ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ফায়দা অর্জিত হয় রোজায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মে ২, ২০২০
দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ফায়দা অর্জিত হয় রোজায়

রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো রমজান। উম্মতে মুহাম্মদীর নৈতিক চরিত্র উন্নত করে সাহাবায়ে কিরামের মতো আদর্শ জীবন গঠন করার প্রশিক্ষণ এ মাসেই গ্রহণ করতে হয়।

রোজা মানুষকে প্রকৃত ধার্মিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। রোজাদারদের ইবাদত-বন্দেগির ভেতর দিয়ে সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার, অশোভন-অনাচার, দুরাচার-পাপাচার ও যাবতীয় অকল্যাণকর কাজকর্ম থেকে বিরত হয়ে সংযম সাধনার পথ ধরে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়।

আল্লাহতায়ালা যত সব ইবাদত তাঁর মুমিন বান্দাদের উপর ফরজ করেছেন, এর পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। এ হিসেবে মুমিনদের উপর রোজা ফরয করার পেছনেও রয়েছে আল্লাহর মহান উদ্দেশ্য। রমজানের এ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলানিউজে লিখেছেন ফেনী আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসার প্রধান ফকীহ মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিন পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব আজ।

তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত করা

রোজার প্রধান উদ্দেশ্য মু’মিনদের তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতির গুণে গুণান্বিত করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগন! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হও (সূরা আল বাকারা- ১৮৩)। এ আয়াতে রোজা ফরয করার উদ্দেশ্য বলা হয়েছে তাকওয়া অর্জন। তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ সতর্ক হওয়া, ভয়করা, সংযত হওয়া, বেঁচে থাকা, শক্তি সঞ্চয় করা, দায়িত্বশীল হওয়া, জবাবদিহিতার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কর্তব্য সম্পাদন করা। পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয় সতর্ক ও সচেতনতার  সঙ্গে পরকালে আল্লাহ তায়ালার নিকট জবাবদিহিতার মনোভাব নিয়ে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে সব কাজ সম্পাদন করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পরিপন্থি সব কাজ বর্জন করা।

তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য হলো ছয়টি। যেমন- ১. সত্যের সন্ধান ২. সত্য গ্রহণ ৩. সত্যের উপর অটল থাকা ৪. আল্লাহ ভীতি ৫. দায়িত্বানুভূতি ৬. জবাবদিহিতাভিত্তিক দায়িত্বশীলতার সাথে কর্তব্য সম্পাদন।

জৈবিক চাহিদা থেকে আত্মাকে মুক্ত রাখা

জৈবিক চাহিদা মানবের সবচেয়ে ক্ষতিকর জিনিস। এর থেকে আত্মাকে মুক্ত রাখা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, সিয়ামের বিশেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার পাশবিক বাসনা ও জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত রাখা, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করে চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার শৈলচূড়ায় আরোহন করে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। সিয়াম দরিদ্রপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক সৃষ্টি করে মানুষের শারীরিক ও আত্মিক শক্তির উন্নতি সাধন করে এবং পাশবিক চাহিদা যা মানুষের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে তা থেকে মুক্ত করে। অনুরূপ রোজা কলবের ইসলাহ ও চরিত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে (যাদুলমা’আদ, ১ম খন্ড পৃ. ১৫২)।

শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (র) হুজ্জাতুল্লা হিল বালিগাহ গ্রন্থে বলেছেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো মানুষ থেকে পশু স্বভাব দূর করা। পশু স্বভাব মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতিকর। তাই মহানবী (স.) বলেছেন- যে ব্যক্তি অর্থাভাবে বিবাহ করতে অক্ষম সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ, সিয়াম পালনের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বিবাহ করার কামনা দূর হবে (মিসকাত বিবাহ পর্ব, পৃ. ২৬৭)।

আত্মিক ও  দৈহিক ফায়দা

দৈহিক উৎকর্ষ সাধনে রোজার ভূমিকা অন্যতম। সিয়াম সাধনায় যেমন আত্মিক পরিচ্ছন্নতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে দৈহিক সুস্থতা। অধ্যক্ষ ডাক্তার বি সি গুপ্ত বলেছেন, ইসলাম সিয়াম সাধনার যে বৈজ্ঞানিক নির্দেশ দিয়েছে, তা যে মানুষের দৈহিক ও আত্মিক মঙ্গল সাধনে সক্ষম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ডাক্তার আর ক্যামবারড বলেছেন, সিয়াম পরিপক্ব শক্তির সহায়ক। ডক্টর এমারসন বলেন, যদি কারো স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপবাসের প্রয়োজন হয়, তবে সে যেন ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী রোজা পালন করে। অতএব এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সিয়াম সাধনায় অর্জিত হয় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উভয় প্রকার ফায়দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২০
এসএইচডি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।