ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কয়লা নীতি: রিভিউ কমিটির কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১১
কয়লা নীতি: রিভিউ কমিটির কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে

ঢাকা: ঢিমেতালে চলছে কয়লা নীতি রিভিউ কমিটির কার্যক্রম। ৪মাস সময় বেঁধে দেওয়া এই কমিটি  পৌনে ৩ মাসে সভা করেছে মাত্র একটি।

সে সভাতেও সকল সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। তবে কমিটির সদস্য এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক মোল্লা আমজাদ দাবি করেছেন, মুল কমিটির একটি সভা হলেও সাবজেক্ট কমিটির একাধিক বৈঠক হয়েছে। যা আমরা আগামী মুল কমিটির সভায় প্রকাশ করব।

জানুয়ারি মাসে মুল কমিটি দ্বিতীয় সভায় বসবে বলেও জানান তিনি।

কমিটির সদস্য বুয়েট অধ্যাপক ইজাজ আহমেদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমাকে কমিটির সদস্য করা হলেও আমি এর সঙ্গে নেই। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আমি থাকলে সমালোচনা হবে।

‘কি কারণে সমালোচনা হবে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। ’

সরকার কয়লা নীতি চুড়ান্ত করতে আন্তরিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা যদি আন্তরিক হতো তাহলে কমিটি কমিটি খেলা খেলতনা।

দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থেই কয়লা নীতি চুড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন দেশের মাটির নিচে কয়লা রেখে আমদানি করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কয়লা নীতি চুড়ান্ত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রিভিউ কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ি খনিতে পাইলট প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ দেওয়ার চিন্তা করছে। তারা মার্চের মধ্যেই সুপারিশ জমা দিতে পারবেন বলে আশাবাদী।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সরকার কমিটিকে দেশের প্রতিটি কয়লা ক্ষেত্রের ভুগর্ভস্থ পানির স্তর, ভূ-তত্ত্ব গঠন ও ভূ-রসায়ন বিষয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন ও কয়লা তুলতে জনগণের কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তারও একটি তুলনামূলক চিত্র প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলেছে।

‘সে মোতাবেক ৪টি বিষয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছে সূত্রটি। ’

রিভিউ কমিটি প্রধান পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। যথা সময়ে রির্পোট দেওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেখি কতদূর যাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, যেসব কয়লা খনি নিয়ে বিতর্ক নেই সেসব খনি কয়লা নীতির জন্য আটকে না রাখাই ভালো।

কয়লা উত্তোলন শুরু করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সব খনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলন সম্ভব নয়, সে গুলোর কাজতো হতেই পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্প নেওয়ার জন্য সুপারিশ করার কথা আলোচনায় এসেছে। তবে তা চুড়ান্ত হয়নি।

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, পানি উত্তোলন করলে কি পরিমাণ পরিবেশের ক্ষতি হবে এবং পানি রিইনজেক করা যাবে কিনা তা আমরা কেউ জানিনা। এখন যারাই যা বলছেন তা অনুমাণ নির্ভর। সে কারণে পাইলট প্রকল্প নেওয়া হলে বিষয়টি বিতর্কের উর্ধ্বে নেওয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে কয়লার জন্য পৃথক নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ২০০৫ সালে আইআইএফসি নামের দেশিয় একটি  প্রতিষ্ঠানকে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আইআইএফসি খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করে জমা দিলে অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে উপস্থাপন  করা হয়। প্রধানমন্ত্রী খসড়া অনুমোদন না দিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে রিভিউ (সংশোধন সংযোজন) করার দায়িত্ব দেন।

পরে প্রফেসর নুরুল ইসলাম খসড়া কয়লানীতির অনেকগুলো বিষয়ে পরিবর্তনের সুপারিশ করে রিপোর্ট জমা দেন। এরই মধ্যে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা আসার ছয় মাসের মাথায় নতুন করে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়। বুয়েটের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

পাটোয়ারী কমিটি নামে পরিচিত এই কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষ পর্যন্ত সেটিকে চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়।

মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পাটোয়ারী কমিটির খসড়া কয়লানীতি অনুমোদন না করে জ্বালানি সচিবকে প্রধান করে রিভিউ করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি পাটোয়ারী কমিটির খসড়া যাচাই বাছাই শেষে, খসড়ার নীতি ও বাস্তবায়ন অংশকে দুই ভাগে ভাগ করে কিছু সংশোধনীসহ শুধুমাত্র নীতি অংশটি অনুমোদনের সুপারিশসহ গত বছরের অক্টোবর মাসে জমা দেয়।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ মোতাবেক চূড়ান্ত না করে চলতি বছরের মার্চ মাসে আবারও উচ্চ পর্যায়ের রিভিউ কমিটি গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সে মোতাবেক সেপ্টেম্বর মাসে গঠন করা হয় রিভিউ কমিটি। কমিটিকে ৪ মাসের মধ্যেই রির্পোট দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

কমিটি ১২ অক্টোবর তারিখে প্রথম সভায় বসে। সে হিসেবে তাদের নির্ধারিত সময় শেষ হবে ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ।


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।