ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নাদিম হত্যাকাণ্ড

উপজেলা আ. লীগের সভাপতি পদে বহাল তবিয়তে ‘রাজাকারকন্যা’ শাহীনা

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
উপজেলা আ. লীগের সভাপতি পদে বহাল তবিয়তে ‘রাজাকারকন্যা’ শাহীনা শাহীনা বেগম

জামালপুর থেকে ফিরে: বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ‘রাজাকারের সন্তান’ শাহীনা বেগম ও বাবুল তালুকদারের গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ দুই পদ পাওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন বাংলানিউজের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম। সেই প্রতিবেদনের জেরে হামলাও হয়েছিল নাদিমের ওপর।

সেই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে শাহীনা বেগমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, তদন্ত পর্যন্ত করার প্রয়োজন মনে করেননি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

১৪ জুন রাতে হামলার শিকার হন বাংলানিউজের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম। পরদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই খুনের ঘটনায় সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে মামলাও হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও ওঠেছে শাহীনার বিরুদ্ধে। তবে তিনি মামলার আসামি নন।

শাহীনাকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয়ভাবে কোনো তদন্ত করা বা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা নেই যে, কোনোকিছুর সত্যতা যাচাই করবে।  

তাই বলে অভিযোগ থাকা যে কাউকে আওয়ামী লীগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া যাবে, তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন নেই- এসব প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। পরে শাহীনা বেগমের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরে উল্টো তার পক্ষ নেওয়ার চেষ্টা করেন বাকি বিল্লাহ।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র বলেন, এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলেন (শাহীনার বাবা) রাজাকার ছিলেন, কেউ বলেন ছিলেন না।

২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হঠাৎ করেই বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীর কন্যা শাহীনা বেগমকে সভাপতি ও মফিজল হক তালুকদারের ছেলে বাবুল তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কামাল আজাদের সুপারিশে।

সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ শিরোনামে প্রতিবেদন করেন নিহত নাদিম। এই সংবাদ প্রকাশের জেরে শাহীনার নির্দেশে স্বপন ও শামীমের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়। এই তিনজনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নাদিম।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মজিবুর রহমান বলেন, বকশীগঞ্জ শহর থেকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন অনেক দূরে। এত দূর থেকে এসে নাদিমকে হত্যা করা হলো। তাও বাড়ির কাছে! শেল্টার না থাকলে এটা সম্ভব নয়। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহীনা বেগম শেল্টার দিয়েছেন। তার শেল্টার ছাড়া বাবু চেয়ারম্যান এ সাহস পাবেন বলে মনে হয় না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান জুম্মন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, রাজাকারের সন্তান নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে শুরু, পরিণতি সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড। এর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পেটুয়া বাহিনী মধ্যবাজারে নাদিমকে হামলা করেছিল। কিন্তু আমরা আশেপাশে থাকায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ কারণে তিনি বেঁচে যান।

তিনি বলেন, সে সময় হামলার পর নাদিম থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগে নাম ছিলো শাহীনা বেগম, স্বপন মন্ডল ও শামীমের। এই হামলায় স্বপন মন্ডল ও শামীম ছিলেন। চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত ছিলেন পরিকল্পনা সফলকারী সন্ত্রাসী। এর পেছনে শাহীনা বেগম থাকতেই পারেন। কারণ সে সময় শাহীনা বেগমের বিরুদ্ধে নাদিম অভিযোগ এবং ভিডিওতে এসে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন।

নিজের দিকে আসা সব দোষ অস্বীকার করেছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বানোয়াট ও অপপ্রচার। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলায় ঘটনায় আমার দায় নেই। আমার কোনো কর্মী হামলা করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ষড়যন্ত্র করে একটি মহল আমাকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

চেয়ারম্যান বাবু আপনার রাজনীতি করেন কি না, বাংলানিউজের প্রতিবেদকের এমন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।

আপনার পিতা রাজাকার ছিলেন, এমন সংবাদ প্রকাশে আপনি ক্ষিপ্ত ছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহীনা বলেন, সে ঘটনা মিটে গেছে।

নাদিম হত্যা ছাড়াও নানা সময়ে উঠে এসেছে শাহীনা ও তার বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীর নাম। স্থানীয়দের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কাইয়ুম মুন্সীকে রাজাকার বলেছেন।

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক মুন্সি বীরপ্রতীক বলেছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদারের বাবা মফিজল হক তালুকদার তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন। শাহীনার বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সী দালাল ও পাকিস্তানিদের কেসের আসামি ছিল। মফিজল তালুকদার নিজে রাজাকার তৈরি করতেন, কাইয়ুমও তাই করতেন। আমরা সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
এনবি/এসএফ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।