ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

মোদির দেশের মুক্তমত

আমি আশাবাদী | মনিশংকর রায়

মুক্তবিশ্লেষণ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৫
আমি আশাবাদী | মনিশংকর রায়

আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের এ সফর দুই বন্ধুদেশের মধ্যকার যোগাযোগ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সফর নিয়ে কী ভাবছেন মোদির দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজনে থাকছে তাদের মতামত।

১৯৪৬ সাল। সাবেক সাতক্ষীরা মহকুমার তালা থানায় আমার জন্ম। ১৯৪৭ সাল। বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলো। অবিভক্ত বাংলা ভাগ হয়ে গেলো। আমিও ভাগ হয়ে গেলাম। র‌্যাডক্লিফের রোয়েদাদ নৃশংস তাকিয়ে দেখালো, ক্রমশ ভাগ হয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, ঘর-বাড়ি, পাহাড়-প্রান্তর আপামর বাঙালির সুখের শব্দমালা।

তাদের চোখের আলোর ধূসর ভবিষ্যৎ, তাদের প্রতিদিনের জীবন-যাপনে  শুধুই ছন্দ পতনের দীর্ঘ চালচিত্র। আর কাঁটাতারের বেড়ার এপারে-ওপারে আমার চোখের সামনে অনিবার্যভাবে জন্ম নিলো ‘ছিটমহল’।

মানুষের বেঁচে থাকার এক নয়া মানচিত্র। এই ছিটমহলের লোকের  জানে না তারা কোন দেশের, কোনখানে তাদের সঠিক নাগরিকত্ব। রাষ্ট্রীয় ইচ্ছায় নদীর ওপর দিয়ে চলে গেলো সীমানা চিহ্নিতকরণের লাইন। নদী সেই সীমানা তো মানে না। তার স্রোতধারায় কোনো স্বদেশ-বিদেশ নেই। সে ‘আপন বেগে পাগল পারা’ আমার মানুষের নদীর একদিকে তুলে দিলাম বাঁধ। তৈরি করলাম জল-নিয়ন্ত্রণ বিধি। শুকিয়ে গেলো আরেক বাংলার প্রসারিত ফসলের জমি। যেন ধ‍ু ধ‍ু মরুপ্রান্তর। যারা দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো তারাও কিন্তু বাঙালি। আমাদেরই আত্মীয়। মা-বাবা,  ভাই-বোন। অথচ আন্তর্জাতিক বিধি বলেছে দু’দেশের সম্মতিতেই নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করা উচিত।

ভারত ও বাংলাদেশ  উভয়পক্ষই উদ্যোগী হয়েছে এসব দীর্ঘকালীন সমস্যাগুলো সমাধান করতে। ভ‍ারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। যেহেতু বর্তমান সমস্যাগুলো পশ্চিমবঙ্গের সীমানাকেন্দ্রিক, সেহেতু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনিও আন্তরিকভাবে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

ছিটমহলে সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক। আমার প্রশ্ন হলো, শুধু ছিটমহল কেন, তিস্তা জল-বণ্টন চুক্তিও কি এই  মওকায় সম্পাদিত করা যায় না? কারণ, এবার একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছে এসব আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের। তিন প্রধান সম্মানীয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব একত্রিত হয়ে তিস্তার জল-সমস্যা নিয়ে অন্তত একটা আলোচনা শুরু করুন।

সন্তোষজনক সমাধান একটি বেরিয়ে আসবেই। এবারে না হোক, পরের বার। বারবার বৈঠক বসুক দু’দেশের মধ্যে। তাই এবারেই তিস্তা নিয়ে আলোচনাটা শুরু করতে দোষ কি? তবে শুধু তিস্তা কেন, দুই দেশের মধ্যে প্রবাহমান নদীগুলোর মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেগুলোও আলোচনার মধ্যে আনলে ভালো হয়।

সমস্যা আরও আছে। দুই বাংলার  ভাষা এক, সাহিত্যও তাই। তবে সাহিত্যিক আলাদা। অথচ দুই বাংলার রসপিয়াসু পাঠাকরা খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টির স্বাদ গ্রহণে বস্তুই বঞ্চিত। এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনোও চুক্তি কি আলোচনা সাপেক্ষে দুই দেশের করা যায় না? এবছর ২২ মে থেকে ২৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় একটি সাহিত্যের অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে আমাকে থাকাতে হয়েছিলো। ওখানে দেখলাম এবং বহু মানুষের কাছে শুনলাম, পশ্চিমবাংলার বাংলা সিরিয়ালের খুবই কদর ওখানে। অথচ পশ্চিমবাংলায় ভালোভাবে বাংলাদেশের বাংলা চ্যালেনগুলো দেখতে পাই না।

দেশ-প্রধানরা এ বিষয়েও যদি দৃষ্টিপাত করেন তাহলে আমরা ‌এপার বাংলার দর্শকরা যথেষ্ট উপকৃত হবো। একটা রাষ্ট্রীয় সীমারেখা টেনে একদিন বঙ্গ বিভাজন হয়েছিলো বটে, কিন্তু সাহিত্য সভ্যতা সংস্কৃতির কোনোও বিভাজন হয়নি।

ভাগ হয়নি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। দুই পাড়ের মানুষের‍া একে অপরের আত্মার আত্মীয়। দুই পাড়ের মানুষের ভাষাই বাংলা। বাংলাদেশ নামক একটা রাষ্ট্রের জন্ম এই বাংলা ভাষার ওপর দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের জন্যই এই বাংল‍া ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেয়েছে। প্রতিটি বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব‍ুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং সর্বোপরি এই বাংলাদেশ নমস্য।

ছোটো ছোটো সুখ-দুঃখ ও বেদনার মাঝে মাঝে একান্তভাবে ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে। সেটা চিরকালীন হলে সমস্যাগুলো বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। আর তখনই প্রয়োজন হয় দেশনেতাদের এক টেবিলে আলোচনা করার। সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যেসব সমস্যা আছে,  সেগুলো সমাধানের জন্য এবং দু’দেশের সম্পর্ক আরও মধুর করার জন্য, এ মাসের ছয় তারিখে ঢাকায় মিলিত হচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা গভীর আশা নিয়ে কৌতূহলি মনে তাকিয়ে আছি তাদের এই বৈঠকের ফলাফলে দিকে। আমি আশাবাদী।

মনিশংকর রায়
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, আকাশবাণীর কর্মকর্তা ও লেখক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৫
এএ/এমজেএফ

** দুই পারের রাজনীতি ও মোদির বাংলাদেশ সফর | সৌরাংশু সিনহা
** ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী এক নতুন যুগের ভোরে ‍‍| রাসবিহারী দত্ত
** ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস ওরে মন হবেই হবে’ | গোপাল বিশ্বাস
** মোদি-মমতার বাংলাদেশ সফর | স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়
** মোদির বাংলাদেশ সফর হোক বিশ্বের দৃষ্টান্ত | নৃপেন চক্রবর্তী
** সফর যেন আমাদের না বদলায় | সরোজ দরবার
** মোদি-মমতার যৌথ সফর | অরুণ চক্রবর্তী
** মোদির বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় হিসেবে আশা ‍| অভীক দত্ত
** মোদির বাংলাদেশ সফর: কিছু ভাবনা | পরিচয় পাত্র
** অনেক কিছুই পাওয়ার আশা ‍| ড. অমিতাভ চক্রবর্তী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।