ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১২
জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান

সিডনি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভর্তি হওয়া ২৭৫৫ জন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে উন্নয়ন ফি বাবদ মাথাপিছু ৫০০০ টাকা আদায় করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয় হবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়তি অতিরিক্ত বোঝা হচ্ছে বলে এর প্রতিবাদে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছেন।

ঠিক একই সময়ে ১০ কোটি টাকা খরচ করে চিটাগাং রোড মার্চ করছেন বিরোধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া! ৫৪ জন সফর সঙ্গী নিয়ে বিশেষ বিমানে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী আনতে আগরতলা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! এসবের ব্যস্ততার কারণে পুরান ঢাকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে দেশের বড় দু’দলের প্রধান নেত্রীর যেন কোনও গরজ বা মাথা ব্যথাও নেই!

এদিকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলও নেই এই আন্দোলনের সঙ্গে। তবে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু গুণ্ডা আন্দোলন দমনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেছে! এমন একটি পরিস্থিতিতে নিজেদের সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিছু বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী আর অনলাইনের স্বাধীন ব্লগাররা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করছেন। সরকার যত নির্লিপ্ত ভাব দেখাচ্ছে তত বেশি সাধারণ ছাত্রছাত্রী এই আন্দোলনের পক্ষে আর সরকারের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এতসব ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চুপ থাকলেও এই আন্দোলন নিয়ে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যথেষ্ট দায় আছে। এর আগের আন্দোলন থামাতে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় জগন্নাথ, কুমিল্লাসহ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কোথাও এক পয়সাও বেশি দিতে হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে জগন্নাথ কর্তৃপক্ষ। সে কারণে সেখানকার সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। আর এসবের জন্য প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বা জগন্নাথের উপাচার্যকে না, গালি দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে! সেখানে এখন আর কোনও স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই।

এবারের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এ, বি, সি ও ডি ইউনিট থেকে যথাক্রমে ১৪,৪০০; ১৩,৪০০; ১৩,০০০ ও ৯,২০০ টাকা নিচ্ছে। এর সঙ্গে উন্নয়ন ফি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে মাথাপিছু ৫০০০ টাকা। এর মানে উন্নয়ন ফিসহ ভর্তির সময় সব নতুন ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে যথাক্রমে ১৯,৪০০; ১৮,৪০০; ১৮,০০০ ও ১৪,২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ হার অনেক কম। শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সঙ্গে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় বেশি যে টাকা দাবি করছে সে বিষয়টিও ঠিক করে দিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২৭/৩ ধারা অনুসারে পরবর্তী দুই বছরের জন্য উন্নয়ন বাবদ সরকার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাকি ১৬ কোটি টাকা নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আয় করে নিতে বলেছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আর অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আন্দোলনের সূত্রটি সেখানেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় এবং সাম্প্রতিক মনিপুর স্কুলের ঘটনায় দেশে শিক্ষা বাণিজ্যের বিষয়টিও সামনে এসেছে। এ নিয়ে অবশ্য যারা কথা বলছেন তারা আধাআধি বলছেন। রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়ে বলছেন না। রাষ্ট্র যদি মুক্তবাজার অর্থনীতিকে কবুল করে, তাহলে এমন একটি রাষ্ট্রীয় চরিত্রের দেশে শিক্ষাসহ সমুদয় সার্ভিসের বিষয়টিও বাণিজ্যিক। আমাদের সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় জগাখিচুড়ি অবস্থার কারণেই এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সাফ কথাবার্তা বলার নৈতিক অবস্থান নেই। রাষ্ট্র মুক্তবাজার অর্থনীতকে কবুল করলেও আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা এসব একজন নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র নাগরিকদের এসব মৌলিক অধিকার পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সরকার সে কথা বলেই শপথ নেয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো কল্যাণ রাষ্ট্রগলো মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চললেও এসব মৌলিক অধিকার পূরণের নিজস্ব অবকাঠামো তৈরি করে নিয়েছে। যেমন এদেশের পাবলিক স্কুলগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নাগরিকদের শিক্ষা ফ্রি হলেও শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ভলানটারি কন্ট্রিবিউশন নামের একটি ফি নেওয়া হয়। এদেশের হাইস্কুল ক্লাস সিক্স থেকে শুরু হয়। পাবলিক স্কুলগুলোর ক্লাস সিক্সের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের প্রদেয় ভলানটারি কন্ট্রিবিউশনের স্কুল ঠিক করে দেওয়া টাকার পরিমাণটিও ২০০ ডলারের বেশি। কিন্তু সরকার যেহেতু কম আয় সম্পন্ন গ্রুপের অভিভাবকদের বাচ্চা লালনপালনের জন্য সাপ্তাহিক একটি টাকা, বছরে একবার কম্পিউটারসহ শিক্ষা উপকরণাদি কেনার টাকা অভিভাবকদের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দেয়, এসব নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ নেই।

