ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজকের তারাবিতে পাঠ করা হবে সর্বোত্তম দোয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
আজকের তারাবিতে পাঠ করা হবে সর্বোত্তম দোয়া

কাল থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসে অন্যতম আমল হলো তারাবির নামাজ ও তারাবিতে কোরআন খতম।

আজ এশার ফরজ নামাজের পর বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা হবে। তারাবির নামাজে পূর্ণ এক খতম কোরআন শরিফ তেলাওয়াত শোনার লক্ষ্যে অনেকেই খতমে তারাবিতে অংশ নিবেন।

বাংলানিউজের রমজানের বিশেষ আয়োজনে ‘কোরআনের তাফসির’ বিভাগে প্রতিদিন খতমে তারাবিতে পাঠকৃত কোরআনের অংশসমূহের উল্লেখযোগ্য বিধান, সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও শানে নুজুল উল্লেখ করা হবে।


আজ প্রথম তারাবি। আমাদের দেশের সাধারণ রেওয়াজ অনুযায়ী আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের প্রথম দেড় পারা তোলাওয়াত করা হবে।

সূরা ফাতেহা

কোরআনের প্রথম সূরা ফাতেহা শুধু তারাবি নয় বরং সব নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই তেলাওয়াত করা হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৭টি, এটা মক্কি সূরা।

সূরা ফাতেহার সারকথা হলো, আল্লাহর কাছে সরল পথ লাভের আকুল আবেদন। এ সূরার প্রথম অংশে আল্লাহর ৩টি পরিচয় দেয়া হয়েছে। তিনি সবার প্রতিপালক। তিনি অতি দয়ালু। তিনি শেষ বিচার দিবসের মালিক। অতপর মাঝের অংশে তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা তার দাস এবং আমরা তার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। শেষের অংশে সরল পথের আবেদন করা হয়েছে। এখানে সরল পথকে অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক রাখা হয়নি। বরং সরল পথকে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন করা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত বান্দারা অতীতে যে পথে চলেছেন তাই ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সরল পথ। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অতীতে যে পথে চলেছে, তা আমাদের জন্য সরল পথ নয়। এটাই এখানে বলা হয়েছে।

সূরা বাকারা

কোরআনের দ্বিতীয় সূরার নাম সূরা আল বাকারা। এটা মাদানি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬টি। তবে আজ তিলাওয়াত হবে ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত।

১নং আয়াতে কোরআন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে দু’টি ধারণা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে এ কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ। আর এ গ্রন্থে যে পথের সন্ধান দেয়া আছে তাই সরল পথ। এ গ্রন্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু মানুষের সরল ও সুন্দর জীবনের উপযোগী নয়।

২-৫নং আয়াতে তাদের ৫টি বৈশিষ্ট্য ও গুণ উল্লেখ করা হয়েছে যারা মুত্তাকি, সরল পথপ্রাপ্ত এবং যাদের জীবনে সফল। তারা ইন্দ্রিয়ানুভূতির অগোচর বিষয়কে আল্লাহর কথার ভিত্তিতে বিশ্বাস করে, যত্নের সঙ্গে সুন্দরভাবে নিয়মিত নামাজ পড়ে, দান করে, মুহাম্মদ (সা.) এবং তার পূবর্তীদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করে, পরকালকে বিশ্বাস করে।

৬-২০নং আয়াতে কাফের ও মুনাফেকদের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। কাফের বলা হয় তাদের, যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে ইসলাম মানে না। আর মুনাফেক বলা হয় তাদের, যারা প্রকাশ্যে ইসলামের অনুসরণ করে কিন্তু গোপনে ইসলাম অস্বীকার করে। সমমনাদের কাছে ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে ও মুসলিমদের নিয়ে ঠাট্টা করে। তাদের জীবনচার সম্পর্কে দু’টি উদাহরণ দেয়া হয়েছে এখানে।

প্রসঙ্গক্রমে ১৩নং আয়াতে সাহাবাদের ঈমানকে সঠিক ঈমানের মাপকাঠি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শুধু এতটুকুই নয়। বরং সাহাবাদের মতো হওয়ারও আদেশ করা হয়েছে। তাই জীবনে সফলতা ও পরকালে মুক্তি পেতে হলে সাহাবাদের অনুসরণ করতে হবে- এটা বলা হয়েছে।

