ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চালাকিতেই ধরা বাংলাদেশ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৫
চালাকিতেই ধরা বাংলাদেশ

নেপাল থেকে ফিরে: যখন তখন যাওয়া আসা করে না। তবে একবার গেলে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা পর দেখা মেলে।

দিনে রাতে ৭ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে না অনেক সময়। তবু ক্ষুব্ধ নয় নেপালবাসী। অবস্থা এর চেয়ে শত গুণ ভালো হওয়া সত্ত্বেও অসন্তোষ বাংলাদেশের মানুষ।

হিমালয় কন্যা নেপালের রাজধানী শহরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের চিত্র এটি। শীত যত বেড়ে যায় লোডশেডিংও তত বাড়তে থাকে। দেশটিতে মাত্র ৫শ ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ সুযোগ রয়েছে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের। এতেও অভিযোগ নেই নেপালি জনগণের।

যদিও নেপালিরা তাদের বিদ্যুৎ খাতকে বাংলা সম্পর্কে ইবনে বতুতার সেই বিখ্যাত উক্তি ‘ধন সম্পদে পরিপূর্ণ নরক’ এর সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পান। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

নেপালের বিদ্যুৎ খাত সব সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে। বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৭২ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। অন্যদিকে নেপালের প্রায় পৌনে ৩ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায়।

বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা ১২ হাজারের মতো। নেপালে তার চেয়ে কয়েকগুণ কম অর্থাৎ, মাত্র সাড়ে ৫’শ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ দাবি করে কোনো লোডশেডিং নেই। কিন্তু নেপালে খোদ সিটিতে দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়।

বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে ভয়াবহ লোডশেডিং ছিলো। এখন অনেক কমে গেছে। এই যখন অবস্থা তখন নেপালের চেয়ে ‍বাংলাদেশের জনগণ বেশি সন্তুষ্ট থাকার কথা। বলা যায় খুশিতে গদগদ থাকার কথা। কিন্তু কোনোভাবেই বাংলাদেশের জনগণ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে নাখোশ তারা।

কম বিদ্যুৎ পেয়েও নেপালের জনগণ বেশি সন্তুষ্ট। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে কখন লোডশেডিং হবে, কখন লো-ভোল্টেজ হবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। লোডশেডিং হয়- একথা স্বীকারই করতে চায় না সরকার।

স্বীকার করলে যেন ‘মহাভারত অশুদ্ধ’ হয়ে যাবে। তার চেয়ে অস্বীকার করা ঢের ভালো মনে করেন কর্তারা। কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই কেন প্রশ্ন করলেই জবাব মেলে স্থানীয় সমস্যা। কিন্তু নেপাল সরকার এখানে পুরোপুরি বিপরীতমুখী। তারা ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দিচ্ছে। রীতিমতো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে কোনদিন কখন কোন এলাকায় লোডশেডিং হবে।

কাঠমান্ডু সিটির কাওয়াহিল রোডের কাপড় ব্যবসায়ী লক্ষ্মীন্দ্র জানায়, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রথম দফায় বেলা ১১টায় বিদ্যু‍ৎ চলে গিয়ে আসে ৪ ঘণ্টা পর বেলা ৩ টায়। দ্বিতীয় দফায় রাত ৮টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ফের দেখা মিলেছে রাত ১২টায়। সাবলীলভাবে বলে গেলেন। যেনো স্বাভাবিক বিষয়, কোনো সমস্যা নেই তাতে।

তিনি জানান, এই লোডশেডিংয়ের শিডিউল তিনি আগে থেকেই জানতেন। যে কারণে সেভাবেই তার প্রস্তুতি ছিলো। আগে কীভাবে তথ্য জানানো হয় জানতে চাইলে হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের বোতাম টিপে লোডশেডিং শিডিউল বের করেন। বলেন, এখানে এলাকাভিত্তিক গ্রুপ রয়েছে। কোন এলাকায় কখন বিদ্যুৎ থাকবে না।

ঘোষিত শিডিউল মোতাবেক পুরোপুরি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় কি-না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫ মিনিট আগেই বিদ্যুৎ চলে আসে। কিন্তু মাসে দু’একবার সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট দেরি হয়। নেপাল সরকার তাদের সীমাবদ্ধতার কথা জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে। জনগণও তা গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই পরম তৃপ্তিতে নেপালিরা।

কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পুরো বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ কখন বিদ্যুৎ যাবে আর কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানও হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ থাকলেও হাতের কাছে সব সময় জেনারেটর, আইপিএস অথবা যে কোনো বিকল্প রাখতে হয়।
লোডশেডিংয়ের আগাম তথ্য দূরের কথা, লোডশেডিং চলার সময় ফোন করে ঠিক কখন বিদ্যুৎ আসবে তার কোনো তথ্যও পাওয়া যায় না। জরুরি কিছু
টেলিফোন নম্বর রয়েছে সেগুলোতে ফোন করে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।

ভাগ্য ভালো হলে না-কি ফোনে পাওয়া যায়- খোদ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন। কখনও ফোনে পাওয়া গেলে জবাব মেলে বিদ্যুৎ কখন আসবে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর এই লুকোচুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে সরকার।

এক সময় ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। তা অনেকাংশে দূর করলেও সরকার জনগণের মন পাচ্ছে না। অনেকে মনে করেন সরকার চালাকি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
এসআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।