ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আশা করি ক্লিয়ার!

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৪
আশা করি ক্লিয়ার!

কামারুজ্জামান রিভিউ করার সুযোগ পাবেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ মোতাবেক। তার আগেই ফাঁসি দেওয়া অন্যায্য হবে।

কী লেখা আছে ১০৫ এ? আসুন একটু পড়ে দেখি:

“সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধিসাপেক্ষ আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকিবে। ”

সরকারকে ১০৫ অনুচ্ছেদ মানতে হবে। ১০৫ এ সোজা কথা লেখা আছে, ১০৫ মানতে হবে। ১০৫ মানলে ল্যাঠা এখানেই চুকে যায়। কিন্তু না। এ জন্য সংবিধানের ৪৭(ক) ধারাটাও একটু পড়তে হবে।

ওখানে কী আছে?
আসুন একটু পড়ে নেই।

৪৭(ক)
"সংবিধানে যাহাই বলা হউক তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানে ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীনে কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না। ”

এখানে বলা হচ্ছে ৪৭ এর ৩ ধারায় যারা আছেন তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন, মানে রিভিউ আবেদন করার অধিকার নাই, ১০৫ ধারার সুবিধা তারা পাবেন না।
কারা পাবে না? ৪৭ এর ৩ ধারায় কাদের নাম লেখা আছে? অল্প কটা লাইন। একটু পড়ে দেখা যাক-
“গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোন ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন। কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ, কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান- সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না। ”

আশা করি ক্লিয়ার!
ক্লিয়ার?

২.
উপরের লেখা অংশটা গতবার কাদের মোল্লার রায়ের পর দেশের একটি প্রতিথযশা পত্রিকার একাউন্টিং পাস সংবিধান বিশেষজ্ঞের ‘ত্যানা প্যাচানীর’ জবাবে লিখেছিলাম (পরবর্তীতে বাংলানিউজেও লিখেছিলাম)। ওই সংবিধান বিশ্লেষক এবার ১০৪ অনুচ্ছেদ টেনে এনেছেন। খুব জানার ইচ্ছে হলো ১০৪এ কোন বিষয়টা আগে চোখে পড়ে নি। ১০৪ এ কি লিখা আছে?

১০৪:: আপীল বিভাগের পরোয়ানা জারী ও নির্বাহ:
"কোন ব্যক্তির হাজিরা কিংবা কোন দলিলপত্র উদ্ঘাটন বা দাখিল করিবার আদেশসহ আপীল বিভাগের নিকট বিচারাধীন যে কোন মামলা বা বিষয়ে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য যেরূপ প্রয়োজনীয় হইতে পারে, উক্ত বিভাগ সেইরূপ নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রী বা রীট জারী করিতে পারিবেন। "

এটা যারা বোঝেন নাই তাদেরকে বুঝিয়ে বলার আগে আরেকটা কথা বলে নিই। আমি ভেবেছিলাম ১০৪ এর কথিত ফোঁকর ওই সংবিধান বিশ্লেষকের আবিষ্কার । কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের শুনানি পড়তে গিয়ে দেখলাম জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকই প্রথম ১০৪ অনুচ্ছেদের ‘ত্যানা প্যাচিয়েছেন’। রাজ্জাক ১০৫ এর বদলে ১০৪ এর প্রয়োগের কথা বলেন।

তার যুক্তিটি ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মাহবুবে আলম বলেছিলেন- '৪৭ (ক)২ অনুযায়ী কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ করার সুযোগ নেই। তিনি কোনো প্রতিকার চাইতে পারেন না। . . তবে ১০৪ অনুচ্ছেদের অধীন আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে শুনতে পারে। ' কিন্তু আদালত তা শুনেননি।

কথা খুব জটিল হয়ে যাচ্ছে!
১০৪ এর সহজ সরল ব্যাখ্যাটা এমন যে আদালত দরকার মনে করলে কোন বিষয়ে ডিক্রি বা আদেশ জারি করতে পারে।

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কথাগুলো আদালত আমলে নেওয়া প্রয়োজন মনে করেন নি। রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশ দেয়। এক লাইনের আদশে আদালত বলেন- Both the criminal review petitions are dismissed. রায়ের পরে আদালত বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ দিইনি। সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রয়োজন নেই। ’

আদালত রিভিউ কেন খারিজ করেছিল পুর্নাঙ্গ রায় বা পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেলে ভালো হতো।

যেহেতু আদেশে পর্যবেক্ষণ নাই সেহেতু শুনানি চলাকালে আদালতের একটি মৌখিক পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল ১০৫ অনুচ্ছেদের কথা বললে আবদুর রাজ্জাক বলেন, রিভিউ কোনো প্রতিকার নয়। এটা সাংবিধানিক ও সুপ্রিম কোর্টের বিধি অনুযায়ী আদালতের সহজাত ক্ষমতা। "

আদালত তখন বলেন, এ ক্ষমতা হচ্ছে শর্তযুক্ত। শর্ত হচ্ছে আইনে বেঁধে দেওয়া শর্ত।

আদালত বলেন, এ অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সংবিধানের উর্ধ্বে নয়।

আশা করি এবার ক্লিয়ার!
ক্লিয়ার?

বাংলাদেশ সময় ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।