ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বন্ধুহীন করে তুলছেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বন্ধুহীন করে তুলছেন’

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বন্ধুহীন করে তুলছেন মন্তব্য করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, সমস্ত বন্ধু দেশগুলোকে আপনারা (সরকার) বৈরি শত্রুভাবাপন্ন করে তুলছেন। তারা যদি আজকে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, আমাদের অর্থনীতি, রপ্তানি বাণিজ্য ভেঙে পড়বে।

তাই এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। এ সরকার দেশের মানুষকে একটি ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ সরকারকে বিদায় করা ছাড়া দেশকে রক্ষা করা যাবে না।

শুক্রবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাইফুল হক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা আর কিছু কিনবো না। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কি সর্বনাশ হবে এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। হাজার হাজার গার্মেন্টস, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে। প্রধানমন্ত্রী কি এদের দায়িত্ব নিতে পারবেন?

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷ এ কথা বলার পরে আওয়ামী লীগের নেতারা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। এতদিন তারা বলে আসছিলেন, সারা পৃথিবী নাকি সরকারের সঙ্গে আছে৷ এবার প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের বিদেশ সফরের পর দেখা যাচ্ছে, তাদের মন খুব খারাপ, তাদের কপালের মধ্যে ভাজ। বিদেশে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী উপযুক্ত কোনো প্রোটোকল পাননি, কোনো মর্যাদা পাননি। তাই ঢাকায় ফিরে এসে তিনি মনের ক্ষোভ, দুঃখে আকস্মিকভাবে ছয়টি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রোটোকল প্রত্যাহার করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এখন খুব মন খারাপ। কারণ প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন মার্কিনীরা, বিদেশিরা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবারও তাকে সমর্থন করবে। বিনা ভোটের দখলদার সরকার ক্ষমতায় থেকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আগামী নির্বাচনও পার করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সম্মতি পাওয়া যায়নি। এ জন্য তিনি ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেই তিনি একের পর এক বেসামাল বক্তব্য দিচ্ছেন। এটি সরকারের যে বেসামাল পরিস্থিত, অস্থিরতা তার একটি বহিঃপ্রকাশ।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ এ নেতা বলেন, দেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪-২০১৮ সালের নির্বাচন হতে দেবে না। দেশের মানুষ এবার তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে, মর্যাদা রক্ষা করবে। কারণ আগামী নির্বাচন ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশ এটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে দেশের গরিব, শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষরা ভালো নেই। তারা একবেলা খেলে আরেকবেলা কিভাবে খাবে এর নিশ্চয়তা নেই। তারা যে মজুরি পান, তা দিয়ে এই বাজারে ১৫ দিন চলাও অসম্ভব। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠা হিসাব দিয়েছে, আজকে অতিদরিদ্র, না খাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের পুষ্টিহীনতার সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা দাবি করছে, নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করার। শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষ আজ রাজপথে নেমে আসছে ক্ষুধার তাগিদে। কিন্তু সরকার এতে কর্ণপাত করছে না। নানা খাতে সরকার বরাদ্দ দিচ্ছে। করোনা থেকে এখন পর্যন্ত দেড় কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসেছে নতুন করে। কেবলমাত্র দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত কয়েক মাসে ২৫ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এমন তথ্য দিচ্ছে, তখন সরকার প্রতিনিয়ত প্রচার করছে, মানুষ উন্নয়নে আছে, মানুষ বেহেস্তে আছে। বেহেস্তে আছেন সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা বেহেস্তে আছেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, শ্রমজীবীরা বলছে, বাজারে গেলে মনে হয় না দেশে কোনো সরকার আছে। সকালে এক দাম, দুপুরে একদাম, বিকেলে আরেক দাম, মধ্যরাতে আবার তারা দাম বাড়িয়ে দেয়৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কেই নেই। সরকার মুনাফাখোর সিন্ডিকেটদের হাতে পুরো বাজারের ভার তুলে দিয়েছে। প্রতিদিন সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব সিন্ডিকেট মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, কারণ সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ আছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার আবার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু যে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত, ঘামে দেশ চলে, উৎপাদন চলে, বড়লোকদের ফুটানি চলে, সেই শ্রমিকের বাঁচার কোনো রাস্তা তারা রাখেনি। তারা শ্রমিকের পেটে লাথি মারছে। শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষদের তারা রাস্তায় বসানোর ব্যবস্থা করেছে। আগে শ্রমিকদের যেটুকু দাম ছিল, এ সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পরে তারা আরও গরিব হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ আরও ক্ষমতাহীন হয়েছে।

বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বিহ্নিশিখা জামালী, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির প্রস্ততি কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আবু হাসান টিপু, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম ফয়েজ হোসেন, বিপ্লবী কৃষক শ্রমিক সংহতির সভাপতি আনছার আলী দুলাল, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু ব্যাপারী বিন্দু, বিপ্লবী রিকশা শ্রমিক সংহতির সভাপতি জামাল শিকদার ও বিপ্লবী পদুকা শ্রমিক সংহতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে সেগুনবাগিচাস্থ গণসংহতি মিলনায়তনে বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়:১৪১৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।