এদেশে দ্বাদশ শ্রেণীর পর টেফ তথা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় নামমাত্র টিউশন ফি দিয়ে নাগরিক ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করতে পারেন। টেফের সেমিস্টার ফি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে যেখানে ৬-৭ হাজার ডলার নেওয়া হয়, অস্ট্রেলিয়ানদের সে ফি ৬-৭ ডলারের মধ্যে। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে ফি হেল্প নামের শিক্ষাঋণের বিনিময়ে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ট্যাক্স ফাইল নম্বর নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই ফি হেল্পের ব্যবস্থা করে। আবার সারা বছর ফটোকপিসহ নানান শিক্ষা উপকরণ যে ক্লাসে দেওয়া হয় এগুলোর জন্য বছরের শুরুতে সাতশ ডলারের মতো একটি ফি নেওয়া হয়। কেউ একবারে সেটি দিতে অসমর্থ হলে তা মাসিক কিস্তি করে দেবার ব্যবস্থাও করা হয়। কর্মজীবনে যাবার পর তার আয়ের ভিত্তিতে কিস্তি করে কেটে নেওয়া হয় ফি হেল্পের টাকা। পড়াশুনা চলাকালীন সরকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে অস্টাডি নামের সাপ্তাহিক ভাতা, অর্ধেক ভাড়ায় যানবাহনে চলাচলের ব্যবস্থা করে। সে অর্থে এদেশের কোিও সার্ভিসও ফ্রি না। রাষ্ট্র যেসব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সেটিও তার শিক্ষাসহ বিভিন্ন বাজেট থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছে। একদিকে দেওয়া সুবিধামতো আরেকদিকে নিয়ে নেওয়ার এই পদ্ধতিটি নিয়ে জুলুমের অভিযোগ নেই। জগন্নাথে ফি আদায়ে বাধ্য করার মতো সরকারি ছাত্রসংগঠন নামধারী গুণ্ডা ভাড়া করার মতো শিক্ষক নামের তস্কর শ্রেণীর লোকজন এবং গুণ্ডা হতে ইচ্ছুক ছাত্রও এদেশে নেই বা তা ভাবনারও অতীত। শিক্ষাকে সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে রাখলেও আমাদের রাষ্ট্রের আচরণে এগুলোকে নাগরিক অধিকার হিসেবেও ভাবতে শেখায়নি। যা দেয় বা এর চেয়ে একটু কিছু বেশি দিয়েছে দেখলে এমন ভাব দেখায় যেন দয়া করছে অথবা পৈত্রিক জমিদারি-মিরাশদারির আয় থেকে দিচ্ছে!

