ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একজন ডিম বিক্রেতা ও ছাত্ররাজনীতি

আহমেদ আরিফ, অতিথি লেখক/পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১
একজন ডিম বিক্রেতা ও ছাত্ররাজনীতি

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ছেলেরা চট্রগ্রামে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে শতশত হকারের দোকান। ছাত্রলীগের তান্ডব থেকে রক্ষা পায়নি সেদ্ধ ডিম বিক্রেতাও।

বাংলানিউজটুয়েন্টফোরের নিউজে  ডিম বিক্রেতার কয়েকশ ডিম রাস্তায় ছুড়ে ফেলার লাইনটি দেখে মনে পড়ে গেল এক সেদ্ধ ডিম বিক্রেতার কথা।

যিনি ফার্মগেইটে ডিম বিক্রি করে দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেন। যেদিন ডিম বিক্রি কম হত সেদিন একবেলা খাওয়া হতো না ডিম বিক্রেতার। ছাত্রলীগ চট্রগ্রামের যে ডিম বিক্রেতার শতশত ডিম রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে সে বিক্রেতাকে না জানি কত বেলা না খেয়ে থাকতে হবে। বাসায় অপেক্ষায় থাকা পরিবারের সদস্যদের আজকে যদি না খেয়ে থাকার কষ্ট কি কোনওদিন বুঝবে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতারা? জানি এই প্রশ্নের উওর দেওয়ার কেউ নেই।

কি দোষ ছিল গরীব শতশত হকারের? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে হকারের সাথে তর্কাতর্কি হয়েছে সে হকারের দোষ আছে । কিন্তু ফোন করে অন্যদের ঢেকে এনে শতশত হকারের উপর কেন নির্যাতন চালাতে হতে হবে? জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, অস্থির দ্রব্যমূল্যের বাজারে আজকে শত শত হকারের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে কতবেলা অনাহারে কাটবে এই গরীব হকারদের? এই হকাররা আছে বলেই এখনো মধ্যবিত্ত এবং নিম্ম মধ্যবিত্ত  মানুষ এখনো তুলনামূলক সস্তায় শীতের কাপড় কিনতে পারে ; ঈদে-পূজায় সন্তানের গায়ে কম দামে সুন্দর জামা কিনে দিতে পারে।

যে ছেলেগুলো শতশত হকারের ছোট ছোট দোকানগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সে ছেলেগুলোর পরিচয়ের আগে ছাত্র। এরপর তাঁদের পরিচয় হওয়া উচিত  ছাত্রলীগ। কিন্তু, যে দলই ক্ষমতায় থাকে ঐ দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর ছাত্রদের নিজেদের ছাত্রের আগে দলীয় কর্মী পরিচয় দিয়েই গর্ববোধ করে । কি দরকার এমন ছাত্ররাজনীতির যে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের  ছাত্র পরিচয়ের আগে রাজনৈতিক পরিচয়টাই বড় করে দেয় সবার আগে? ৫২ কিংবা ৬৯ কিংবা ৭১ এর ছাত্রদের ছাত্ররাজনীতি আর আজকের ছাত্ররাজনীতির এত ব্যবধান কেন?

৯০ পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর ছাত্রসংঘটগুলোর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ছাত্ররাজনীতি সাধরণ মানুষের মনে এতটাই ঘৃণা ও আতংকের সৃষ্টি করে যে, মা-বাবার সন্তানদের কলেজে ভর্তি করানোর আগে বলে `যে ছেলেরা রাজনীতি করে ঐসব গুণ্ডা, মাস্তানদের সাথে মিশিস না` । অপ্রিয় হলেও সত্য যে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ছাত্রদের কারণে মা-বাবারা গর্ব করত আর এখনকার বাবা-মায়েরা ঘৃণা করে ছাত্ররাজনীতিকে।

আমাদের সুশীল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবিরা কিছু হলেই কলাম লিখে, গলাবাজি করে বক্তৃতা দিয়ে আলোচনার ঝড় তোলে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির কারণে আজকে যে একজন ডিম বিক্রেতার জন্য কেউ লিখবে না। শতশত হকারের জন্য কেউ লিখবে না। কোথাকার কোন ডিম বিক্রেতা কিংবা কোথাকার কোন হকার রহিম, ছলিমরা না খেয়ে থাকলে কার কি!

বর্তমান জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগ যেভাবে সারাদেশে আতংক সৃষ্টি করেছে তা বন্ধ করতে না পারা বর্তমান সরকারের সবচয়ে বড় ব্যর্থতা এবং এই ব্যর্থতা যে আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে না এই ব্যাপারটি আওয়ামীলীগ সরকার বুঝতে না পারলেও আমার মত আমজনতা রাস্তা-ঘাটে চলতে গিয়ে বেশ বুঝতে পারে।

না, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব না ছাত্রের লেবাসধারী ছাত্রদের গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে । কারণ , আমার মত আমজনতার আবেদনে যদি কাজ হত তাহলে ছাত্রলীগ দিনদিন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারত না। আজকে ঘটত না  এমন ঘটনা। শুধু বলব, সময় বড্ড কঠিন জিনিস। একদিন না একদিন সবকিছুর হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়।

[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।