ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ভারতীয় সাপ্তাহিকে সাক্ষাৎকার, বিনিময়ে মোদি-দর্শন খালেদার!

দীপ আজাদ, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
ভারতীয় সাপ্তাহিকে সাক্ষাৎকার, বিনিময়ে মোদি-দর্শন খালেদার! বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি

বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার একান্ত সাক্ষাতকার পেতে দেশি গণমাধ্যম কর্মীদের যেমন আগ্রহের শেষ নেই, তেমনই বিদেশি গণমাধ্যমেরও চাহিদা কম নয়। তবে একান্ত সাক্ষাতকার পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশি গণমাধ্যম কর্মীরা বরাবরই বঞ্চিত।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে, বিশেষ আলাপচারিতায় গণমাধ্যমকর্মীদের এই প্রত্যাশার কিছুটা হলেও পুরণ হয়। কিন্তু সাক্ষাতকার তো দুরে থাক, সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার সুযোগটি পর্যন্ত মেলে না খালেদা জিয়ার কাছে।

এমন অবস্থায় ৭ জুন সন্ধ্যায় ভারতের দ্য সানডে গার্ডিয়ানকে একান্ত সাক্ষাতকার দিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সাক্ষাতকারে অনেক অজানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন তিনি। ভারতের এতো খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম থাকতে সানডে গার্ডিয়ানকে কেন একান্ত সাক্ষাতকার দিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী? সে প্রশ্ন শুধু দেশে নয়, ভারতের সংবাদ কর্মীদের মাঝেও আলোচনার অন্যতম ইস্যু।

সঙ্গত প্রশ্ন ‘এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ’ দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে প্রকাশনা শুরু হওয়া সাপ্তাহিক সানডে গার্ডিয়ানকে কেন বেছে নিলেন বিএনপি নেত্রী?

খালেদা জিয়ার অভিযোগ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সাথে যাতে তার বৈঠক না হয়, সে জন্য সরকার সব চেষ্টাই করেছে। এর জবাব সরকার দিলেই সব চেয়ে ভালো হবে। তবে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে যদি খালেদা জিয়া থাকতেন তাহলে একই চেষ্টা তিনিও করতেন সে বিশ্বাস অনেকের মাঝেই বদ্ধমূল।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকারের এতো চেষ্টার পরও বৈঠকটি হলো কি করে?

সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে ভারতের কয়েকজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে।

সানডে গার্ডিয়ানের সম্পাদক এমজে আকবর। যিনি বিজেপি’র মুখপাত্র। বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে এমন আভাস থেকেই গত কয়েক বছর ধরে এমজে আকবরের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বিএনপি’র কয়েকজন নেতা। গত বছর বাংলাদেশ সফরে এসে বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠকও করেন এমজে আকবর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকের বিষয়টি ঠিক করতে মূল ভূমিকা রাখেন বিজেপি’র এই মুখপাত্র এমজে আকবর। বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বৈঠক না হওয়াটা  অস্বাভাবিক বিষয় হতো।

নরেন্দ্র মোদির সফরের সংবাদ সংগ্রহ করতে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক এসেছিলেন ভারত থেকে। প্রথম সারির গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেরই চেষ্টা ছিল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার একটি একান্ত সাক্ষাতকার নেওয়ার। কিন্তু সবাইকে ব্যর্থ করে দিয়ে ভারতের একটি সাপ্তাহিক দ্য সানডে গার্ডিয়ান কি করে সফল হলো? সে প্রশ্নের উত্তর খুজঁতে খুব বেশি দুরে যাবার আর কি কোন দরকার আছে?  মোদির সাথে বৈঠক নির্ধারণ করে দেওয়ায় এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ মিলেছে কি না? এমন সন্দেহমাখা প্রশ্ন এখন ভারতের অনেক গণমাধ্যম কর্মীর মুখে।

এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ’র একটি বিষয় খুবই কৌতুহল তৈরি করেছে। ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জির সাথে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার বিষয়ে খালেদা জিয়ার জবাব। তার প্রাননাশের হুমকি থাকায় ওই বৈঠক বাতিল করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এতদিন পরে নাকি সত্যিটা তিনি জানালেন ভারতীয় গণমাধ্যমে। দেশে বিদেশে আলোচিত এ বিষয়ে বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ঘটনার দুই বছর পরে ভারতের গণমাধ্যমকে সত্য কথা বললেন! সত্যি জানার ব্যর্থতা বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের? নাকি সত্যি জানানোর ব্যর্থতা বিএনপি নেত্রীর? সে প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাংবাদিক মহলে।

বাংলাদেশ সময় ২১৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।