ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুরের পর আরো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
রূপপুরের পর আরো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার পর আরো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই জায়গা নির্বাচনের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

তিনি বলেন, রূপপুরের পর আরো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে জায়গায় নির্বাচন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করছি।

তবে আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার পর অন্যগুলো নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

টানা তৃতীয়বার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইয়াফেস ওসমান বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।  

বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব দেশের বৃহৎত্তম প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা। রাশিয়ার প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও সার্বিক সহযোগিতায় দেশটির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট’ রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুই ইউনিটের পারমাণবিক বিদ্যূৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার যে চ্যালেঞ্জ সেটা কাটিয়ে নির্মাণ কাজ সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির প্রসারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়া এবং দুর্নীতি পরিহার ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম পরিচালনার দৃঢ়তার কথা সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যূৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজে আমরা পিছিয়ে নেই, এগিয়েই আছি। কেবল মাত্র টেকনিক্যাল বিষয়ই নয়, এ তো বহুমুখী কাজ—নদী শাসন থেকে শুরু করে মাটি বর্ধন, মাটির ধারণশক্তি তৈরি করা। সেখানে একটি মিনি পোর্ট (নদীবন্দর) তৈরি করতে হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় নিরাপত্তার পার্ট হিসেবে দেখতে হচ্ছে। এ কারণে সেখানে সেনবাহিনীর রোল প্লে করতে হবে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে। আমরা আশা করছি, নির্বারিত সময়েই কাজ শেষ করতে পারবো। ভবিষ্যতে যাতে সেফ্টির ক্ষেত্রে কোনো সমসা না হয় সেজন্য কোরক্যাচার বসানো হয়েছে। এটা বাড়তি নিরাপত্তা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটা রাশিয়ার উদ্ভাবিত অত্যাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি নির্বারিত সময়েই কাজ শেষ করতে পারবো। ভবিষ্যতে যাতে সেফ্টির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য কোরক্যাচার বসানো হয়েছে। এটা বাড়তি নিরাপত্তা। এর জন্য কয়েক মিনিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। এটা করা হয়েছে যাতে মানুষের কোনো সমস্যা না হয়। এখানে প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষ কাজ করছেন এর মধ্যে ১৫শ’ বিদেশি, বাকিরা আমাদের দেশের।  

ইয়াফেস ওসমান আরো বলেন, রূপপুর প্রকল্পের কাজে প্রতিদিন ৫ হাজার টন সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে লোকবলের পাশাপাশি অন্য সেক্টরেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখানে আবাসনের জন্য ২১টি ২০তলা ভবন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০টির কাজ শেষ হয়েছে। নানা ধরনের কাজ আমাদের করতে হচ্ছে। আসলে কেবল মাত্র বিদ্যুৎ না। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটা কালেকটিভ চেঞ্জ আসবে, দেশের সম্মান অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের যে ইশতেহার দিয়েছেন, সে অনুযায়ী প্রযুক্তির প্রসারে আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা আমরা নেবো। এর জন্য আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি তৈরি করবো। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা তো একটা চ্যালেঞ্জই। চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধও তো চ্যালেঞ্জ ছিলো। জীবনটাকেই আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরি।

ভবিষ্যতে আরও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মোট বিদ্যুতের ১০ ভাগ আসবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। এই পরিকল্পনা শেখ হাসিনার সরকারের রয়েছে। তবে রূপপুর প্রকল্পের কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার পর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের আরো প্রকল্পে যেতে চাই। আসলে আমরা রূপপুরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে জায়গা দেখার কাজ চলছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চর এলাকায় যেখানে লোকবসতি কম সেখানে আমরা জায়গা দেখছি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি ও স্বচ্ছতার কথা তুলে ধরে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, গত ১০ বছরে আমরা (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) বার্ষিক উন্নয়নে ৯৯ ভাগের বেশি সফল হয়ে রেকর্ড করেছি। বার্ষিক উন্নয়ন টার্গেটে আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখবো। আমাদের এই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি আমরা প্রশ্রয় দেইনি, দেবো না। যেকোনো মূল্যে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখবো। এভাবেই চালিয়ে এসেছি, ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবো।  

নিজের মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান তার কবিতার কয়েকটি লাইনও তুলে ধরেন— 
এখন থেকে দুর্নীতি-ঘুষ সিরিয়াস অফেন্স, 
কোনো রকম ছাড় নাইকো, জিরো টলারেন্স।  
লজিকখানা সহজ বড়, বাড়তি বেতন পাওয়া, 
চলার মতো বেতন পেয়েও উপরি কেন চাওয়া? 
মাথায় যখন নাইকো পচন, নীচে কেন গোল, 
এমন ধারা চলবে না আর হটাও জগদ্দল।  
বলছে মানুষ, এটাই তো চায়—স্বচ্ছ ধারায় চলা, 
দেশে থেকে দুর্নীতি-ঘুষ সবাইকে ‘না বলা’।
অনেকটা পথ এসেছে দেশ, চাইলে সবই পারে, 
এগিয়েছে দেশ অনেকটুকু বিশ্বের দরবারে।
শেখের বেটি বললে কথা—বিশ্বাসটাও বড়, 
বলছে মানুষ সাবধান হও, দেওয়াল লিখন পড়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯ 
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।