্য, সহনশীলতা, তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এসবের বাইরেও রোজার বড় একটা উদ্দেশ্য হলো, মানব জাতির আত্মশুদ্ধি। ইসলামে সাম্য-মৈত্রীর যে নান্দনিক দর্শন রয়েছে, সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মূলত এর বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।

রমজান যেমন বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর রহমত বা দয়াকে আকর্ষণ করে, ঠিক তেমনি এক বান্দার প্রতি অপর বান্দার, এক মানুষের প্রতি অপর মানুষের অন্তরে মমত্ব, সহানুভূতি, দয়া, ভালোবাসার উপলক্ষ সৃষ্টি করে।

সংযম সাধনার এ মাসে ক্ষুধা ও পিপাসার প্রকৃত অনুভূতির মাধ্যমে বিত্তবান-সচ্ছল রোজাদার মানুষ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের না খেয়ে থাকার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হন। এ উপলব্ধির আবেশেই বিত্তশালী ব্যক্তি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়ে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা বোধ করেন। প্রিয় রসুলে কারীম (সা.) রমজানকে শাহরুল মুওয়াসাত তথা সহমর্মিতা-সহানুভূতির মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আর এ সহমর্মিতার ক্ষেত্র শুধু আর্থিক সহযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সর্বোত্তম বিনম্র আচরণ, সদুপদেশ প্রদান, তার জন্য প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করায় সবই সহমর্মিতার মধ্যে গণ্য। এ বিষয়টির অপরিহার্যতা ফুটে উঠেছে নু’মান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত সুন্দর একটি হাদিসে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ একটি দেহের মতো।
যখন দেহের কোনো অঙ্গ ব্যথা পায়, তখন তার জন্য পুরো শরীরই অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়। ’ (সহিহ বোখারি : ৬০১১)

আমি নিজকে যতটুকু ভালোবাসি। নিজ দেহের যত্ন নিই যতটুকু, যতটুকু নিজের পরিচর্যা করি, অবহেলা করি না, তেমনি অন্যের প্রতিও অবহেলা দেখানো যাবে না। মানুষের প্রতি দয়াশীল হতে হবে, মন উজাড় করে মানুষকে ভালোবাসতে হবে।

পরিপূর্ণ সহানুভূতি আর হৃদ্যতার দ্বারা মানবসেবায় নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। রমজান মাসের সহমর্মিতার এই শুভ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আমরা যদি বছরব্যাপী অনুশীলন করি, তবেই মানব সমাজে আর দেখা যাবে না কোনো রকম অসাম্য ও শ্রেণিবৈষম্য।

দূর হয়ে যাবে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশান্তি-হানাহানি। তাই মাহে রমজানে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃবোধের শিক্ষা নিয়ে আমরা সামনের জীবন পরিচালনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
 

লেখক: সিনিয়র পেশ ইমাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

অপার মহিমার রমজান ও ইসলাম পাতায় লিখতে বা কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে মেইল করতে পারেন  [email protected] এই মেইলে। লেখা মানসম্মত হলে সেটা প্রকাশ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।