ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

তওবা আমার কবুল কর, হে দয়াময়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
তওবা আমার কবুল কর, হে দয়াময় অপার মহিমার রমজান

রহমতের দিনগুলো তো ফুরিয়ে গেলই। এলো মাগফেরাতের দিন। মাগফিরাত বা ক্ষমা পেতে হলে তওবা করতে হবে। রমজানে তওবা করা জরুরি। তওবার শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। 

কোরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে-কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।  

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মমিনরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা কর, আন্তরিক তওবা।

আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কাজ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (সুরা আত তাহরিম: ৮)। ’ 

এখানে ‘আন্তরিক তওবা’ বলতে এমন তওবাকে বোঝানো হয়েছে, যা রিয়া ও নাম-যশ থেকে খাঁটি, কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও আজাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা।  

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, বিগত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার পাকাপোক্ত ইচ্ছা করাই ‘আন্তরিক তওবা’। হজরত কলবি (রহ.) বলেন, ‘আন্তরিক তওবা’ হলো মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গোনাহ থেকে দূরে রাখা।  

হজরত আলী (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, তওবা কী? তিনি বললেন, ছয়টি বিষয়ের একত্র সমাবেশ হলে তওবা হবে ১. যাবতীয় মন্দকর্মের জন্য অনুতাপ করা; ২. যেসব ফরজ ও ওয়াজিব কর্ম ভঙ্গ করা হয়েছে, সেগুলোর কাজা করা; ৩. কারও ধনসম্পদ ইত্যাদি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়া; ৪. কাউকে হাতে অথবা মুখে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেওয়া; ৫. ভবিষ্যতে সেই গোনাহের কাছে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প হওয়া এবং ৬. আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় নাফরমানি ছেড়ে এখন থেকেই আনুগত্য করা।  

হজরত আলী (রা.) বর্ণিত তওবার শর্তগুলো সবার কাছে স্বীকৃত। তবে কেউ সংক্ষেপে এবং কেউ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। রমজান মাসে, বিশেষ করে দ্বিতীয় দশক ও তৃতীয় দশকে তওবা করার এক সুবর্ণ সুযোগ বিরাজ করে।  

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর তখনই তওবা করে। এরাই হলো সেসব লোক, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারও মাথার ওপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা আন নিসা: ১৬-১৮)। ’ 

বান্দা কোনো পাপকর্ম করার পর যখন ‘আন্তরিক তওবা’ করে, তখন তার পাপকর্মগুলো এমনভাবে মিটে যায়, যেন সে কোনোদিন পাপকর্ম করেইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পাপকর্মের প্রকৃত তওবাকারীর অবস্থা এমন হয়, যেন তার কোনো পাপই নেই। বান্দার কাজই আল্লাহর কাছে তওবা করা। এ তওবা করতে হবে মৃত্যু আসার আগেই এবং সব ধরনের অন্যায় কাজ ত্যাগ করে।

মৃত্যু কখন আসবে আমরা কেউ জানি না। তাই যাবতীয় পাপের বোঝা নিয়ে এখনই তওবা করতে হবে। এমন সুযোগ হয়তো আর না-ও হতে পারে। নাজাতের এই দশকে মাবুদ যেন ক্ষমা করে দেন আমাদের।

লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।