ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বাংলাদেশে আস্থা বেড়েছে রাশিয়ার

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৪
বাংলাদেশে আস্থা বেড়েছে রাশিয়ার

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বেড়েছে রাশিয়ার। তাদের ধারণার চেয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি দক্ষ বলে মন্তব্য করেছে দেশটি।

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজে যুক্ত হয়ে রাশিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছে।

আর বাংলানিউজকে এ কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

ইয়াফেস ওসমান বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশটির ধারণাই পাল্টে দিয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পারমানবিক শক্তিধর দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রোসাটমের প্রধান সার্গেই ভি ক্রিয়েনকো এ মন্তব্য করেছেন।

রাশিয়ান ফেডারেশন বাংলাদেশের রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে দেশটি তুর্কিস্তানেও একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

কিন্তু তুর্কি তাদের প্রকল্প যথা সময়ে এগিয়ে নিতে পারেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ তাদের ধারণার চেয়ে বেশি দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন দেশটির নেতারা।

২০১৭ সালে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি নির্ধারিত ২০২২ সালেই উৎপাদনে আসবে।

আর দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৩ সালে উৎপাদনে যাবে বলে জানান ইয়াফেস ওসমান।

বর্তমানে প্রকল্পটির প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের মধ্যে এ সব জরিপের কাজ শেষ হবে। এরপর জরিপের প্রতিবেদনগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা তৈরি করা হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধরী বাংলানিউজকে বলেন, ফিজিবিলিটি ইভ্যালুয়েশন (বাস্তব মূল্যায়ন) অ্যানভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসম্যান্ট বা ইআইএ (পরিবেশগত প্রভাব) এবং সেফটি অ্যান্ড হাইজিন রিপোর্ট (নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন) বিষয়ে তিনটি চুক্তি করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

প্রায়োরিটি কনস্ট্রাকশনের জন্য চুক্তিটি সম্পন্ন হবে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক এ প্রস্ততি পর্যায়ের কাজের জন্য ৫ শ’ ৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে ৫ শ’ মিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫৫ মিলিয়ন ডলার।

এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে রাশিয়ান সরকার দেবে ৯ বিলিয়ন ডলার। ১ বিলিয়ন ডলারের যোগান দেবে বাংলাদেশ। রাশিয়ার এই অর্থ সহায়তা ২৮ বছরে কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য বলে বাংলানিউজকে জানান প্রতিমন্ত্রী।

ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আয় থেকেই ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এমনকি ১৫ বছরে বিনিয়োগ উঠে আসবে। এরপর যা হবে সবটাই লাভ।

এ নিয়ে যুগ্ম সচিব রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীও বলেন, রূপপুরের ১০০ বছরের ভূমিকম্পের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখেছে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, এখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পন সহন ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রটির।

১৯৬২ সালে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর নানা ভাবে কেটে যায় প্রায় ৫০ বছর। এরপর বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

২০১৩ সালের অক্টোবরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৬২ সালে ২৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। নতুন করে আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ করছে সরকার। পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা রূপচর কনিকা অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

এর আগে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে রেজুলেশন পাশ করা হয়। গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য সার্বিক সহায়তার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুয়ায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রাশিয়া।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে রাশিয়া। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ ফেরত নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।