শুধু তা-ই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের নৃংশসতার ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নিজের কৃতকর্মফলের সন্তুষ্টিপ্রার্থীও হচ্ছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির একটি ‘সাদাবার কেউটে সাপ’ (Common Crait) হত্যা করে এর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যক্তি।

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী এবং ‘সোল’ (বিপন্ন বন্যপ্রাণী সেবা ও আশ্রয়স্থল) এর পরিচালক তানিয়া খান বলেন, মানুষ যে কতো হিংস্র হতে পারে এসব পোস্ট দেখলে বুঝা যায়। এটা তাদের হিংস্র মনোভাবের বর্হিপ্রকাশ। একটি মূল্যবান প্রাণী মেরে ফেলা, তারপর সেই মৃত প্রাণীটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা– বিকৃত রুচিরই পরিচয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, বন্যপ্রাণীদের হত্যা মানবিক দিক দিয়ে এটি উচিত না। আর আইনগত দিক দিয়েও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরিষ্কার বলা আছে, যে কোনো বন্যপ্রাণী ধরা, মারা বা রাখা কোনোটাই করা যাবে না। তো যারা একটা করছেন তারা এগুলো না জেনেই হয়তো করছেন। তাদের সচেতন করার দায়িত্ব বনবিভাগসহ আমাদের সবার।  
 
বন্যপ্রাণী দেখলেই এটাকে মারতে হবে– সারাদেশে এমন একটা বিকৃত উৎসব চলে। এতে সচেতনতার অভাব আছে। কেউ কেউ না জেনে না বুঝেই বন্যপ্রাণীদের মারছেন। সবচেয়ে বড় কথা সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমন পোস্ট দেখলেই এর বিরুদ্ধে কিছু লিখে দেওয়া অথবা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের কথা উল্লেখ করে দিলে কিছুটা উপকার হতে পারে বলে মনে করেন ড. কামরুল হাসান।

বাংলাদেশে প্রায় সর্বমোট ১০৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭১৮ প্রজাতির পাখি, ১৫৭ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। দিন দিন তাদের আবাসস্থল নানান কারণে মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যেই এদেশ থেকে ১৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অসংথ্য বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক এবং বন্যপ্রাণীপ্রেমী ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাও যদি মেরে ফেলা হয়, তাহলে আমরা আমাদেরই ক্ষতিসাধন করছি। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
বিবিবি/এইচএ/