ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

উইকিলিকস ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দীনতা

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১১
উইকিলিকস ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দীনতা

আমাদের অনুমিত তথ্যগুলো, গল্প-গুজবের বিষয়গুলো চায়ের আডডা ছেড়ে আজকাল সংবাদপত্রের পাতায়। একক কৃতিত্ব উইকিলিকসের।

নিজেদের ধ্যান-ধারণার সাথে তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখতে গিয়ে আবারো প্রমাণ পাই- ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।

আমাদের ‘বুর্জোয়া’ বেনসন ও ফাইভ ফিফটি ফাইভ’র নেশাক্রান্ত বামরা একসময় রাজপথে-দেয়ালে-পোস্টারে খালি ‘চিক্কুইর’পাড়তো, ‘অ্যাংগোলায় মার্কিন সৈন্য কেন জবাব চাই`। লিফলেটে ‘সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও বুর্জোয়া’দের বিরুদ্ধে তীব্র বিষ উদগীরণ করতেন। কাকতলীয়ভাবে তখন বাংলাদেশের মাটিতে মার্কিন সেনারা রিলিফ বন্টনে ব্যস্ত।

ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিশ্চল প্রতিজ্ঞায় আর বিরোধী দলীয়রা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেবার অভিযোগে মুখে ফেণা তোলেন। আমরা ‘ম্যাংগো-পিপল’ (আমজনতা) নিজ দলীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের পারঙ্গম ও পারদর্শী কার্যক্রমে তৃপ্ত হই! প্রত্যেক দল ও তার সমর্থকরাই একমাত্র দেশপ্রেমিক!

বিএনপি’র শেষ জমানায় মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়াতো বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে একহাত নিয়েছিলেন নির্বাচন প্রশ্নে মন্তব্যের বিপরীতে। অভিযোগ তুলেছিলেন, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে ‘অহেতুক’ হস্তক্ষেপের।

উইকিলিকস আমাদের অন্ধ-রাজনৈতিক অনুসারীদের দিব্য দৃষ্টি খুলতে সহায়তা করেছে। উইকিলিকসের বার্তায় দেখি, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তাদের চারপাশে ঘিরে থাকা বলয় আর বুদ্ধিজীবীরা গায়ে পড়ে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ’ঘ্যানর ঘ্যানর’ করেছেন। অযাচিত তথ্য সরবরাহ করেছেন এমন সব ব্যক্তি যাদের নিয়মানুযায়ী মার্কিন দূতাবাসে যাবারই প্রয়োজন পড়ে না। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব, খালেদা-হাসিনার আমমোক্তারনামা প্রাপ্ত কালো কোট, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী খাকী উর্দি, কে নেই সেই তালিকায়? নিজেদের মারামারি-হানাহানি-দর কষাকষিতে মার্কিন দূতাবাস যেন রেফারি! মুরুব্বী? মিডিয়েটর? আগামী দিনের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক!

কারারুদ্ধ দুই নেত্রীর মুক্তি ও দেশত্যাগ, নেত্রীর সন্তানদের প্যারোলে মুক্তি ও চিকিৎসা, কাকে ভিসা দেয়া উচিত কিংবা কার পাসপোর্ট বাতিল করা উচিত, এইসব ‘খাজুর বাতচিত’ও হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের সাথে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মাকির্নীদের কোনো উদ্যোগ বা খর্চা নেই এইসব তথ্যাদি সংগ্রহে। অন্যদেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক তথ্যাদি পেতে মার্কিনীদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। পুষতে হয় এক দঙ্গল পেইড ইনফর্মার। `অতিথিপরায়ন’ বাংলাদেশে তথ্যগুলো সংগ্রহ হয় বিনা খর্চায়।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা বোধের দীনতারই প্রমাণ উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যগুলোর সূত্র। প্রমাণ দেশের চেয়ে দল আর দলের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বড় কথাটি। কেউ নিজেকে বিনা কারণে বিকিয়ে দিতে চাইলে কার কী বলার থাকে!

রাজনীতিবিদদের মুখে দেশপ্রেমের বুলিটুকু এখন অন্তঃসারশূন্য ঠেকে।

ইমেলঃ [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।