ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সচল-অচলে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
সচল-অচলে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র

ফেনী: নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে ফেনীর সোনাগাজীতে নির্মাণ করা দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কেন্দ্রটি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যতটা আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু নির্মাণের ১৪ বছররেও অর্জিত হয়নি তার ছিটেফোঁটা।

সচল আর অচলে ঘুরপাক খেয়ে ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। কথা ছিল প্রতি সেকেন্ডে দশমিক ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কখনই সে লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে যেতে পারেনি তারা।

ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আখতার উদ্দিন বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। কোনো দিন ২৫০, কোনো দিন ৩০০ আবার কোনো দিন ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়। এর চেয়ে খুব একটা বেশি উৎপাদন হয় না।

বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটির পরিচালনার নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যান এশিয়া পওয়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা কেফায়েত উল্লাহ জানান, আগস্ট মাসে সাকুল্যে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে এ কেন্দ্রটি থেকে।

তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো: আজিজুর রহমান তাকে বলেছেন কেন্দ্র বন্ধ রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করতে। পিডিবির সাথে তার প্রতিষ্ঠানের চুক্তি নাকি নতুন করে নবায়ন হয়নি। অবশ্য এ ব্যাপারে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি ফজলুর রহমানকে। তার ব্যবহৃত ফোন সংযোগটি বন্ধ রয়েছে।

অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন পরিচালক (রিনিউঅ্যাবল এনার্জি) জহির আহমেদ খান। তিনি বলছেন কেন্দ্রটি সচল আছে। প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস কেন্দ্রটির ম্যান্টেইনেন্স এন্ড অপারেশনের দায়িত্বে আছে।

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের তথ্যমতে পিডিবি কর্তৃক ২০০২ সালে বায়ুৎবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চালু হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উক্ত কাজটি সম্পন্ন হয় এবং ২০০৪ সালে তা উদ্বোধন হয়। ২৪ টি ফ্যান তৈরির হওয়ার কথা থাকলে ৪টি ফ্যান  তৈরি করা হয়েছে। মেরামত কাজসহ বাকি ফ্যান তৈরির সম্ভাবনা আছে। এটি প্রতিদিন ০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম হবে। ভারতের নেবুলাই টেকনো সলিউশান কোম্পানি এ প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করেন। কিন্তু ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে বাকি ২০টি ফ্যানও তৈরি হয়নি। সম্ভব হয়নি কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনও। এ ১৪ বছরের মধ্যে প্রায় ১২ বছরের মতো কেন্দ্রটি ছিল অচল।
.
এখানে ৫০ মিটার উঁচু টাওয়ার, জেনারেটর, কন্ট্রোল প্যানেল, সাব- স্টেশন, ব্লেড, ম্যাচিং গিয়ার এলিমেন্ট স্থাপন করা হয় এবং প্রায় ৫০ মিটার উঁচু টাওয়ারের মাথায় দেড় টন ওজনের পাখা লাগানো হয়। মুহুরী সেচ প্রকল্প থেকে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানোর জন্য সামান্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। এ কারণে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে একটি ১১/০.৪ কেভি লাইনের সংযোগ টানা হয়। বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য টু-ওয়ে মিটার স্থাপন করা হয়। বাতাসের বেগের সঙ্গে বিশাল আকারের পাখা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার কথা।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১২ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালে ফের চালু হয়েছিল। নির্মাণের পর কারিগরি ক্রটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দীর্ঘ সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আশা করা হয়েছিল ৪টি টাওয়ার থেকে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। যার প্রতি ইউনিট মূল্য হবে মাত্র ২ টাকা।

২০০৫ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন একটি সংসদীয় কমিটি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি আবদুল আলিমের নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট দলের পরিদর্শনের পর ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হয় এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুৎ সমিতির কাছে সরবরাহ করা হয় এবং সমিতি ওই বিদ্যুতের বিল পরিশোধও করে।
.কিছুদিন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু থাকার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফের চালু করার চেষ্টা করলেও সাথে সাথে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিত। প্রকল্পটিতে কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় একটি টাওয়ারের ক্যাপাসিটর বক্স থেকে রাতের আঁধারে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করলেও চুরি হওয়া মূল্যবান মালামালের কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

অভিযোগ রয়েছে, চীনের নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার আর ভারতের অদক্ষ ঠিকাদারের কারণে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি সাফল্যের মুখ দেখলেও তা দীর্ঘ হয়ে উঠেনি।

এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে ফের পিডিবি কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি কারিগরি ত্রুটিমুক্ত করে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ২০১৪ সালের দিকে ভারতের প্যান এশিয়া নামে অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৮ সাল থেকে এটি আবার উৎপাদনে আসে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি মোঃ মহি উদ্দিন আহমেদ বলেন, বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন করতে পারছে না। এটি যতটুকু ভূমিকা রাখার কথা তা হয়ে উঠছে না।

ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, সোনাগাজীর বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের একটি প্রকল্প ছিল। এটির সফল বাস্তবায়ন শেষে ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিকট হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রটি ফেনী পিডিবি‘র নিকট হস্তান্তর করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০
এসএইচডি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।