ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস

রৌমারীর ১৩ বন্ধু আজও ধূমপান করে না!

কুদ্দুস বিশ্বাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৪
রৌমারীর ১৩ বন্ধু আজও ধূমপান করে না!

মানুষের বিপদ-আপদে পারস্পারিক সহযোগিতা আর সহমর্মিতা আগের মতো এখন আর চোখে পড়ে না। আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।

এখানে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার খবর খুব একটা দেখা যায় না। তবুও অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন।

সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ স্থান থেকে একে অন্যকে সহযোগিতা করলে সত্যিই একদিন সোনার দেশ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

সে লক্ষ্য আর স্বপ্ন নিয়ে রৌমারীর প্রত্যন্ত গ্রামের ১৩ বন্ধু শপথ গ্রহণ করেছিল দেশ ও মানুষের কল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখার। শপথ নিয়েছিল জীবনে তারা কোনো দিন ধূমপান করবে না; যা দীর্ঘ আট বছরেও তারা তাদের শপথ থেকে নড়েনি।

২০০৬ সালের জুন মাসের ১ তারিখে ওই ১৩ বন্ধু ধূমপান না করার জন্য শপথ গ্রহণ করে। এসময় তারা তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের গ্রামের নাম অনুসারে (চতলাকান্দা, ওকড়াকান্দা, বাউসমারী, বোয়ালমারী, শৌলমারী) ‘কোবসা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। সেই থেকে তাদের যাত্রা  আজও অব্যাহত রয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানালেন, আমরা তখন এসএসসি পাস করে কলেজে পড়ি। শামীম হোসেন নামে আমাদের এক বন্ধু খুবই মেধাবী ছিল। কিন্তু, স্কুল জীবনেই সে মাদকের ফাঁদে পড়ে। গাঁজা, ফেনসিডিলের নেশায় তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি সে সময়।

বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। আমরা দেখেছি, একজন মেধাবী ছাত্র নেশায় আসক্ত হয়ে কীভাবে শেষ হয়ে যায়! মূলত তার ওই অবস্থা দেখে আমরা ১৩ বন্ধু শপথ গ্রহণ করি, মাদক তো গ্রহণ করবোই না, এমনকি জীবনে ধূমপানও করবো না।

এরপর বন্ধুদের পরামর্শে মাসে ধূমপানের জন্য যে টাকা খরচ হতো, ওই টাকা আমরা জমা করি। ওই টাকা বিভিন্ন সময়ে আমরা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করি; যেমন- গ্রামের অভাবী হতদরিদ্র কোনো পরিবারের কোনো মেয়ের টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছে না, তখন আমরা ১৩ বন্ধু তাদের পাশে দাঁড়াই। প্রয়োজনে বিয়ের খরচের টাকা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে।

অভাবী দিনমজুর ঘরের কোনো শিশু যদি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে, তখন আমরা ছুটে যাই। অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করি। গ্রামের স্কুলপড়–য়া শিশুকিশোদের মায়েদের নিয়ে একাধিক সমাবেশ করেছি; যাতে করে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয়।

সংগঠনের সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, বাড়িতে শিশুরা যাতে পড়তে বসে, সে জন্যও আলোচনা করা হয়। এছাড়াও আমরা অসংখ্যবার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারাও বিতরণ করেছি। বাল্য বিয়ে ও যৌতুক বন্ধে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে আমরা গ্রামের মানুষকে উৎসাহ দিয়েছি।

রৌমারী উপজেলার ‘কোবসা’ সংগঠনের সদস্য ১৩ বন্ধু। এরা এখন বিভিন্ন স্থানে কর্মে যুক্ত হয়েছেনে। কেউ চাকরি করছেন। এর মধ্যে আবার তিনজন বিদেশেও থাকেন। তারপরও তাদের শপথ ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

এবার ঈদের সময় ১৩ বন্ধু একসঙ্গে বসে আরো নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনকল্যাণমূলক কাজের।

এই অকৃত্রিম বন্ধুরা হলেন- আলমগীর হোসেন, শফিকুল ইসলাম, বজলুর রশীদ দুলাল, জিয়াউর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, মাইদুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, নুর আলম, আনারুল ইসলাম, ইসলাম উদ্দিন, ছাইদুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান।  

সংগঠনের উপদেষ্টা রৌমারী সিজি জামান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা জানান, ১৩ বন্ধু এলাকার অনেক ভালো কাজ করেছে। আমরা তাদের সব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি।

ইচ্ছা থাকলে যে কোনো জায়গা থেকে দেশ ও মানুষের সেবা করা যায়, সেটাই এই ১৩ বন্ধু উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন।

কুদ্দুস বিশ্বাস, দৈনিক কালের কণ্ঠ, রৌমারী প্রতিনিধি
সেলফোন-০১৭১৬১৮৯১৫৯

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।