ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যৌন হয়রানি: পদত্যাগ না করে তদন্ত কমিটি!

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
যৌন হয়রানি: পদত্যাগ না করে তদন্ত কমিটি! ছবি: প্রতীকী

তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে-এ জাতীয় খবর আমরা প্রায়ই টেলিভিশনে, পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই। এই তদন্ত কমিটিগুলো শেষ পর্যন্ত কি রিপোর্ট দেয়, রিপোর্ট যদি দিয়েও থাকে, তার ভিত্তিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় সে খবর আর শেষ পর্যন্ত জানা হয় না।

কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না।

তাহলে কেন এসব তদন্ত কমিটি?
বলছি না যে, তদন্ত কমিটি গঠন করা মন্দ কিছু। কোনো একটা ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতেই পারে। কিন্তু এই কমিটিগুলো যদি শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু করতে না-ই পারে তাহলে প্রশ্ন জাগে, এসব তদন্ত কমিটি আসলে কেন করা!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নববর্ষে টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে বেশ কয়েকজন নারীকে বিবস্ত্র করার  ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি এমন একদিন ঘটানো হয়েছে, যে দিনটি আমাদের বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি দিন। এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলা। দেশের এমন কোনো সংবাদমাধ্যম নেই যারা এই দিন ওই এলাকার সংবাদ পরিবেশন করে না। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ওই এলাকায় সমবেত হন।

এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নজরদারি, পাহারা থেকে শুরু করে সব রকম নিরাপত্তা জোরদার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই এতো মানুষ ও নিরাপত্তার মাঝেও যদি প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর মর্যাদাহানির ঘটনা ঘটে তাহলে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে ঘাটতি রয়েছে কিনা এ-প্রশ্ন থেকেই যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য় এলাকায় কিছুদিন আগেও একজন লেখককে হত্যা করা হয়েছে প্রকাশ্যে। সেই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শুনেছি। প্রায় মাস দুয়েক পার হয়ে গেছে। তবু কমিটি সে-ঘটনার কোনো কূল কিনারা করতে পেরেছে কিনা সেটি অবশ্য আমাদের জানা নেই।

তবে এই নববর্ষে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের কিছু সদস্য অবশ্য এগিয়ে গেছে এবং তারা নারীদের যৌনসন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

অদ্ভ‍ূত ব্যাপার হচ্ছে, আশপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেবল ওই দুই-একজনই এগিয়ে গেছে। আর পুলিশের ভূমিকা তো লিখে শেষই করা যাবে না।

এর চেয়েও অবাক করা বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা দেখভাল করার জন্য প্রশাসনের যে ব্যক্তিটি মূল দায়িত্বে নিয়োজিত সেই প্রক্টরকে যখন এই ছেলেগুলো ফোন করে বলেছে, ওই এলাকায় এই ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটছে, তার হস্তক্ষেপ দরকার; তিনি নাকি বলেছেন “আমি ওখানে গেলেই বা কি করতে পারতাম!”

এই প্রক্টর ভদ্রলোককেই দেখলাম বুধবার এক বেসরকারি চ্যানেলে বলছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করুক। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে’ বলে পার পাওয়ার জন্যই কি এসব কমিটি গঠন করা হয়? 

দেশের সুশীল সমাজের একটা বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যখন রাজনীতিকরা কোনো ভুল করে থাকেন কিংবা কোনো মন্ত্রী-এমপি যদি দায়িত্বে গাফিলতি করেন, তখন এই সুশীল সমাজের মানুষরাই সবার আগে বলে বেড়ান, দৃষ্টান্ত উত্থাপন করার জন্য হলেও মন্ত্রী-এমপির পদত্যাগ করা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে নারীদের ওপর যে যৌন হামলার মতো ঘটনা ঘটে গেল, এর দায় স্বীকার করে এই শিক্ষক, প্রক্টর মহাশয় নিজে পদত্যাগ করে কেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন না, সেটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তিনি নিজে যদি পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাহলে ভবিষ্যতে যারা এই পদে আসবেন তারা অন্তত সজাগ থাকবেন নিজেদের দায়িত্বের প্রতি, কারণ তখন তারা অন্তত জানবেন, যদি দায়িত্বে অবহেলা করা হয় তাহলে তাদেরও একদিন এই দায় মাথা পেতে নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

আর যদি এই প্রক্টর মহাশয় পদত্যাগ না করে বরাবরের মতো নিজ পদ আগলে রাখেন, তাহলে হলফ করে বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায়ও এই রকম বর্বরতা অবাধে চলতে থাকবে।

কেবল রাজনীতিকদের দোষ ধরাই আমাদের দেশের সুশীল সমাজের কাজ। কিন্তু তারা নিজেরা যখন দায়িত্বে অবহেলা করেন তখন তার দায় স্বীকার করে তারা আদৌ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন কি? এ-প্রশ্নটা থেকেই যায়।

আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক ও গবেষক, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
জেডএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।