আবার শিক্ষা ক্ষেত্রে দিনে দিনে বিশেষ একটি বৈষম্য গড়ে উঠলেও সীমিত ইচ্ছা-আয়ের মধ্যে বাংলাদেশেও যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক উন্নতি ঘটেছে সেটিতো সত্য। সরকার তার মাথভারী প্রশাসন, রাজনৈতিক চোর-চোট্টাদের দুর্নীতি কমাতে পারলে আরও অনেক কিছু করে দেওয়া যেত। আমরা আমাদের শৈশবে যেসব সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করে বড় হয়েছি দেশের আজকের সুবিধাভোগীরা এখন আর নিজেদের বাচ্চাকাচ্চাদের সেসব স্কুলে পড়ান না। উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ওঠা কেজি স্কুল, বিশেষায়িত স্কুলে বাচ্চাদের পড়ান। আর আমাদের স্মৃতির সেসব সরকারি স্কুলে এখন মূলত পড়ে বাড়ির গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারের বাচ্চাকাচ্চারা। কিন্তু স্কুলে সরকারি উদ্যোগে বই দেওয়া হচ্ছে, ক্লাস ফাইভ, এইটে সব স্কুল মিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে, বাচ্চারা ভালো করছে, এসবতো অগ্রগতি। মেয়েদের অবৈতনিক পড়াশুনার সুযোগ বাড়াতে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে নারী শিক্ষায়। কিন্তু পাশাপাশি যে সমস্যাটি প্রকট আকারে বেড়েছে তা হলো শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য আর প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক দুর্নীতি।

‘এইম ইন লাইফ’ বা ‘জীবনের লক্ষ্য’ নিয়ে রচনা লিখতে দিলে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক এমন আমাদের খুব কম শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। বেশিরভাগই  প্রতিযোগিতায় অন্যত্র সুযোগ না পেয়ে শিক্ষকতায় আসছেন। মেধার ভিত্তিতে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে রাজনৈতিক আনুগত্য, তদবির এবং টাকার বিনিময়ে! পুলিশসহ অন্যসব সেক্টরের চাকরির মতো ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়ে যে শিক্ষক ক্যারিয়ার শুরু করতে বাধ্য হচ্ছেন সে শিক্ষকের কাছে আমরা কী স্বাভাবিক সার্ভিস আশা করতে পারি? এলাকার এমপি বা জনপ্রতিনিধিকে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মানিত করতে গিয়েও উল্টো সৃষ্টি করা হয়েছে আরেক নৈরাজ্যের! আজকের দেশীয় রাজনৈতিক কৃষ্টি-কালচারের কারণে জনপ্রতিনিধি (!) হতে বিস্তর টাকা খরচ করেন অথবা খরচ করতে হয়। এরপর যেখানে ঢোকেন সেখানে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলসহ লাভ গুনাটাই একটা স্বাভাবিকতা হয়ে দাড়িয়েঁছে! সেটি স্কুল-কলেজ হোক বা পাবলিক টয়লেট, কোনকিছুর বেলাতেই তাদের কোনও অনীহা অথবা নাকউঁচু স্বভাব নেই। আমাদের সময়ের সততার প্রতিচ্ছবি শিক্ষকদের দেখতাম সংসার খরচের টাকা জোগাড়ে ব্যাচ করে প্রাইভেট  পড়াতেন। এখন তস্কর শ্রেণীর শিক্ষক নামধারীরা প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নম্বর ঠিকমতো দেন না। পারলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও দিয়ে দেন! এসব সত্ত্বেও এখনও একদল ভালো শিক্ষক আর বিরল বিশেষ মেধাবী-পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের কারণে প্রতিটি পরীক্ষার পর সৃষ্টি হচ্ছে ব্যতিক্রমী কিছু সাফল্যের গল্পের।

