ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

অটবির নোয়াপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৪
অটবির নোয়াপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ

ঢাকা: ভেড়ামারার পর বন্ধ অটবির নোয়াপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সাড়ে ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র।



পিডিবি’র আইপিপি সেল বাংলানিউজকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই যান্ত্রিক ত্রুটিতে ব্যাহত হচ্ছিলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন। ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোনদিন ৫ কোনদিন ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিলো। শেষ পর‌্যন্ত গত বছরের ১৪ নভেম্বর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বন্ধের সময় অটবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো শিগগিরই তারা মেরামত করে উৎপাদনে আসবে। কিন্তু সাড়ে ৩ মাস হয়ে গেলেও ত্রুটি সারিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে পারেনি তারা। পিডিবির ওয়েবসাইট পরিদর্শন করলেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে মাত্র ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিলো অটবির ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। কোনোদিন আবারও তাও উৎপাদন হতো না।   গত বছরের ৩১ অক্টোবর তারিখেও মাত্র ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

যশোরের নোয়াপাড়ায় ১০৫ মেগাওয়াট (ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক) উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য অটবির (সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ার সিসটেম) সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১০ সালের ৪ জুন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসে নির্ধারিত সময়ের ৩১৬ দিন পর ২৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে।

অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে অটবি গ্রুপ বিদেশ থেকে আমদানি করে পুরাতন মেশিন। এ কারণে উদ্বোধনের প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্রটিতে লেগে থাকে যান্ত্রিক সমস্যা। উদ্বোধনের দিনেই যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ২৭ মেগাওয়াট।

প্রতিদিন ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত বছরের ২২ জুন ১০ মেগাওয়াট, এর আগের দিন ২১ জুন ৭ মেগাওয়াট ও ২০জুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়  মাত্র ১২ মেগাওয়াট।

বিলম্বে উৎপাদনে আসা ও চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ দিতে না পারায় প্রায় তাদের ৩‘শ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। যদিও এর বেশির ভাগই এখনও রয়েছে অনাদায়ী।

একদিকে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ দিতে না পারায় জরিমানা। অপরদিকে ব্যাংক সুদের কারণে দেউলিয়ার পথে রয়েছে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা পথ খুঁজছে বলেও মনে করে আইপিপি সেল। এবি ব্যাংকের কাছেই তাদের ঋণের পরিমাণ ৮৬০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পিডিবি সুত্র।

পিডিবির পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, অতি লোভে ফেঁসে গেছে অটবি। ৯০ দশকের পুরাতন মেশিন এনে রাতারাতি মুনাফা লুটতে চেয়েছিলো তারা। কিন্তু এখন দেউলিয়ার পথে রয়েছে।

বিডি রহমত উল্লাহ আরও বলেন, একটি মেশিনের লাইফ টাইম থাকে ২৫ বছর। পুরাতন মেশিন এনেছে। এগুলোর লাইফ টাইম অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করেও কোন লাভ হবে না। সরকারের উচিত হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওই জায়গায় নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা।

নোয়াপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সহকারী ম্যানেজার খোকন মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে বলেন, আমি কথা বলার জন্য দায়িত্বশীল অফিসার নই। পরিচয় জানাতেও অস্বীকৃতি জানান খোকন মিয়া।

কবে থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে জানান, ঠিক কবে থেকে বন্ধ রয়েছে তা বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি মেরামত চলছে শিগগিরই উৎপাদনে আসবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, অটবি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মেরামত করার কথা বলেছে। কবে নাগাদ উৎপাদনে আসবে জানায়নি। এর বেশি বলতে পারবো না। ’

পিডিবি সুত্র জানিয়েছে,  নানা কারণে অটবিকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান অটবি ঠিকমত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে ব্যর্থ হলেও তাদের ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আবারও ৬০ মাসের জন্য ভাড়া করা হচ্ছে।

মাসে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫.৯৬ ডলার। সে হিসেবে প্রতি মেগাওয়াটে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে ১৫ হাজার ৯৬০ ইউএস ডলার।

আর ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য মাসে ভাড়া গুণতে হবে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮‘শ ডলার। সর্বমোট ৬০ মাসে পিডিবিকে ভাড়া দিতে হবে ১০ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় (ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) যা ৭৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার।


বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগের বার ৩ বছরের জন্য ভাড়া করা হয়েছিলো। তখন ভাড়া ধরা হয়েছিলো ৫৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় ভাড়া কম হওয়ার কথা। কিন্তু অটবির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ মহলের নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার চাপেই অটবিকে অনৈতিক সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইপিপি সেল-১ এর একটি সূত্র।
 
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবটির অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই চুক্তির স্বাক্ষর হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আইপিপি সেল-১ এর পরিচালক গোলাম কিবরিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।