ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৯ বছর ধরে সম্মেলনহীন লালমনিরহাট সদর আ.লীগ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
১৯ বছর ধরে সম্মেলনহীন লালমনিরহাট সদর আ.লীগ

লালমনিরহাট: নিজেদের কোন্দলের কারণে দীর্ঘ ১৯ বছরেও সম্মেলন করতে পারেনি লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ক্ষমতায় থেকেও মাঠ গোছাতে ব্যর্থ হচ্ছে দলটি।

লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভায় তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। যার মধ্যে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলা মিলে লালমনিরহাট এক আসন, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট দুই আসন এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলা নিয়ে লালমনিরহাট তিন আসন গঠিত। একটি মাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকেও এ উপজেলার মাঠ গোছাতে পারেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নিজেদের কোন্দলের কারণেই দীর্ঘ দিনেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে।

সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাবেক সংসদ সদস্য প্রায়ত প্রকৌশলী আবু সাঈদ দুলালকে সভাপতি ও শফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর কোনো সফল সম্মেলন করতে পারেনি দলটি।

নিজেদের কোন্দলের কারণে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া দলটির একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন।

তবে ২০১৭ সালে আব্দুল লতিব সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিজেদের কোন্দলের কারণে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সে সম্মেলনও সফল হয়নি।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেও কেন্দ্রীয় নেতারা গোলাম মোস্তফা স্বপনকে সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা প্রায়ত জহুরুল হক মামুনকে সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু তা কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখের ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। জেলা আওয়ামী লীগ এ ঘোষণাকে সমর্থন না দেওয়ায় তা সফলতার মুখ দেখেনি।

পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের ভাতিজা সাবেক ছাত্রনেতা এরশাদ হোসেন জাহাঙ্গীরকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এমন ঘোষণার পর আবারও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ায় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় দুই গ্রুপ। বেশ কিছু দিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ফলে এ কমিটিও সফলতা দেখেনি।

পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক সংসদ অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমিকে আহ্বায়ক করলে তাও সফলতা পায়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েও উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হওয়া নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে পণ্ড হয় এ প্রচেষ্টা।

সর্বশেষ কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের ৯ অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হলেও ঈদে মিলাদুন নবীর ছুটির কারণে তা স্থগিত হয়।

বর্তমানে দুইটি গ্রুপেই রয়েছেন সভাপতি ও সম্পাদক পদে একাধিক পদপ্রত্যাশী। যার মধ্যে সভাপতি পদ প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সুজন, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম, ব্যবসায়ী সাখওয়াত হোসেন সুমন খান। সম্পাদকের তালিকায় রয়েছেন- জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর এবং সাবেক ছাত্রনেতা এরশাদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র ও যুবনেতা বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে জেলার চারজন নেতা কেন্দ্রকে ভুল তথ্য দিয়ে  নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন। জেলার এ চার নেতার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে পারলে আগামীতে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত করা সম্ভব। নয়তো এ উপজেলায় বিএনপির দুর্গ ভাঙা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।  

জেলা আওয়ামী লীগে যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক এ নিয়ে কোন কর্ণপাত করছেন না। দীর্ঘ দিন ধরে কমিটি না থাকায় সদরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। দ্রুত বিভেদ ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির আহ্বান জানান এ নেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) কথা হয়েছে। জাতীয় সম্মেলন শেষে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সদর উপজেলা সম্মেলন করা হবে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, কমিটি ছাড়া দল কখনওই চাঙ্গা হয় না। সামনে জাতীয় সম্মেলন শেষ হলেই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।