ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস আজ

সেরাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১১
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস আজ

ঢাকা: আগস্ট মাসের ৯ তারিখকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ১৯৭৫ সালের এ দিনে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিল।

গত বছর থেকে এ দিনটি জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

গতবারের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় র‌্যালি এবং দুপুর আড়াইটায় পেট্রোসেন্টারে সেমিনার।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭৫ সালের এ দিনে তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর এবং কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রসহ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানির শেল অয়েলের সব শেয়ার নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয়।

পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ১০ শতাংশ শেয়ারের বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৪ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, যা ১৮ বছরে মোট ৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হিসেবে চুক্তি সম্পাদন করা হয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই পরিশোধিত মূল্যকে নামমাত্র বা সান্ত¡নামূলক মূল্য বলে অভিহিত করে থাকেন। কারণ সে সময়ে যে পরিমাণ প্রমাণিত মজুদ ছিল তার তুলনায় এ মূল্য অতি সামান্য।

পেট্রোবাংলা সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রে সে সময় গ্যাস মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৩৩৫ টিসিএফ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই ক্ষেত্রগুলো থেকে আসতো দেশের মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ গ্যাস।

বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে ৪২ শতাংশ অর্থাৎ ৮ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাসই আসছে ওই ৫টি ক্ষেত্র থেকে। প্রতিদিন উৎপাদিত এ গ্যাসের মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে দেশে এখনও সর্বনিম্ন দামে গ্যাস পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মাইনিং) মকবুল-ই-ইলাহী বাংলানিউজকে জানান, পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চললে দেশ আজ জ্বালানি সংকটের মুখে পড়তো না।
 
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তৎকালীন সৌভিয়েত ইউনিয়নের (ইউএসএসআর) সঙ্গে দেশের মূল ভূ-খ-ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সহযোগিতার জন্য চুক্তি সই করা হয়।

তিনি জানান, শত্রু সম্পত্তি হওয়ায় সিলেট ও ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রের পরিচালনার দায়িত্ব সরকার নিজ হাতে নেয় এবং পেট্রোলিয়াম অধ্যাদেশ জারি করে। পেট্রোলিয়াম অপারেশনের সব বিষয় পরিচালনা এবং পরিবীক্ষণের জন্য পেট্রোবাংলা গঠন করা হয়। একইভাবে কয়লাসহ কঠিন খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য বাংলাদেশ মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন গঠন করা হয়।

সংস্থা দু’টির চেয়ারম্যানকে সচিবের পদমর্যাদা দেওয়া হয়। পেট্রোলিয়াম কনসেশন প্রথা বিলুপ্ত করে প্রডাকশন শেয়ারিং (উৎপাদন অংশীদারিত্ব) প্রথা চালু করা হয় এবং ৫টি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সমুদ্র উপকূলে তেল অনুসন্ধানের চুক্তি করা হয় বলে জানান মকবুল-ই-ইলাহী।

এ সময়ই বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরকে পুনর্গঠন ও গতিশীল করা হয়। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পের আর্থ-কারিগরি সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগ ও আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সোভিয়েত রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

তবে ১৯৮৫ সালের পর থেকে দেশীয় সংস্থার (পেট্রোবাংলা/বাপেক্স) মাধ্যমে জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এ কারণে দেশে আজ ভয়াবহ জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন পেট্রোবাংলার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মকবুল-ই-ইলাহী।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু সরকারের নেওয়া সেই ঐতিহাসিক ক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছর থেকে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।