২১-২৯নং আয়াতে আল্লাহর ইবাদাত কেন করতে হবে, তার যৌক্তিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। ঈমান ও নেক আমলের বিনিময়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। কোরআন অস্বীকারের বিপরীতে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যারা সন্দেহ করে, কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ, নাকি মুহাম্মদের রচনা ২৩নং আয়াতে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের যদি সন্দেহ থাকে তবে কোরআনের অনুরূপ একটি সূরা তোমরাও রচনা কর। এ চ্যালেঞ্জ আজও বলবৎ আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এ চ্যালেঞ্জ দ্বারাই সব সময় প্রমাণিত হবে কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ, কোনো মানুষের রচনা নয়।

৩০-৩৯নং আয়াতে আলোচনা হয়েছে কিভাবে এ পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়।

৪০-৪৬নং আয়াতে তাওরাতের অনুসারী ইহুদি আলেমদের বিশেষভাবে ৮টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোরআনের ওপর ঈমান আনা, দুনিয়া উপার্জনের স্বার্থে তাওরাতের বক্তব্য বিকৃত না করা, তাওরাতের বক্তব্যের সঙ্গে নিজের মনগড়া বক্তব্যকে মিশ্রিত না করা, জেনে-শোনে সত্য গোপন না করা, জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা, জাকাত আদায় করা, সাধারণ মানুষকে যেসব ধর্মোপদেশ দেয়া হয় নিজেদেরও সেগুলো পালন করা এবং বিপদে পরলে ধৈর্যধারণ করা ও নামাজ পড়া।

৪৭নং আয়াত থেকে প্রথম পারার শেষ পর্যন্ত বনি ইসরাঈলের ওপর আল্লাহর কৃত অনুগ্রহসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
অত্যাচারী শাসক ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নদীতে নিমজ্জিত করা। আসমানী খাদ্য মান্না ও সালওয়া দান করা। পাথর থেকে পানির প্রস্রবণ বের করে পিপাসা নিবারণের ব্যবস্থা করা। জবাইকৃত গাভীর গোশতের ছোঁয়া পেয়ে নিহত ব্যক্তি জীবিত হয়ে তার খুনীকে চিহ্নিত করা।

৭৫-৮২নং আয়াতে ইহুদি আলেমদের ৩টি মন্দ বৈশিষ্ট্যের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো- তারা দুনিয়ার স্বার্থে জেনে-বুঝে আল্লাহর বিধানকে বিকৃত করত, তাওরাতের যে সব বাক্যে শেষ নবীকে সত্যায়ন আলামত ছিল- তারা সে বাক্যগুলো জনসাধারণ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করত এবং তারা নিজেদের দুনিয়ার স্বার্থ রক্ষার্থে যা প্রয়োজন হতো তা লিখে আল্লাহর কালামের নামে প্রচার করত।

৮৫নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, যারা আল্লাহর গ্রন্থের কিছু মানবে আর কিছু মানবে না তারা দুনিয়াতেও অপদস্থ হবে আখেরাতেও অপদস্থ হবে। পরকালের কাঠিন শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

১০২নং আয়াতে হারুত-মারুতের ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। জাদু ও মুজেযার পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহতায়ালা বাবেল শহরে তাদের প্রেরণ করেছিলেন।

১১৪নং আয়াতে তাদের সমালোচনা করা হয়েছে যারা মসজিদে ইবাদত করতে বাঁধা দেয়। তারা সবচেয়ে বড় জালেম বলে আখ্যায়িত তরে বলা হয়েছে, দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

১২০নং আয়াতে আল্লাহতাআলা তার নবীকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আপনি যদি কোরআনের বিধান এড়িয়ে যেয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসরণ করেন, তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। এ আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হলো- কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর কোনো বিধানকে অস্বীকার করা যাবে না।
 
১২৪-১৩১ নং আয়াতে আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.) ও পবিত্র কাবা শরিফ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে কাবা নির্মাণের ইতিহাস।

