ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ছোটবেলায় সেহরি খেলে আর রোজা ভাঙতাম না: ঢাবি ভিসি

সাখাওয়াত আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
ছোটবেলায় সেহরি খেলে আর রোজা ভাঙতাম না: ঢাবি ভিসি ছবি: নুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘ক্লাস ফোরে থাকতে আমি প্রথম রোজা রাখি। ছোট থাকায় বাবা-মা বলতেন তুমি সেহরি খাও ঠিক আছে, কিন্তু রোজা রাখতে হবে না।

কিন্তু আমি সেহরি খেলে আর রোজা ভাঙতাম না। না খেয়ে থাকায় কষ্ট হলেও নিজের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করতাম। এরপর যখন একটু বড় হলাম, ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ার সময় থেকে নিয়মিত রোজা রাখি, কখনও রোজা ভাঙিনি। তখন বাবা-মা সঙ্গে করেই সেহরি খাওয়াতেন ইফতারও করতাম এক সঙ্গে। ’

 প্রথম রোজা রাখার স্মৃতি এভাবেই তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

সাড়ে সাত বছর ধরে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ছোট বেলার প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি ফিরে যান তার সোনালী শৈশবে।

শিশু রোজাদার আরেফিন সিদ্দিকের কাছে সবচেয়ে আনন্দের ছিল ইফতারি করা। ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল থাকতো ইফতারের জন্য। সেসব খাদ্যসামগ্রী সামনে নিয়ে বসে থাকা তার কাছে ছিল অন্য রকম আনন্দের। বলেন, ‘বিকেল হলেই মনে হতো কখন ইফতারির সাইরেন বাজবে, মাগরিবের আজান পড়বে! হয়তো নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা খানেক আগেই বসে থাকতাম ইফতার সামনে নিয়ে। ’

সরকারি চাকুরে বাবার ১১ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ইফতারের সময় পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করতেন। ‘রোজার দিনে পরিবারের যে যেখানেই থাকতো, ইফতারের আগে সবাই বাড়ি ফিরতো। এরপর সবাই মিলে মজা করে ইফতার করতাম। ’ এখন অবশ্য তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করাটা খুব মিস করেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আর সেভাবে সুযোগ হয় না- পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করার।
 
ঢাবি ভিসি বলেন, ‘আমাদের সময় এখনকার মতো ইফতার পার্টি হত না। পরিবারের সবাই মিলে ইফতার করাই ছিল রীতি। ’ তার ভাষায়, ‘আমি মনে করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। আগে পারিবারিকভাবে ইফতারের আয়োজন থাকলেও বর্তমানে অনেকে সামাজিকভাবে ‘ইফতার পার্টি’ করে থাকেন। এতে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয় বলে আমার বিশ্বাস। ’

শৈশবে আরেফিন সিদ্দিকের কাছে সবচেয়ে বড় বিনোদন ছিল ঈদ। ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদ ঘনিয়ে আসলে আমরা রীতিমত কাউন্ট-ডাউন (ক্ষণ গণনা) শুরু করে দিতাম। ঈদের আর দশ দিন বাকী, আর নয় দিন বাকী…. এভাবে আমরা ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবের মিলে অপেক্ষা করতাম ঈদের দিনের। এরপর বাবার কিনে দেওয়া নতুন পোশাকটি পরে বের হয়ে যেতাম মজা করতে। ’

কিশোর আরেফিন সিদ্দিকের কাছে ইফতারের সময় এবং ঈদ যতটা আনন্দের বিষয় ছিল সেহরির সময়টা ছিল ততটাই কষ্টকর। কারণ তার কৈশরে কাটানো অধিবাংশ রোজা হত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এ বিষয়ে তিনি বলে, ‘আমি যখন রোজা রাখা শুরু করি তখন ছিল প্রচন্ড শীত। তাই শেষ রাতে উঠে সেহরি খাওয়াটা বেশ কষ্টকর ছিল, তবুও রোজা ছাড়িনি। ’

এখন আর ‘কষ্ট করে’ শেষ রাতের মধুর ঘুম ভেঙে জাগতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত দিতে দিতেই হয়ে যায় সেহরির সময়। তাই তিনি একবারে সেহরি খেয়েই ঘুমোতে যান বলে জানালেন।

তার কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আর পাল্টা প্রশ্নের দরকার হয় না। কারণ যখন তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করছি তখন ঘড়ির কাটায় রাত একটা ছাড়িয়ে। অতিথি কক্ষে সাক্ষাতপ্রার্থী দেখা গেলো আরও জনা দশেককে। আর অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের সাক্ষাত করতে গিয়ে সাক্ষাত না পেয়ে একজন লোকও ফিরে এসেছেন এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কখনও শোনা যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এসএ/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।