ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কোনো কিছুই হাজারীকে দমাতে পারেনি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
কোনো কিছুই হাজারীকে দমাতে পারেনি

ফেনী: জয়নাল আবেদীন হাজারী। একটি নাম, রাজনীতির মাঠের একটি অসমাপ্ত অধ্যায়।

তার গোটা জীবনটা ছিল নানা আন্দোলন-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই, আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্কের। যদিও জীবনভর রাজনীতির উত্থান-পতন ও নানা তর্ক-বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে কাটাতে হয়েছে তাকে। তবে কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। জীবনভর কখনো ঘৃণা, কখনো আক্রোশের শিকার হয়েছেন, কখনো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, কখনো ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, আবার কখনো নন্দিত হয়েছেন কারও কাছে।  

২০০১ সালের পর থেকে আমৃত্যু নিজের সাজানো-গোছানো মুজিব উদ্যান ছেড়ে দূরে থাকতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ জয়নাল আবেদীন হাজারীর জীবনে যত ঝড়-তুফানই আসুক, কখনোই তিনি মুখ থুবড়ে পড়েননি। সবকিছু সামলে ফের উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন, কখনো হার স্বীকার করেননি নিজের নীতি, আদর্শের কাছে।  

বলছি ফেনীর এককালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বোনাফাইড আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারীর কথা। জীবনে কখনো কারও কাছে নতি স্বীকার না করলেও মৃত্যুর কাছেই নত হতে হল তাকে। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ৫টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ৭৬ বছর বয়সী দেশব্যাপী পরিচিত ফেনীর এ আলোচিত ব্যক্তিত্বের।  

জয়নাল হাজারী, যিনি ফেনীতে ‘ভাইছা’ হিসেবে এক নামে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে শেষ হল ফেনীর রাজনীতির গোটা একটি অধ্যায়ের। যার নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভয়, কখনো ত্রাসের। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইচ্ছে পোষণ করতেন তিনি ফেনীতে ফেরার। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। শেষবার গত বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে জীবিত অবস্থায় একবার ফেনী আসার ভাগ্য হয়েছিল তার। এবার সত্যি তিনিই ফেনী ফিরছেন, তবে জীবিত নয় লাশ হয়ে।

তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোক জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন ফেনী-২ আসনের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীও। এক বিবৃতিতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তারা।

সূত্র জানায়, জয়নাল হাজারী হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

দেশের একজন আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন জয়নাল হাজারী। ১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনীর মাস্টারপাড়ায় সহদেবপুরে নানা হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জয়নাল হাজারী। তার বাবা গণি হাজারী ছিলেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী, আর মা রিজিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী। জয়নাল হাজারী আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এক সময় ফেনীর গডফাদার নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের ৩ বারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১ 
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।