ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপন্যাস

নীল উড়াল: সপ্তবিংশ পর্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
নীল উড়াল: সপ্তবিংশ পর্ব নীল উড়াল

নায়ক ম্যাকগিল ভার্সিটির অধ্যাপক-লেখক-অভিবাসী বাংলাদেশি। ফরাসি সুন্দরী মার্গারেট সিমোনের প্রণোদনায় দেশে মাদকচক্র নিয়ে গবেষণাকালে ঘটনা মোড় নেয় রোমাঞ্চকর বাঁকে। আসে ধুরন্ধর বন্ধু-অসৎ ব্যবসায়ী এনামুল, সুন্দরী স্টাফ রোকসানা, মধুচক্রের জেনিফার-মলি-পরী, ক্লিনিকের অন্তরালের মিসেস খোন্দকার, রমনার শফি মামা ও ফুলি, ‘উড়াল যাত্রা’র সাইফুল, বিড়ালের কুতকুতে চোখের তরুণ সাংবাদিক ফরমানউল্লাহ এবং ছোটখালার রহস্যময় মেয়ে অন্তরা। প্রেম ও বেঁচে থাকার যুগল উড়ালে কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে।

২৭.
তানিয়া নামে এক মেয়ে ফোন করেছে। নারী কণ্ঠ শুনে আমি সজাগ হয়ে গেলাম।

মলিদের তীক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে এখনও ধাওয়া করছে। এই মেয়ে মলিদের অন্য কোনও সংস্করণ নয় তো? না। আমার আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। একটি আন্তর্জাতিক এনজিও-এর নাম করে তানিয়া নামের মেয়েটি বললো:
-আমাদের হেড অফিসের বস মার্গারেট সিমোন আগামীকাল ঢাকায় আসছেন।

মার্গারেটের কথা উচ্চারণ করতেই আমার শরীর থেকে একটি দুশ্চিন্তার স্রোত বের হয়ে সুশীতল বাতাসের পেলব স্পর্শ নিয়ে এলো। আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। বলি:
-ও আসবে, সে খবর আমাকে আগেই জানিয়েছিল।
তানিয়া বললো:
-এবার তিনি আসছেন কেবল আপনার কাজের জন্য।

নীল উড়াল: ষড়বিংশ পর্ব

আমি চমকে গেলাম। আমার কাজের সঙ্গে মার্গারেট নিজেকে আবার কখন জড়িয়ে নিল। আমার মধ্যে এক ধরনের উতলা ভাব কাজ করছে। মেয়েটিকে সেটা বুঝতে দিলাম না। তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি:
-তো আমাকে কি করতে হবে?

মেয়েটির উত্তর সম্ভবত গুছানোই ছিল। কাল বিলম্ব না করে সে বললো:
-আপনাকে তার সঙ্গে দেখা করার সময় জানাতে হবে। ম্যাডাম জরুরি ভিত্তিতে আপনার সঙ্গে মিলিত হতে চান।
এবার আমি বলি:
-বেশ। আমি মোটামুটি ফ্রি-ই আছি। কখন দেখা করলে ভালো হয় বলুন?
তানিয়া জানালো:
-কাল দুপুরেই চলে আসুন। ম্যাডাম সকালে পৌঁছৈই অফিসে আসবেন। আপনাকে দিয়েই তার কর্মসূচি শুরু করা যাক। কি বলেন?
আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম:
-আমার আপত্তি নেই। তা-ই করুন।

তানিয়া অফিসিয়াল বক্তব্যের বাইরে একটি অতিরিক্ত কথাও বলে নি। ফোন রাখার আগে বললো:
-আপনাকে জানিয়ে রাখি, ম্যাডামের এবারের বাংলাদেশ সফর মাত্র সাত দিনের জন্য। তাকে বিশ্বের সকল দেশে আমাদের সংস্থার কার্যক্রম দেখার জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়। এক দেশে তিনি একবারের বেশি দু’ বার বছরে যেতে পারেন না। বাংলাদেশে এই প্রথম তিনি একই বছরে দুই বার আসছেন এবং সেটা আপনার কাজের প্রয়োজনে। আমাদের পুরো অফিসকে বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আপনাকে সাহায্য করতে। আমরাও আপনার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আশা করি কাল দেখা হবে।

বিনয়ের সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়ে তানিয়া ফোন রেখে দিল। ওদের অফিসের ঠিকানা আর যাওয়ার পথ-ঘাট সম্পর্কে সবিস্তারে জানিয়েও দিল আমাকে।

ফোন রেখে আমি ভাবছি, মার্গারেট আমার কাজের ব্যাপারে অফিসিয়ালি কি ইন্টারেস্ট পেয়েছে? ওর বাংলাদেশ অফিসকে আমাকে পূর্ণ ও সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য তৈরি করে রেখেছে? মার্গারেটকে নিয়ে যতই ভাবছি, ততই আপ্লুত হচ্ছি। নাম না জানা একটি ভালো লাগার শিহরণে আমি বার বার শিউরে উঠছি। মার্গারেটের নানা কথা ভাবতে ভাবতে রাতটা কিভাবে কেটে গেল, মনে নেই। সময়ের কিছুটা আগেই আমি তানিয়াদের অফিসে পৌঁছে গেলাম। রিসেপশনে আমার পরিচয় দিতেই তরুণ কর্মীটি দৌড়ে এসে আমাকে তানিয়ার রুমে নিয়ে এলো। মেয়েটির শশব্যস্ততা দেখে আমার হাসি পেলো। তানিয়া নিমিষেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে নিয়ে অফিসের দোতলায় উঠতে লাগলো। যেতে যেতে সে বললো:
-ম্যাডাম আপনার জন্যই অপেক্ষা করছেন। কয়েক বার খবর নিয়ে জেনেছেন, আপনি এসেছেন কি না?

