ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

অবশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বোধোদয়!

সাইফুল্লাহ মাহুমুদ দুলাল, কানাডা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১১
অবশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বোধোদয়!

সোমবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে (বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১) ‘খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা ফেরত দেবে নাঃ খবরটা ১০০% সত্য না’ শীর্ষক আমার লেখাটি সকালে প্রকাশের ৮/৯ ঘণ্টা পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১) আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘কানাডীয় হাইকমিশনার সঠিক তথ্য দেননি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ’

এতে মনে হয়েছে
ক) অবশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বোধোদয় হলো,
খ) কানাডিয়ান হাইকমিশনের সাথে সৃষ্টি তৈরি হতে যাচ্ছে,
গ) খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আরও এক ধাপ দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে,
ঘ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপক্কতার অভাব প্রকাশ পেলো
ঙ) উক্ত মন্ত্রণালয় উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে।


 
[তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়ঃ নূর চৌধুরীর প্রত্যর্পণ সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার রোববার গণমাধ্যমের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সঠিক তথ্য পরিবেশন করেননি।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশের হাতে ফেরত না দিতে কানাডার আইনী বাধ্যবাধকতার কথা রোববার জানান হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন।
মন্ত্রণালয় জানায়, বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীর বাংলাদেশে ফেরানোর ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথোন সঠিকভাবে হাইকমিশনার গণমাধ্যমে প্রকাশ করেননি। ]

তাহলে প্রশ্ন, গণমাধ্যমকে বিভ্রান্তকর তথ্য কে দিয়েছে? কানাডীয় হাইকমিশনার নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়? এভাবে বন্ধুপ্রতীম দেশের সাথে আন্তর্জাতিক গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তিক্ততা-মতবিরোধ এবং দূরত্ব সৃষ্টি করা কি সঠিক কাজ? নাকি অত্যন্ত বিচক্ষণের সাথে সচেতনভাবে সুকৌশল অবলম্বন করা কর্তব্য?

খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অনেক পয়েন্ট আছে। এধরনের অপরিপক্কতার কারণে বাংলাদেশ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে! আগেই জানিয়েছি,
প্রথমত, এই অমীমাংসিত বিষয়টি এখনও আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে। গ্যাড়া কলে আটকে আছে কানাডা।
দ্বিতীয়ত, তিনি সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ নন। (আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেদনটি কানাডিয়ান সরকারকে অবগত করা তাঁর দায়িত্ব)

তৃতীয়ত কানাডার আরেক আইনেই খুনি নূরের আবেদন চার-চার বার প্রত্যাখ্যান হয়েছে(ফলে খুনি নূর চৌধুরীর কানাডায় থাকার অধিকার নেই)।

চতুর্থত, কানাডার আইনেই আছে, রিফুজি ক্লেম একসেপ্ট না হলে, সেই ব্যক্তিকে তৃতীয় কোনো দেশে ফেরত পাঠানো হয় (নূরকে অন্য দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ করেছে)।
পঞ্চমত, নূরকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ট্রয়স এলএলপি নামে কানাডার অন্টারিওভিত্তিক একটি আইনি প্রতিষ্ঠানকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ষষ্ঠত, কানাডার শান্তিপ্রিয় জনগণও একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে ঘৃণা করে। (কানাডা সরকার নাগরিকত্ব পাওয়া অনেক সন্ত্রাসী ও অপরাধীকে বহিষ্কার করেছে, তার প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে)
সপ্তমত, যদি কানাডিয়ান নাগরিকরা মনে করেন, বহিরাগত কোনো ব্যক্তি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাহলে পাবলিক সেফটি মান্ত্রণালয়ও সেই ব্যক্তিকে বহিষ্কার করে। (http://www.publicsafety.gc.ca/index-eng.aspx)

কাজেই নূরকে ফিরিয়ে নেওয়ার অনেক আইনি প্যাচ এখনো আছে। আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।