ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রুমানা মনজুরকে নিয়ে বক্তব্য বিকৃতির প্রতিবাদ

শ্যামলী শীল ও তাসলিমা আখতার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১১
রুমানা মনজুরকে নিয়ে বক্তব্য বিকৃতির প্রতিবাদ

ঢাকা: নির্যাতিত নারী রুমানা মনজুরের পক্ষে দাঁড়ানোর ঔদ্ধত্য সহ্য করতে পারেনি নারীবিদ্বেষী জনৈক ইব্রাহিম শাহাদাত এবং তার গংরা। আর তাই বেপরোয়া হয়ে বিপ্লবী নারী সংহতির প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে লেখা স্লোগান বিকৃত করে ফেসবুক ও সোনার বাংলাদেশ নামের ব্লগে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

আরও কোথায় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এই প্রচারণা চালাচ্ছে আমাদের জানা নেই। তবে আমরা নিশ্চিত এরা সবাই নারীকে প্রতিবাদী রূপে দেখে অসহ্য হয়ে পড়েছে। তাদের গায়ে ফোস্কা পড়েছে, যখন তারা দেখেছে নিজ স্বামী তার স্ত্রীর চোখ উপড়ে ফেলছে আর তাতেও প্রতিবাদ। তারা মনে করে ‘নারীর শরীর-মন সবকিছুর মালিক যেহেতু স্বামী কিংবা পুরুষ, সেহেতু তাকে যা খুশী অত্যাচার-নিপীড়ন করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার তার আছে, এতে এতো হৈ চৈ কীসের’।

আর যদি হৈ চৈ বা আন্দোলন হয়, তবে আন্দোলনকারী কিংবা প্রতিবাদকারীদের বিরূদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার ও প্রলেপ লাগিয়ে বাজারে ছড়িয়ে নিজের অপরাধ ঢেকে রাখা এবং নতুন অপরাধের জন্ম দিতে তারা কুণ্ঠা বোধ করে না। আমরা বিপ্লবী নারী সংহতি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এই সাইবার ক্রাইম অপরাধীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানাই।
Rumana-monzur
আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে থাকবেন অনলাইন সংবাদ সংস্থার খবরে ব্যবহৃত একটি ছবিকে ফটোশপের মাধ্যমে বিকৃত করে কীভাবে নারী অধিকারের পক্ষে লেখা স্লোগান ও  রুমানা মনজুর সম্পর্কে বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই অপপ্রচার কেবল নারী সংহতি, রুমানা মনজুরের ওপরই নয়, আমরা মনে করি পুরো নারীসমাজের ওপরই বর্তায়। নারী সংহতির প্ল্যাকার্ডে যেখানে রূমানা মনজুরের স্বামী সাইদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে, নারী নির্যাতন আইনের অধীনে নির্যাতক স্বামীর শাস্তি দাবি করা হয়েছে, সেখানে প্ল্যাকার্ডের ভাষা বিকৃত করে ‘পরকীয়া প্রেমের বৈধতা চাই’, ‘রুমানার পরকীয়ার বৈধতা চাই দিতে হবে’, ‘পরকীয়া বাস্তবায়ন কমিটি’ ইত্যাদি কুরুচিপূর্ণ কথা লিখে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

অত্যাচার-নিপীড়ন-যৌন হয়রানী-ধর্ষণ সবকিছু নারী মুখ বুঝে সহ্য করতে না পারলেই নারীবিদ্বেষীরা তেলে বেগুনে ক্ষেপে ওঠে, তখনই প্রতিবাদকারীর ঘাড় মটকাতে চড়াও হয়। একইসাথে নারীকে নষ্টা মেয়েমানুষ, খারাপ কিংবা খাটো পোশাক পরিহিতা, পথভ্রষ্টকারী, বাজারের মেয়ে, পরকীয়ায় লিপ্ত ইত্যাদি ‘অভিধা’ দেওয়া হয়। নারীর প্রতিবাদী স্বরকে নিস্তেজ করতে উদ্যত হয়। আর এই কাজের আরেক নজির এই সাইবার ক্রাইম।

আমরা স্পষ্টভাবে মনে করি, এই সমস্ত অপপ্রচার কিংবা চোখ রাঙানি নারীর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চেপে ধরতে আর সক্ষম নয়। নির্যাতক এবং যৌন নিপীড়কদের শাস্তি দাবি করে খোদ রুমানা মনজুর, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা, তাদের অভিভাবক এবং ভিকারুননিসার প্রতিবাদী শিক্ষকরাই তার প্রমাণ দিয়েছেন। কোনো অভিধাই আমাদের ঠেকাতে পারবে না বরং আমাদের প্রতিবাদে ভয় পেয়েই যে তারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে এতে সন্দেহ নেই।

আমরা আরো মনে করি, এই নারী বিদ্বেষীরা তাদের নিপীড়ক এবং প্রতারক চেহারার উন্মোচন ঘটিয়েছে এই সাইবার ক্রাইমের মধ্য দিয়ে। এই নারীবিদ্বেষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরূদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে জোরদার লড়াই করার জন্য আমরা সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই এবং রুখে দাঁড়ানোই হবে এসব নারী বিদ্বেষীদের উচিত জবাব।

সবার সঙ্গে সংহতি এবং লড়াইয়ের ময়দানে একক দমে এগুনোর অঙ্গীকার জানাই

তাসলিমা আখতার: আলোকচিত্রী ও আন্দোলনকর্মী
শ্যামলী শীল: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্দোলনকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।