ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সুন্দরবনের তেল অপসারণে কেনা হচ্ছে জলযান

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৬
সুন্দরবনের তেল অপসারণে কেনা হচ্ছে জলযান

ঢাকা: দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে তেল অপসারণে জলযান জুটছে ‘সুন্দরবনের কপালে’। চ্যানেলগুলোতে তেলবাহী জাহাজ ডুবে সুন্দরবনকে আবারও যেন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে না হয়, সে কারণেই কেনা হবে এ জলযান।



মংলা বন্দরের আশেপাশে ও সুন্দরবনের চ্যানেলগুলোতে পানি দূষণ রোধ করে স্বাভাবিক জলজ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষেই আসছে জলযান। জাহাজের তেল নিঃসরণ মোকাবেলায় মংলা বন্দরের জন্য নিঃসৃত তেল অপসারণকারী জলযান কেনা হবে। এই উদ্যোগ এবারই প্রথম।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ‘মংলা বন্দরের জন্য নিঃসৃত তেল অপসারণকারী জলযান সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্পেয়ার পার্টসনহ একটি নিঃসৃত তেল অপসারণকারী জলযান কেনা হবে। কম্পিউটার, প্রিন্টার, পাবলিকেশন ও স্টেশনারি সংগ্রহ করা হবে। এতে করে সুন্দরবনে তেল পড়লে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করে সুন্দরবনকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হবে।

এর আগে সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। সুন্দরবনের প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। শ্যালা নদীর আশপাশের নালা-খালে ভাসে তেল। পানির ওপর আলকাতরার মতো থকথক কালো তেলের আস্তর পড়ে। জোয়ারের টানে সেই তেল বনে ঢুকে ঢেকে দিয়েছে শ্বাসমূল।

নদীপাড়ের লতা-গুল্ম, বাইন, কেওড়াসহ অন্য গাছপালার গায়ে লেগে যায় তেলের কালো দাগ।

তেলের কারণে কোথাও কোথাও কুমির ও মাছ মারা যায়। বনের জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি নদী পাড়ের মানুষও বিপদে পড়ে। এমন পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হলেও যাতে করে দ্রুত সময়ে মোকাবেলা করা যায় সেই উদ্যোগে কেনা হচ্ছে উন্নত জলযান।

অন্যদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি পরামর্শক সেবা খাতে দুই লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

রোববার(০৩ এপ্রিল) পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে ‘মংলা বন্দরের জন্য নিঃসৃত তেল অপসারণকারী জলযান সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর  প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক বিমান সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী সভাপতিত্বে করেন।
 
সভায় অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার্থে জলযান কেনা হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবণায় প্রকল্পটি পিইসি সভা অনুমোদন দিয়েছে। এখন একনেক সভা প্রকল্পটি অনুমোদন দিলেই জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম নেওয়া হচ্ছে। ’

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, সুন্দরবন অঞ্চলে হাজার হাজার ট্রলার মৎস্য আহরণ কাজে নিয়োজিত। অফশোর তেল ও গ্যাসের সন্ধান এবং উত্তোলন প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ফলে, সুন্দরবনের পানিতে তেল উপচেপড়ার ঘটনায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

মংলা বন্দর থেকে বঙ্গোপসাগর ১৩১ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এ দীর্ঘ চ্যানেল বিশ্ব ঐতিহ্য ‘সুন্দরবন’ দিয়ে পরিবেষ্টিত। মংলা বন্দরে বার্ষিক গড়ে প্রায় ৩৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে। দিনে দিনে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাণিজ্যিক জাহাজের অধিকাংশ পণ্য লাইটার ভেসেল ও কার্গো ভেসেলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব ভেসেলসমূহ চলাচলের জন্য প্রধানত সুন্দরবনের চ্যানেল(পশুর নদী) ব্যবহার করে থাকে।    

তেল অপসারণকারী জাহাজ কেনা প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)জিকরুর রেজা খানম বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবন এলাকায় তেলবাহী জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কখনও সুন্দরবনে কোনো কারণে তেল ছড়িয়ে পড়ে সেটা অপসারণ করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল নিঃসৃত হয়। কিন্তু এই তেল অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। ’

‘ভবিষ্যতে এরুপ দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার জন্য মংলা বন্দরের একটি নিঃসৃত তেল অপসারণকারী জাহাজ কেনা জরুরি। বিশ্ব ঐতিহ্য ‘সুন্দরবন’ দিয়ে পরিবেষ্টিত মংলা বন্দরের আশেপাশের এলাকায় নিঃসৃত তেল অপসারণকারী কোনো জলযান নেই। প্রকল্পের আওতায় আমরা উন্নত মানের জলযান সংগ্রহ করবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এমআইএস/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।