ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কবিতা

দু’টি কবিতা | আশরাফুল কবীর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
দু’টি কবিতা | আশরাফুল কবীর দু’টি কবিতা | আশরাফুল কবীর

নিশীথিনী-১

কালের প্রহরী হয়ে জেগে ওঠো তুমি নিশীথিনী। বুকে পুরে রাখো কার্র্তিকের নিদারুণ সুখ। শরতের অন্তিম লগ্নে এসেও তোমার গল্প ফুরোয় না, শুধু বাঁক নিয়ে গতিপথ বদলে যায়।

রঙের আস্তরণে পাল্টে দেয় ফেলে আসা আষাঢ়ের ঝাড়-ফেস্টুন। জীবনীশক্তির তাড়নায় প্রচণ্ড শীতের ওমেও বের করে দাও জন্মসূত্রের সন্ধানে হামাগুড়ি দিতে থাকা ছটফটানো নোনাদ্রবণ।

বিষন্ণ মাদকতায় ভরপুর হওয়া তোমার অদ্ভুত আর অস্ফুট সে চাহনি! বাসন্তী মুগ্ধতার খেয়ালে এখনো ধরা দিয়ে যায়। তোমার প্রশস্তিতে প্রত্যাশার এক সকাল ঝুড়ি নিয়ে উপচে ওঠে শেষ বিকেলের আয়েশি রোদ্দুর। সে কীর্তনে আমিও যোগ দিতে চাই, জেগে উঠতে চাই আমার অন্তরাত্মার কবিতাপত্তর নিয়ে। প্রবল অনিচ্ছায়ও আমি আনমনে চাই আমার কবিতায় ধরা দিয়ে যাক এক টুকরো পৌষের সিম্ফনি।  

জেগে ওঠো নিশীথিনী। ভাঙিয়ে দিয়ে যাও অপূর্ব ঘুমের সুদীর্ঘকাল। সম্মোহনে এ যেন না হয় আরেকটি নতুন হাইবারনেশন। জাগ্রত হয়ে উঠুক ভোর; জাগ্রত হয়ে উঠুক প্রহেলিকাময় শেষরাত্রির আনন্দ ইতিহাস। ভুঁইচাপাটি এখনো জানতে পারেনি সে অনেকের মধ্যমণি হয়েই আছে। খানিকটা আগেও পাল উড়িয়েছিল মধুমাখা গন্ধ বিভ্রম। আর্তনাদ করে বলেছিল, আবারো মাখিয়ে নাও আমায় তোমার সর্বাঙ্গে। আমার হয়ে উত্তর দিয়েছিল ঝুলতে থাকা চাঁদ। দূর-দ্বীপাঞ্চলে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল লোক-লোকান্তরের স্বাক্ষী হয়ে থাকা শেষ অশ্বত্থ। এটাও কি সম্ভব? এখন যে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে, রচতে হবে নতুন ইতিহাস। পেছন ফেরার প্রশ্নটি তাই খুবই ঘা ঘিনঘিনে, অনেকটাই আনহাইজেনিক।  

কালের প্রহরী হয়ে জেগে থেকো তুমি। ঘিরে ধরে রাখো মসৃণ-অমসৃণ আর বন্ধুর সব আবেগ। মাঝামাঝি পার হয়ে যাক আরো হাজারখানেক প্রতীক্ষার নতুন বছর। শুভ্রতা ছড়াক সভ্যতার আস্তাবলে; শুভ্রতা ছড়াক জমাটবদ্ধ হয়ে থাকা তোমার মাধুর্যতা। তোমার ইতিকথায় তৈরি হোক আরেকটি বসন্ত-প্লাবন। আটলান্টা হয়ে আছি অপেক্ষার একবুক ভার স্কন্ধে নিয়ে। তুমি জেগে থেকো অধরের ফুল হয়ে, ফুটে ওঠো বসন্তমঞ্জরীর সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে। তোমার সান্নিধ্যে খানিকটা খেলা করে যাক ভুল পথে চলে আসা কোন বাউল-সন্ন্যাস। তার একতারায় অর্ঘ্য দিয়ে যাক মন উজাড় করা আরো দুয়েকটি লাইন।  

কবিতা নগরে একদিন

মাঝে মাঝে কিছু কবিতার জন্ম হয়ে যায় লাল গোলাপহীন বাগানে। কিছু কবিতার জন্ম হয় খোলা জানালার কপাটে আর কিছু সুবিন্যস্ত পাখির ডানায়। কিছু কবিতা হয় শ্রীহীন, পেঁচানো কিংবা বাউণ্ডুলে। মাঝে মাঝে কবির প্রিয় কবিতা-নগর হয়ে যায় নিরেট কবিতা বিহীন।  

কবিতার প্রয়োজন হয় প্রয়োজনীয় পরিসর, সবুজ ঘাসে জমে থাকা শিশিরবিন্দু, কুয়াশাভরা হিম-প্রত্যূষকাল, রহস্যময় বনভূমি ও মাংসের আলিঙ্গন। কবিতা নয় শুধু সূর্যরশ্মির প্রবেশ পথ বর্ণনা করবার, খোলনলচে পাল্টানো রঙিন ঘুড়ির দীপ্ত ওড়াউড়ি বর্ণনা করবার অথবা চোখ ধাঁধানো বিভ্রম বর্ণনা করবার। কবিতা হয় কবিতা, তা যেভাবেই হোক। কবিতা বর্ণিত হয় কোনো এক রহস্যময় কুয়োর গভীরে নেমে যেতে যেতে, শৈবালপূর্ণ জলার জল আকুণ্ঠ পান করতে করতে কিংবা প্যাঁচালো কোনো শৈলশিরার আলপথ দিয়ে বয়ে যেতে যেতে। কবিতায় যদি মরুভূমির আলোর নাচন বর্ণিত হয় তাহলে সাবপ্লটে প্রয়োজন হয় বালুকারাশির উড়ে চলে যাওয়ার কোনো দৃশ্য, স্বপ্নাচ্ছন্ন ঝর্ণার ছুটে চলা কিংবা সাদা তুষারের হিমমগ্নতা। কবিতা আসে কবিতা যায় কবিতা হয় সাবকনশাসে; কোনো ষোড়শীর বায়োস্কোপে যেন কন্ঠরূদ্ধভাবে হাসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