ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ছোটবেলায় বাবার পেছনে পেছনে মসজিদে যেতাম: আব্দুল জলিল মন্ডল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
ছোটবেলায় বাবার পেছনে পেছনে মসজিদে যেতাম: আব্দুল জলিল মন্ডল ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জীবনের প্রথম রোজা নিয়ে রয়েছে একেকজনের একেক রকম স্মৃতি। আজ সমাজের যারা প্রতিষ্ঠিত, কিংবা উচ্চপদে আসীন তাদের শৈশব, কৈশোর ও বাল্যকালের বিশেষ করে প্রথম রোজার স্মৃতি জানার চেষ্টা করেছে বাংলানিউজ

বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নুরুল আমিন ও সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল মুখোমুখি হয়েছিলেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল জলিল মন্ডল এর। পাবনার কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল জলিল মন্ডল। অংশগ্রহণ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। বর্তমানে তিনি র‌্যাবের এডিজি প্রশাসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রোজার স্মৃতি নিয়ে আলাপচারিতায় উঠে আসা স্মৃতিকথার চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখতাম। মনে পড়ে যখন প্রথম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতাম তখনই রোজা রাখা শুরু করি। বয়স কম ছিলো বলে মা বলতেন, ‘তোর রোজা রাখার বয়স হয়নি। তবে বাবা কখনও না করতেন না। ছোটবেলায় সেহরির সময় সবার সঙ্গে সেহরি খেতাম। বাবা বলতেন সেহরি খাচ্ছ খাও, তবে দুপুরে ভাত খেয়ে নিও। এতে তোমার অর্ধেক রোজা হয়ে যাবে। এভাবেই পরপর দু’দিন এক রোজা হয়েছে বলে বাবা আমাকে উৎসাহ দিতেন।

জলিল মন্ডল বলেন, কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। বাবা লেখাপড়া জানা কৃষক ছিলেন। তার কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান থাকার কারণে মসজিদে যখন ইমাম আসতেন না তখন আমার বাবাই ইমামতি করতেন।

যে কারণে আমার পরিবারকে ধার্মিক পরিবার বলা যেতে পারে। বাবা নামাজে গেলে, পিছনে পিছনে আমিও মসজিদে যেতাম। বাবাকে অনুসরণ করে নামাজ পড়তাম, জানান র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

জনাব মন্ডল বলেন, যখন সূরা কেরাত কিছুই জানি না, তখন বাবার পিছনে গিয়ে নামাজ পড়তাম। বাবাকে অনুসরণ করে রুকু সেজদা করতাম। অনেকে হাসাহাসি করলেও বাবা নিষেধ করতেন না। বাবা মনে করতেন ছেলে বড় হয়ে ধর্মের পথে থাকবে।

জীবনের শেষ দিকে এসে আমি ধর্মের পথে আছি কি না বলতে পারবো না। তবে চেষ্টা করি নামাজ যেন কাজা না হয়। রোজাটা যেন সঠিক হয়। চাল-চলন, আচার – আচরণ যেন ইসলামিক হয়।

ছোটবেলা থেকেই ধর্মচর্চার মধ্যে থাকা আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন, দুনিয়াটা খুব স্বল্প সময়ের। মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে এসেছেন। মানুষকে আল্লাহতায়ালা এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। আল্লাহতায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট কিছু কাজ দিয়ে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, দুনিয়াটা হচ্ছে মানুষের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট। আমাদের ৫০-৬০ বছরে জীবন হচ্ছে ট্রানজিট পিরিয়ড। এসময়ের মধ্যে আল্লাহর দেওয়া নির্দিষ্ট কাজ আমরা করতে পারি; তাহলে সফল। আর যদি না পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ।

ধার্মিক পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা জলিল মন্ডল বলেন, মানুষ হচ্ছে মহাজাগতিক মুসাফির (কসমিক ট্রাভেলার)। দুনিয়াতে মানুষ মুসাফির হিসেবে জীবনযাপন করছে। এক সময় আবার চলে যেতে হবে।

ছোটবেলার ইফতারি ও সেহরি খাবার নিয়ে জলিল মন্ডল বলেন, এখন সেহরি ও ইফতারে বিভিন্ন পদের যে খাবারের প্রচলন চালু হয়েছে। আমাদের ছোটবেলায় এসব ছিল না।

বৈশাখে পান্তা ইলিশকে প্রমোট করা হয়েছে ব্যবসা হিসেবে। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ নিয়ে যেমন ব্যবসা হচ্ছে, তেমনি রোজাও বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে মানুষ ব্যবসা করছে। পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রচুর পরিমাণে খাবার অপচয় হচ্ছে। এতে করে একদিকে রোজার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ, যোগ করেন তিনি।

জলিল মন্ডল বলেন, ছোটবেলায় জমিতে আবাদ করা সবজি ও অন্যান্য খাবার খেয়ে রোজা রাখতাম। আমরা যত আধুনিকতার দিকে যাচ্ছি, ততই মসলাযুক্ত খাবারে আসক্ত হচ্ছি। যা নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে।

ছোটবেলা আর বর্তমানের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে মানুষের আর্থিক সংকট ছিলো। এই আর্থিক সংকটের কারণে মানুষ পরিমিত খেত। পরিমিত খেয়েও মানুষ সুস্থ্য থাকতো।

বর্তমানে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষ খাবারের পিছনে প্রচুর টাকা খরচ করছে। আর এসব আধুনিক চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে মানুষ সুস্থ্ তো থাকছেই না উল্টো নানা রোগে ভুগছে।

তার দৃষ্টিতে, একজন মানুষ রমজানে যদি সঠিকভাবে রোজা পালন করে, ইসলামের বিধান মেনে চলতে পারে তাহলে সারা বছর সে অসুস্থ্ হবে না।

সূরা বালাদের ৪ নম্বর আয়াতে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহ মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যদি কষ্ট না করে শরীরের ঘাম না ঝরায় তাহলে সে অসুস্থ্ হয়ে পড়বে।

রমজানে সত্যিকারের সিয়াম সাধন যদি আমরা করতে পারি। সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, পরিবারের জন্য ভালো, পুরো জাতির জন্য মঙ্গলকর হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
এনএ/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।