ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

দু’নেত্রীই পারেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫
দু’নেত্রীই পারেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে

অসংখ্য খারাপ খবরের মাঝে একটি ভালো খবর চোখে পড়লো। এ যেন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে এক টুকরো রোদের ঝলক।

  খবরটির শিরোনাম, ‘সিএনএন মানির পূর্বাভাস– ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধিতে ২য় হবে বাংলাদেশ’।

এর সারসংক্ষেপ এ রকম- যে সব দেশের জিডিপির আকার ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি, সেসব দেশ নিয়ে সিএনএন মানি একটি পূর্বাভাস তৈরি করেছে। ‘ওয়ার্ল্ডস লারজেস্ট ইকোনমিকস’ শীর্ষক এ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ৯ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৯ সালে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকবে ইরাক আর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে বাংলাদেশ।

নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক ও খুশির সংবাদ। কিন্তু দেশ বর্তমানে যে হালে চলছে, এভাবে চলতে থাকলে তাদের পূর্বাভাস কতটুকু সফল হতে পারবে, সেটাই ভাববার বিষয়।

একটি পরিবারের কথাই ধরা যাক, যে পরিবারে নিত্যকোন্দল লেগেই থাকে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকে না। শিষ্টাচারবোধের অভাব পরিলক্ষিত হয়, সে পরিবার যেমন কখনো অভীষ্ট লক্ষ্য বা সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি দেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। আমাদের দেশকে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বলা হলেও তা ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক শিষ্টাচার হারিয়ে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলছে।
এ জন্য মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়ী করা চলে।

ক্ষমতালিপ্সু মনোভাব আমাদের রাজনীতিবিদদের স্বাভাবিক চেতনাবোধ লোপ করে দিচ্ছে। ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় আরোহণের জন্য এমন কোনো হেন কাজ নেই যা করা থেকে তারা বিরত থাকেন। বর্তমান বিএনপি জোটের কথাই ধরা যাক। মুখে গণতন্ত্রের ফেনা তুলে কী অগণতান্ত্রিক কাজই না করে যাচ্ছে অনবরত।

শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশে গত ২৫ দিন যাবত হরতাল অবরোধের নামে চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ মারা, পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্যতম আন্দোলন; যে আন্দোলন কেবল জানমালের ক্ষতি-ই ঘটাচ্ছে না, পঙ্গু করে দিচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোকেও।

দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি বিন্দু পরিমাণ টান থাকলে একটি রাজনৈতিক দল বা জোট এভাবে একের পর এক কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারতো না।

সোমবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ করে আসলেও জনগণ প্রত্যাশা করেছিল, অন্তত এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বিবেচনায় এনে বিএনপি জোট তাদের অবরোধ পরীক্ষার দিনগুলোতে সাময়িকভাবে হলেও প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু হালে বিপরীত। অবরোধ তো প্রত্যহার করেইনি বরং উল্টো অবরোধের পাশাপাশি রোববার (০১ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিনদিনের হরতাল ডেকেছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ মা-বাবা বা অভিভাবকরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছে।

একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক জোট কী করে এ ধরনের একটি মানবিক দায়হীন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে!

গতকাল (শনিবার) বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, ডিশ ও ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে তিনি তার দুই নাতনি ও স্বজনদেরকে নিয়ে বিনিদ্র রাত কাটান। ঘটনাটিকে ‘সরকারের নিকৃষ্ট ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ’ বলে আখ্যায়িত করে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো ভাষা হারিয়ে কেবল বলেছেন তিনি- ‘স্তম্ভিত’।

হ্যাঁ, এ ধরনের একটি মানবিক বিবর্জিত ও নাগরিক অধিকার হরণকারী ঘটনাতে আমিও স্তম্ভিত। ব্যক্তিগতভাবে  এ ঘটনার নিন্দা জানাই আমি। পাশাপাশি এ কথাও না বলে পারছি না যে, সরকারের একটিমাত্র অমানবিক ঘটনাই যদি তাকে  ‘স্তম্ভিত’ করে তোলে, তাহলে অতীতের কথা বাদ দিয়ে যদি কেবল গত ৫ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক অপকর্মের খতিয়ান তুলে ধরি, দেখা যাবে পেট্রোল-বোমায় প্রায় ৪০ জন লোকের প্রাণহানি, শত শত লোকের আহত হওয়া, পোড়াদেহ বা পোড়ামুখ নিয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়া, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অনাহারে ভোগা, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করা, প্রধানমন্ত্রীকে নিজ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার মতো অসৌজন্যতা দেখানো, সবশেষে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের শঙ্কা ও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ফেলার মতো অসংখ্য অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, যা কিনা দেশের সাধারণ মানুষকে ‘স্তম্ভিত’ করে তুলছে।

এ কথা দুঃখের সাথে বলতেই হয়, বিজাতীয় সরকার বা শাসন ব্যবস্থা এ দেশের যতটুকু না ক্ষতি করেছে, তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের দেশের ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদরাই। এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বর্তমান বিশ্বে সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনীতিবিদদের মন-মানসিকতা এবং নৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে, সে সম্ভাবনাও উবে যাবে সন্দেহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দুজনই দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা বলেন। দুজনই জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে। উভয়ই তিন তিনবার  নির্বাহী ক্ষমতার সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই, আমি বিশ্বাস করি, তাদের আর কোনো চাহিদা বা চাওয়া-পাওয়া  থাকতে পারে না।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। তাই, দেশের স্বার্থে অর্থাৎ দেশকে মধ্যমআয়ের দেশ হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দেশে যে রাজনৈতিক হোলিখেলা চলছে, তা এখনি বন্ধ করতে হবে। দেশের অসহায় মানুষের দিকে মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুই নেত্রী চাইলে তা সময়ের ব্যাপার মাত্র।            

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল- আয়ারল্যান্ড প্রবাসী
[email protected]      

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।