ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ফিরে আসুন বাংলা কবিতার ‘গুণ’

ফারুক আহমেদ, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪
ফিরে আসুন বাংলা কবিতার ‘গুণ’ নির্মলেন্দু গুণ

গুণদা ফোন করে বললেন, তুমি নাকি ‘সমকাল’ ছাইড়া দিছো?
উত্তরে আমি জানাই: জ্বি দাদা, আমি ‘সকালের খবর’-এ জয়েন করছি। আপনাকে এখনও জানানো হয় নাই’।


তিনি বলেন, জানাইও অসুবিধা নাই। কিন্তু ‘‌সমকাল’ থেকে একজন ফোন দিছিল, নাম বোধহয় মাহবুব, কবিতা চায়। আমি বললাম, ফারুক কই? ও-ই জানাল তুমি নাই।
আমি আবারও বললাম, জ্বি দাদা।
তিনি বললেন, আমি বলে দিছি, কবিতা তো আমি ফারুকরে দিতাম...

চুপ করে থাকি। টের পাই, ভালবাসার উত্তাপ। আমি হয়তো বহুদিন দাদাকে ফোন করি না। যখন কবিতা বা কোনো লেখার দরকার হয় ফোন করি। দাদা প্রথমে বলেন, আমি তো কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি, তারপর স্বর নিচু করে বলেন, তোমারে তো আমি পছন্দ করি।

নির্মলেন্দু গুণ বাংলা কবিতার ভুবন মাতিয়েছেন। লিখেছেন, ‌‘আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই/কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,/শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য। ’ (তোমার চোখ এত লাল কেন)। এমন পঙ্‌ক্তি তরুণ হৃদয়কে আন্দোলিত করে। কিন্তু যখন পাঠ করি, ‘আমি চালের আড়তকে নারীর নগ্নতা বলে ভ্রম করি। / রাজবন্দীর হাতের শৃঙ্খল আমার চোখের মধ্যে নারীর শাঁখার/মতো প্রেমের বন্ধন হয়ে কাঁপে, আমি ভ্রম করি। (সর্বগ্রাসী হে নাগিনী/কবিতা, অমীমাংসিত রমণী)। এই কবিতা পড়ে মনে হয়, চিত্রকল্প কেমন হতে পারে! কবিতায় নতুন স্বর বা নতুন উপমা-চিত্রকল্পের কাঁপুনি পাঠককে কীভাবে গ্রাস করতে পারে, তার উদাহরণ এই ক’টা লাইন। আবার ঠিক ঠিক এর ভেতরও ঢুকে গেলো আবহমান বাংলা— চালের আড়ত, হাতের শাঁখা। এইভাবে দ্ব্যর্থকতা তৈরি বোধহয় প্রকৃত কবিতার একটি সহজাত গুণ।

এই লেখা কোনোমতেই নির্মলেন্দু গুণের কবিতা নিয়ে আলোচনা নয়। গতকাল হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে এইসব লাইন মনে পড়ছিল। একজন কবি, যিনি দিনরাত শব্দের পেছনে ঘুরে বেড়ান। একটা একটা শব্দ একসঙ্গে জড়ো করে তৈরি করেন একটা স্বপ্নের গোলক। তা তো সহজ কর্ম নয়। ঝিমিয়ে পড়া, ক্লান্ত হয়ে পড়া একটা জাতির প্রেম, স্বপ্ন, প্রেরণাই আসলে হয়ে ওঠে এইসব শব্দ। কবি এখন হাসপাতালে, চলছে কাঁটাছেঁড়া।

নির্মলেন্দু গুণ কবি। একই সঙ্গে কবির জীবন যাপন করেছেন। সবাই যা পারে না, ওমর খৈয়াম যেমন, পাবলো নেরুদা যেমন, জীবনানন্দ দাশ যেমন, রিলকে যেমন, তেমন নির্মলেন্দু গুণ পেরেছেন। কোনকিছুতেই মোহ নেই (শব্দতেও নেই তা বলা যাবে না), আকাঙ্ক্ষা নেই, জীবনকে ভোগ করার তাড়না নেই। একটা কবিজীবন যেমন হয়, আমরা শুদ্ধতম কবির জীবন যেমন হতে শুনেছি তেমনি।

ক’দিন আগে হাতিরপুল বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে গুণদা হাসতে হাসতে বললেন, বুঝলা আমার বন্ধুরা, যারা বিড়ি-সিগারেট-মদ কিছু খেতো না, ওদের প্রায় সবাই মইরা গেছে।

কবির ওপেনহার্ট সার্জারি চলছে। আরও ঘন্টা দুই লাগবে শেষ হতে। এই সময় সেদিনের ওই কথাগুলো মনে পড়ছে। গুণদা যে জীবনশক্তি নিয়ে এসেছেন, তা ঈর্ষা করার মতো।

আমার বিশ্বাস, সেই জীবনীশক্তিই তাকে ঠিক সুস্থ করে তুলবে। আর এতে বাংলা কবিতা তার একনিষ্ঠ এক প্রেমিককে আরও অনেকদিন নিজের কাছে রেখে দিতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪

** সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরবে নির্মলেন্দু গুণের
** নির্মলেন্দু গুণের সফল অস্ত্রোপচার
** নির্মলেন্দু গুণের ওপেন হার্ট সার্জারি চলছে
** রক্ত দিতে শতাধিক ডোনার হাসপাতালে
** ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য অপেক্ষা
** ১১টায় নির্মলেন্দু গুণের ওপেন হার্ট সার্জারি
** রক্ত দিতে শতাধিক ডোনার হাসপাতালে
** নির্মলেন্দু গুণের ওপেন হার্ট সার্জারি সোমবার সকালে

** নির্মলেন্দু গুণের অবস্থা স্থিতিশীল
** নির্মলেন্দু গুণের ও+ রক্ত প্রয়োজন
** হৃদরোগে আক্রান্ত নির্মলেন্দু গুণ আইসিইউতে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।