ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

দুর্গম পাহাড়ে আলোর ঝলক

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
দুর্গম পাহাড়ে আলোর ঝলক

রাঙামাটি: বর্তমান সরকারের আমলে সমতলের মতো সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন। অন্ধকার দুর্গম পাহাড়েও পৌঁছে গেছে আলোর ঝলকানি।

 

মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্রতিনিয়ত উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটছে পাহাড়ে।

এক সময় পার্বত্যাঞ্চল আতঙ্কের নগর হিসেবে খ্যাত থাকলেও বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাহাড় এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের জোয়ারে।  

দুর্গম পাহাড়গুলোতে যেখানে মানুষ বৈদ্যুতিক আলোর কথা চিন্তাও করেনি, সেখানে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার ফলে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে বিদ্যুতের গতিতে।

লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি যেমন সবচেয়ে বড়, তেমনি দুর্গম এলাকা। জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক লাইন আমাদের এলাকায় নেই। সরকার আমাদের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আমাদের এলাকায় কাজের গতি যেমন বেড়েছে, তেমনি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। যে কারণে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের এলাকায় আরও চার হাজার সোলার প্রয়োজন। তাহলে পুরো এলাকায় বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে।

বিলাইছড়ি উপজেলার বিলাইছড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজয় ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, সোলার বিদ্যুতের কারণে এলাকার ছেলে-মেয়েরা রাতে লেখাপড়া করতে পারছে। টিভিতে দেশ-বিদেশের খবর দেখতে পারছি।  বর্তমানে পুরো এলাকা আলোকিত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটির প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার দুর্গম পাহাড় যেখানে জাতীয় গ্রিড লাইন স্থাপন করা সম্ভব নয়, সেসব স্থানে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৪২ হাজার সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হচ্ছে বিনামূল্যে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ৪০ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার এবং আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার দেওয়া হচ্ছে।

গত অর্থ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মিলে ১৫ হাজার ৬০০ সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হয়ে গেছে।  

সোলারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপকারভোগীদের পর্যায়ক্রমে একদিন করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। সেই সঙ্গে তাদের ৬০০ টাকা করে ভাতাও দিচ্ছে সরকারের এ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানটি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (বাস্তবায়ন) সোলার প্যানেল প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করছে বিনামূল্যে। এসব সোলারের বিদ্যুৎ যেমন ওইসব এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে, তেমনি জীবনমানে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হলো সৌরবিদ্যুৎ। বর্তমানে বিদ্যুতের এ আলো যেমন  অন্ধকার পাহাড়কে আলোকিত করেছে, তেমনি নিরাপত্তা জোরদারসহ কাজের গতি বেড়েছে বহুগুণ। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

পাহাড়ের সুধিজনরা বলছেন, অতীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা কেউ না ভাবলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফসল হলো পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।