ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নৌকা ছেড়ে ট্রাকে ‘ওঠায়’ পদ হারালেন আ.লীগের ১১ নেতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
নৌকা ছেড়ে ট্রাকে ‘ওঠায়’ পদ হারালেন আ.লীগের ১১ নেতা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ সাত্তারের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।  

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০ টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

ভবিষ্যতে তারা দলীয় কোনো পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবেন না বলেও অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।  

অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা হলেন - চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অহিদুজ্জামান বেগ বাবলু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন পাটওয়ারী, কোষাধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী, শ্রম সম্পাদক নাছির পাটওয়ারী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, সদস্য সামছুল আলম বাবুল পাটওয়ারী, নুরুল আমিন, সোহরাব হোসেন রুবেল পাটওয়ারী, লোকমান মাস্টার, ও মো. খালেদ।  

একই অভিযোগে এর আগে ১৯ ডিসেম্বর মান্দারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে আবার পৃথক আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাসুদকে অব্যাহতির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করা হয়।  

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওহাবের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় কার্যক্রমে পর পর অনুপস্থিত, দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত রয়েছেন। এতে গঠনতন্ত্রের ৪৭ এর ১১ ধারা মোতাবেক ১০ নেতাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব বলেন, দলের কার্যক্রমে অনুপস্থিত, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা কোনো প্রার্থীর ভোট করে তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।  

এদিকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা ও মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রুবেল পাটওয়ারী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এতে থানা কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও প্রদর্শন করেছেন তিনি।  

স্ট্যাটাসটিতে বলা হয়- ‘আপনাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আপানারা থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে থানা কমিটির কোনো নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। নিশ্চয়ই আপনারা আওয়ামী লীগের শত্রু, শেখ হাসিনার শত্রু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যখন সর্বদিক চিন্তা করে একটি সুন্দর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিএনপি-জামায়াতের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভোটারশূন্য নির্বাচন করার জন্য দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সম্মানহানি করছেন। ’

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা মোশারফ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছে৷ দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা দলীয় কর্মীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশনাও নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা আমার নাম ঘোষণা করছেন। আমাকে অব্যাহতি দিতে হলে জেলা কমিটি কেন্দ্রে সুপারিশ করবেন। কেন্দ্র আমাদেরকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। থানা আওয়ামী লীগের দুই নেতা কোনোভাবেই আমাকে অব্যাহতি দিতে পারেন না।

সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা অহিদুজ্জামান বেগ বাবলু বলেন, ফেসবুকে দেখেছি আমাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি যে, নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রের পক্ষে করতে পারবে না। বহিষ্কার বা অব্যাহতির নির্দেশনাও নেই। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আমরা বসব।  

এদিকে একই অভিযোগে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ছয় নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলাইমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।  

অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন - ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদকের সফিকুর রহমান সফিক, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খলিল, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্মকার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুন নবী।

এরা আগামী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু নৌকার প্রার্থী। তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সাত্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।