১৪৪নং আয়াতে নামাজের কেবলা পরিবর্তনের আদেশ করা হয়। কাবাকে মুসলমানদের জন্য নতুন কেবলা নির্ধারণ করা হয়। ১৫০নং আয়াত পর্যন্ত এ বিধানের বিভিন্ন রহস্য ও উপকারীতা আলোচিত হয়েছে।

১৫১নং আয়াতে নবীর প্রধান চারটি দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। ১. মানুষকে আল্লাহর কালাম শোনানো, ২. মানুষের অন্তর শুদ্ধ করা, ৩. মানুষকে কোরআনের বিধান ও ৪. সুন্নাহ শিখানো। বলা চলে প্রত্যেক নবীদের এটাই ছিল দায়িত্ব। যা বর্তমানে আলেমদের ওপর অর্পিত হয়েছে।

১৫৪নং আয়াতে তাদের বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিহত হবে।

১৫৫-১৫৭নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা শত্রুর ভয় দিয়ে, খাদ্যের অভাব দিয়ে, জান-মাল ও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে ঈমানদারদের ঈমান পরীক্ষা করবেন।

১৭৩নং আয়াতে আমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, শোকরের গোশত এবং ওই প্রাণীর গোশত যাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য জবাই করা হয়েছে।

১৭৪নং আয়াতে বলা হয়েছে, যে আলেম দুনিয়া উপার্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিধান গোপন করবে, সে যেন আগুন দ্বারা নিজের পেট ভর্তি করছে। কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। তাকে পরিচ্ছন্ন করবেন না। তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অপেক্ষা করছে, বলে হুশিয়াঁর করা হয়েছে এই আয়াতে।

১৭৭নং আয়াতে অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নেক আমলের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে।

১৭৮ ও ১৭৯নং আয়াতে কোনো মুমিনকে (বা কর দিয়ে বসবাসরত অমুসলিমকে) ইচ্ছাকৃত হত্যা করার শাস্তি হিসেবে আল্লাহ কিসাসের বিধান দিয়েছেন এবং কিসাস মওকুফ করার একমাত্র ক্ষমতা দিয়েছেন নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের। কিসাসের ব্যাখ্যা হলো, হত্যাকারীকে জনসন্মুখে ওইভাবে হত্যা করা হবে; যেভাবে সে ভিকটিমকে হত্যা করেছিল।

১৮৩-১৮৭নং আয়াত পর্যন্ত রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। অসুস্থ ও মুসাফিরকে রমজান মাসে রোজা না রেখে পরবর্তীতে রাখার অবকাশ দেয়া হয়েছে। রোজা রাখার সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে প্রতিদিন সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আর সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত স্ত্রীসঙ্গম ও পানাহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

১৮৮নং আয়াতে অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করাকে এবং এ উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে মিথ্যা মামলা দায়ের করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

১৮৯নং আয়াতে বলা হয়েছে চাঁদ বড় ও ছোট হওয়ার কারণে মানুষ খুব সহজেই মাস ও তারিখের হিসাব রাখতে পারে। চাঁদের দ্বারা মাসের তারিখ গণনা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য সবার জন্য সহজ।

১৯০-১৯৫নং আয়াতে জিহাদের বিধান বর্ণিত হয়েছে। জিহাদের জন্য সম্পদ ব্যয় করার আদেশ করা হয়েছে। ১৯৩নং আয়াতে বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর প্রেরিত জীবনাদর্শ আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী না হবে ততদিন পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে।

১৯৬-২০৩নং আয়াতে হজের বিভিন্ন বিধান আলোচনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তাদের নিন্দা করা হয়েছে যারা কোনো ইবাদত করার পর শুধু দুনিয়ার সুখ-শান্তির জন্য মোনাজাত করে, আখেরাতের মুক্তি ও কামিয়াবির জন্য কোনো মোনাজাত করে না। বিপরীতে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে যারা আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সুখ-শান্তির জন্য প্রার্থনা করে আবার পরকালের সুখ-শান্তির জন্যও প্রার্থনা করে। ২০১ নং আয়াতে সর্বোত্তম দোয়া শিখানো হয়েছে। দোয়াটি হলো, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার। ’ অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘন্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।