ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

অহেতু উত্তেজনা নয়, চাই ধৈর্য ও অপেক্ষা

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২
অহেতু উত্তেজনা নয়, চাই ধৈর্য ও অপেক্ষা

কোনও এক দার্শনিক বলেছিলেন প্যাট্রিটিজম ইজ দ্য লাস্ট রিসোর্ট অফ এ স্কাউন্ড্রেল। কথাটার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘দেশগ্রেম হচ্ছে জোচ্চোরের শেষ আশ্রয়স্থল’।



অদূরদর্শী দেশপ্রেম বা মমত্ববোধের প্রতি এই কটাক্ষ বাঙালির জীবনেও সত্য। যখন তার আর কোনও অবলম্বন থাকে না তখন দেশের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে টানাটানিতে মত্ত হয়ে ওঠে। এ দায় বা এ জাতীয় আচরণে প্রবাসী বাংলাদেশিরাই তুঙ্গে। তাদের খুব একটা দোষও দেয়া যায় না। অদর্শনজনিত প্রেম সব সময়ই প্রবল। দীর্ঘ অদর্শনে দেশের প্রতি যে গভীর মমত্ব বা প্রেম সেটাই তাদের কুরে খাচ্ছে। পার্থক্য এই আমপ্রবাসী বা সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ঘন ঘন স্বদেশ ভ্রমণ আর রেমিটেন্সেই সীমাবদ্ধ। প্রতিভাবানরা নিজে জ্বলছেন দেশবাসীকেও জ্বালিয়ে মারতে যে যার অস্ত্র নিয়ে মুখিয়ে আছেন। কেউ কলম কেউ দেশীয় দলের শাখা-প্রশাখা কেউ বা ব্যবসা খুলে এই সব কাজে ব্যস্ত। নিজেকেও আমি এই প্রক্রিয়ার একজন বিবেচনা করি। আমরা বুঝি না বা বুঝতে চাই না  ‘যার কাজ তারে সাজে। সরকার বা বিরোধী দলের সমালোচনা সহজ।

গোলাম আযম ইস্যুতে দেশে বিদেশে বয়ে যাওয়া ঝড় দেখে এ কথাগুলোই সত্য মনে হচ্ছে। গোলাম আযম ও বাংলাদেশ মুখোমুখি বিপরীত দুই বাস্তবতা। চল্লিশ বছর তাঁদের সহাবস্থানই তো আশ্চর্যের। বিস্ময়ের হলেও এটাই সত্য। আরো সত্য এই গোলাম আযমের পক্ষে রাস্তায় মাতম করার জন্য যুবশক্তি আছে। দেশব্যাপী নাশকতা করার মত অপকৌশল বাস্তবায়নের টেকনিক আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের শক্তিও আছে তাদের। ড: কামাল হোসেনের মত মানুষের কথাও আজ পরিবর্তিত। বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে শুধু চেতনা বা উত্তেজনা ছড়িয়ে সর্বনাশ ব্যতীত অন্য কোন কিছু ঘটানো যায় না। গোলাম আযমের দীর্ঘ বসবাস ও জামাতের রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত হওয়া পেছনে  আওয়ামী লীগের ভূমিকাও কম কিছু নয়। সুযোগ মত অবস্থা বুঝে হয় নীরব অথবা পরোক্ষভাবে মদত দিয়েছে তারা। অন্য দিকে বিএনপিতো তার পরম মিত্র। গোলাম আযমের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বাধীনতার বিতর্কিত ঘোষক আর খালেদা জিয়ার স্বামী। চার খলিফার এক খলিফা সিরাজ ভাইসহ (শাহজাহান সিরাজ) অজস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি কি তার বিচার চায়?
তারপরও কালের স্রোতে, তথ্যায়ন আর বিশ্বব্যাপী বদলে যাওয়া জনমত ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের কারণে গোলাম আজম আজ কারাগারে। এই কৃতিত্ব যতটা রাজনীতির তার চেয়ে অনেক বেশি সময়ের। বিশ্বব্যাপী যে নতুন ধারার আধুনিক ও মুক্ত দুনিয়ার প্রগতি সেটির খপ্পরে পড়েছেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গং।

বলা বাহুল্য, প্রকৃতিও ছেড়ে কথা বলে না। অপরাধ বা পাপও চিরদিন ছাইচাপা থাকে না। গোলাম আজমের বিচার হবেই। সে দৃষ্টিকোণ বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বাস্তবতা নিয়ে কিন্তু কেউ বলছেন বা লিখছেন না। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি দেশের ক্ষমতা বলয় বা রাজনীতির চোখে পড়ার জন্য লেখালেখি বা বাক্যালাপে দেশপ্রেম তাই সত্যি সন্দেহের হয়ে উঠছে, এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে দেশে সরকার, রাজনীতি বা বিচারকে হেদায়েত করা সাজে না। সময় এখন ধৈর্য্ ও অপেক্ষার । বহু রক্তক্ষয় ও প্রতীক্ষার পর শুদ্ধতা ও মুক্ত স্বদেশ চাইলে এর বিকল্প দেখছি না। দয়া করে বিচারকে তার নির্দিষ্ট স্রোতে প্রবাহিত হতে দিন। সেই দেবে যোগ্য প্রত্যুত্তর। খামোখা মাতম করেই আজ আমাদের এই দূর্দশা।

সিডনি থেকে
dasguptaajoyehotmail. com

বাংলাদেশ সময় ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।