ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-২

পরিস্থিতি উল্টো

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৫
পরিস্থিতি উল্টো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুন্সিগঞ্জ থেকে ফিরে: বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অফিসে গিয়ে ধর্ণা নয়, বরং অফিস গ্রাহকের জন্য গ্রামে গিয়ে ধর্ণা দিয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১১ জুন’২০১৫) প্রথম বারের মতো এই ব্যতিক্রমী আয়োজন পরখ করার সৌভাগ্য হয়েছে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে (মুপবিস)।

শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল এলাকায় আয়োজিত ওই বিশেষ ক্যাম্পে তাৎক্ষণিক ফি জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন আট শতাধিক গ্রাহক।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লম্বালাইন ধরে লোকজন সংযোগ ফি জমা দিচ্ছেন। আর যে কর্তাদের টেবিল ঘুরে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলত। সেই কর্তারা টেবিল পেতে ঘষা ঘষ সই দিয়ে যাচ্ছেন।
 
বাইরে আরেকটি গ্রুপ রেডি। ফাইলে কর্তাদের সই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাচ্ছেন গ্রাহকের বাড়ি। বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ফিরছেন ক্যাম্পে। এভাবে দিনব্যাপী কর্মযজ্ঞ চলেছে।
 
গ্রাহকরাও মহাখুশি। উত্তর বালাসুর গ্রামের আজাহার ভুইয়া (পিতা: হাশেম ভুইয়া) জানালেন, দুপুরে টাকা জমা দিয়ে বিকেলে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। এরচেয়ে শান্তির আর কি হতে পারে।
 
তিনি বলেন, তার পুরনো বাড়িতে আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। তখন অনেক টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও অনেকদিন ধর্ণা দিতে হয়েছে।   তখন মনে হয়েছিল বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার মতো আর কোন কঠিন কাজ নেই। আর এখন খোদ অফিসে সংযোগ দেওয়ার জন্য এসেছে আমাদের গ্রামে এসেছে। সরকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। না হলে অকৃতজ্ঞ হয়ে যাবো।
 
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মাহবুব রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এবারেই প্রথম মাঠে গিয়ে তাৎক্ষণিক সংযোগের ব্যবস্থা করা হযেছে। যাতে উন্নত সেবা দেওয়া যায়।
 
তিনি বলেন, অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু রয়েছে। আবেদন জমা হওয়ার সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ প্রদান করা হয়। সংযোগ প্রদানে যৌক্তিক কোন বাধা থাকলে (যেমন দূরত্ব বেশি, ট্রান্সফরমার অভার লোডেড) তা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন অফিস ঘুরে দেখাচ্ছিলেন।
 
দক্ষিণ দেওসার গ্রামের আমান উল্লাহ (পিতা-সিরাজুল হক) নামের একজন গ্রাহকের ফাইল টেনে নিয়ে বলেন, দেখেন তাকে আবেদন করার পর প্রথম দফায় চিঠি দিলে তিনি ‍আসেন নি। তাকে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।
 
সমিতিটি চলতি বছরে ৪০ হাজার নতুন সংযোগ দিতে যাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ণ বোর্ড (আরইবি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ভবিষ্যতে সারাদেশের এ ধরনের সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চান।
 
মুন্সীগঞ্জ পবিস জানায়, গতকাল বৃহষ্পতিবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল এলাকায় এই সেবা দেয়া হয়েছে। এর আওতায় গতকাল শ্রীনগর জোনাল অফিস থেকে গ্রাহকদের জামানত গ্রহণ, সিএমও (কাস্টমার মিটার অর্ডার) তৈরি করে দ্রুত ৮০০ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।
 
আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা ধীরে ধীরে অন্যান্য সমিতিতে এ ধরনের ওয়ানস্টপ কর্মসূচি গ্রহণ করব। সেবা জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। যাদে সংযোগের নামে কেউ বাণিজ্য করতে না পারে।
 
মুন্সিগঞ্জ পবিস সূত্রে জানা যায়,  ১৯৯৯ সালে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার যাত্রা শুরু করে।   শুরুর দিকে এর সিস্টেম লস এর পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। গতবছরেও এই লসের পরিমাণ ছিল ১২শতাংশের বেশি। তবে বর্তমানে এর সিস্টেম লস ১০ শতাংশ। আগে লোকসানে ছিল এখন মুনাফায় যেতে সক্ষম হয়েছে এই সমিতিটি। যে কারণে ২০১৪ সালে সেরা বিদ্যুৎ ইউনিট পদক পেয়েছে।
 
বর্তমানে এর মোট গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৫। এর বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদা ১১০ মেগাওয়াট। এখানে কোনো লোডশেডিং নেই। গতবছর  বিদ্যুৎ সপ্তাহে দেশের ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সেরা নির্বাচিত হয়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে সমিতিটির আওতাভুক্ত শতভাগ গ্রাম বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে।
 
তাদের এলাকায় ২ লাখ ৬৯ হাজার পরিবার রয়েছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৫ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। নতুন করে আর লাইন টানার মতো কোন এলাকা নেই।   নতুন নতুন বাড়ি হচ্ছে সেগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। শুধু মুন্সিগঞ্জ নয়, বিদ্যুৎ খাতে নিরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। সিসটেম লসের কারনে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়া হতে বসেছিলো। সে সব কোম্পানির অনেকে মুনাফায় চলে গেছে। অন্যান্যদের সামনে এখন মুনাফার হাতছানি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০৪ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৫
এসআই/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।