রাজনৈতিক, মিলিটারি তোষণনীতির কারণে শিক্ষাক্ষেত্রের অনেক বৈষম্যের বিষয়টিও সরকারিভাবে সৃষ্টি করা। যেমন ক্যাডেট কলেজের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো করছে, কিন্তু সমান কোর্সের অন্য সরকারি-বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনা। অথচ সামরিক বাজেটের বাইরে প্রচলিত শিক্ষা বাজেট থেকেই ক্যাডেট কলেজগুলোকে তার চাহিদামতো টাকা-পয়সা দিতেই হচ্ছে। সারাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। তুলনামূলক স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা এসবে পড়ছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায়ে সুযোগ না পেয়েও এগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী আসছেন। অনেক অভিভাবকের এসবের টিউশন ফি জোগাড়ের সামর্থ্য নেই। নানাভাবে ম্যানেজ করছেন অথবা ম্যানেজে বাধ্য হচ্ছেন। ডোনেশনের নামেও বিশেষ একধরনের বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্যও হচ্ছে। সে কারণে ভিকারুননিসা বা মনিপুর স্কুলসহ অনেক স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে ঢুকতে অনেকে অনেক টাকাকড়ি বিনিয়োগ করেন! অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের টিউশন ফি আবার বিদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সমান অথবা বেশি। কিন্তু বিদেশে গেলে যে কিচেন হ্যান্ড বা নানা গুডজব পরিশ্রম করে টাকা কামানো লাগে, দেশে থাকলে বাবা-মার হোটেলে থেকে খেয়ে, তাদের টাকায় রাজকীয়হালে পড়া যায়। বেশি টিউশন ফি হলেও অনেকে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনাকে বিশেষ আভিজাত্য মর্যাদার মনে করেন।

কিন্তু এখনও দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবলিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পড়ছেন তা শতভাগ সত্য। সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষিকা, সবচেয়ে বেশি উন্নত শিক্ষা উপকরণ, পরিবেশ যে পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেই আছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় সত্য ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বুয়েটে পড়াশুনার সুযোগ পাওয়ার পর একজন শিক্ষার্থীর মনে সত্যি সত্যি ধারণা-বোধের সৃষ্টি হয়, শিক্ষা যে তার সাংবিধানিক অধিকার। আর যারা টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ঢুকে তারা সেটিকে এবং নিজেদের শিক্ষা বাণিজ্যের পণ্য হিসেবে ভাবতে শিখে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যে বোধ থেকে অন্যসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান সুবিধার দাবিতে যে আন্দোলনটি করছেন, সে ধারণাটিও তাদের দিয়েছে রাষ্ট্র। স্বয়ং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ তিনি এক বক্তৃতায় বলেছেন, তার সরকার ব্যবসা করতে ক্ষমতায় আসেনি। যদি তাই হয় তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে অন্যসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান সুযোগ-সুবিধার দাবিতে জগন্নাথের ছাত্রছাত্রীদের চলমান আন্দোলনের দাবি মানতে হবে। এ আন্দোলন দমাতে যারা ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডা ব্যবহার করেছে সেই শিক্ষক-প্রশাসক এবং গুণ্ডাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা মানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায়। কোনও গুণ্ডার নেতৃত্বে বা সঙ্গে থেকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক চলতে পারেনা। প্রধান লেজুড় সংগঠনগুলোর নির্লিপ্ত অবস্থার মুখে সেখানকার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, স্বাধীন ব্লগারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও লাল সালাম। সবাই আরও বিপুল সমর্থন দিন জগন্নাথের ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনে। একটি দৃষ্টান্তের সোনালি সকাল হোক। যাতে এমন আন্দোলনের অপমৃত্যু না হয়। যেন বারবার এভাবে ন্যায্য সাংবিধানিক দাবিতে আন্দোলন করতে না হয়। সারাদিন যারা নানান বুলির ফানুস উড়াতে পারেন আর একটি বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ ন্যায্য দাবির সুরাহা করতে এবং এরপক্ষে দাঁড়াতে না পারেন তাহলে ইনাদের ক্ষমতায় পড়ে থাকতে আর উনাদের ক্ষমতায় আসতে কেউ হাতে পায় ধরেনি।

ফজলুল বারী: সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।