ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য দল

প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা অজয় রায় স্মরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা অজয় রায় স্মরণ স্মরণ সভায় কথা বলছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ অজয় রায়। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। একইসঙ্গে ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবতাবাদী হিসেবে কাজ করে গেছেন জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। এই মানুষটিকে স্মরণ করে তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার হলে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এ স্মরণ সভা।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী। অজয় রায়কে নিয়ে কথা বলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অজয় রায়ের সহধর্মিনী জয়ন্তী রায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা যারা ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন করতাম, তখন অগ্রজ হিসেবে আমাদের পথ দেখাতেন অজয় রায়। একইসঙ্গে শেখাতেন হাতে-কলমে। বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন লেখার মধ্য দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের পথ দেখিয়েছেন। সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজটা বর্তমানে অমানবিক হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আগামী ভবিষ্যৎ যে কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে সমস্যাগুলো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এমন একটা সময়ে অজয় দার লেখনি আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করি। কেননা, তিনি লেখনীর মাধ্যমেই আমাদের বিভিন্ন সময়ে পথ দেখিয়েছেন।

ডা. সারোয়ার আলী বলেন, অজয় রায় সবসময় সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। সমাজতন্ত্র তার আদর্শ ছিল এবং আমৃত্যু তিনি এটাতেই আস্থা রেখে গেছেন। এছাড়া সামাজিক ক্ষুধাপীড়িত মানুষগুলোর মানব মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে তত্ত্ব জেনে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেছেন তা নিবারণের জন্য। তার লক্ষ্য ছিল মানবিক সমাজ গঠনের। একজন মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন সবার কাছে। কেননা, মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন উচ্চমানের।

তিনি বলেন, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মত দেশেও আজ অনেক বড় সমস্যা। দেশ একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠন এবং প্রশাসনের দ্বারা সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এমন একটি সময় অজয় দার লেখনীতে উঠে আসতে পারলে আমরা অনেকেই ভালো কিছুর পথ দেখতে পেতাম!

জয়ন্তী রায় বলেন, তিনি সবসময়ই সাধারণ মানুষকে সাহায্য করে গেছেন। প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তিনি সাধারণ মানুষের জন্য রাখতেন। যা লেকের পাড়ের দোকানগুলোতে বিলিয়ে দিতেন। চাইলেই তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ চালাতেন। আর রাজনীতিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি কখনও হতাশ হননি। বরং কাজের নিষ্ঠা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি এই কাজটি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে গেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে জিয়াউদ্দিন তারেক আলী বলেন, মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন অজয় রায়। সম্প্রদায়-ক্লাস এর বাইরে গিয়ে তিনি মানবতাবোধ তৈরি করেছেন মানুষের মধ্যে। সবার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। দেশের সুস্থ একটা ধারায় একটা সামাজিক আন্দোলন করে গেছেন তিনি মানবমুক্তির জন্য। তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। আর গণতন্ত্রকে ভালোবেসেই মানবমুক্তির কথা বলে গেছেন আজীবন।

আয়োজনে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, ডা. শাহনেওয়াজ হোসেন, ন্যাপের সংগঠক আব্দুস সাত্তারসহ বিশিষ্টজনেরা।

আয়োজনের প্রথমেই অজয় রায়ের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ওয়ার্কার্স পার্টি এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এসএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