দোতলার এক প্রান্তে একটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে নক করলো:
-ম্যাডাম।
মার্গারেটের কিণ্নর কণ্ঠ ভেসে এলো:
-ইয়েস, কাম ইন প্লিজ।
মার্গারেট ব্লু জিন্সের প্যান্ট এবং ক্রিম কালারের ফুল শার্ট পড়ে আছে। ওর সোনালী ঢেউ খেলানো কেশ কাঁধের ওপর উদ্দাম খেলা করছে। আমাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আলতো জড়িয়ে ধরলো। হাত মেলালো। ঘরের কোণে এক সেট সোফায় গিয়ে আমরা বসলাম। মার্গারেট উচ্ছ্বল কিশোরীর মতো অভিমানী গলায় বললো:
-তুমি তো শরীরের একদম যত্ন নিচ্ছ না। কেমন শুকিয়ে গেছো! এটা মোটেও ভালো কথা নয়।

আমি কিছু না বলে শুকনা হাসি হাসলাম।
মার্গারেটের চোখ এড়ালো না আমার বিষণ্নতা। সে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল:
-ওকে। এখনই সব শুনছি আমি।
তারপর পাশে দাঁড়ানো তানিয়ার দিকে ফিরে বললো:
-এক ঘণ্টা পর আমরা কনফারেন্স রুমে মিটিং করবো। তুমি সবাইকে তৈরি থাকতে বলো। ওখানেই আমরা লাঞ্চ করবো এক সাথে। আমি ওর সঙ্গে কিছু প্রিলিমিনারি কথা সেরে নিচ্ছি এই ফাঁকে। তুমি বরং দয়া করে আমাদের জন্য একটু কফি পাঠিয়ে দাও।
ঘরের বাইরে যেতে যেতে তানিয়া বললো:
-ওকে ম্যাডাম।

তানিয়া চলে যাওয়ায় রুমে এখন মার্গারেট আর আমি। কত দিন পর ওর সঙ্গে দেখা? খুব বেশি দিন নয়। তবু মনে হলো বহু বছরের পরে দেখা হয়েছে। মার্গারেট কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে। ও যেন মৌনতার ভাষায় কথা বলছে। ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আমি ভাবছি, যে রোমান্টিক ও একান্ত মার্গারেটকে দেখেছিলাম, সে মার্গারেট এখনও অবিকল আগের মতোই রয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, প্রাজ্ঞ অভিব্যক্তি, কর্তব্যের পরিধি, দায়িত্বের পরিশীলিত ছাপ। আমি ঠিক বুঝতে পারছি, ইংরেজ কলোনি হওয়ায় আমরা তাদের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, সভ্যতাতে যে রকম আচ্ছন্ন হয়েছি, ফরাসি সৌরভের কণা মাত্র সেভাবে লাভ করি নি। আমাদের আধুনিকায়ন ও উন্নতির জন্যে এটা এক বড় ক্ষতির কারণ। আমি এখন যে দেশে বাস করি, সে দেশ কানাডার অগ্রগতির প্রধান কারণ, ব্রিটিশ সভ্যতার মতোই ফরাসি সভ্যতাকে আত্মস্থ করার যোগ্যতা। কানাডায় ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতির সমান তালে চলে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি। সত্যিই তো, বিশ্ব জ্ঞানভান্ডারকে বিধৌত করেছে, এমন মননের অন্যতম উৎপত্তিস্থল হিসাবে ফরাসি জাতিকে চিহ্ণিত করায় কোনও অতিমাত্রিকতা নেই। কি দর্শন, কি সাহিত্য, কি নাটক, কি শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব বা স্থাপত্যশিল্প-প্রতিটি অঙ্গনে ফরাসিদীপ্তির ছাপ অলঙ্ঘনীয়। ভিন্নধর্মী, অপ্রচলিত অবস্থান, নতুন দৃষ্টিকোণ ও নতুন প্যারাডাইম সৃষ্টি ফরাসি সৃজনশীলতার সঙ্গে অবিভাজ্য হয়ে আছে। ভিক্তর হুগো-ফ্লবারের ধ্রুপদি সাহিত্য, সার্ত্র-কামুর অস্তিত্ববাদী দর্শন, মিশের ফুকোর উত্তরাধুনিক দর্শন, মনে-সেজানের অন্তমুদ্রণাশ্রয়ী ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রশিল্প, কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।

সামনের টেবিলে কফির কাপ-পিরিচ রাখার শব্দে আমাদের যৌথ মৌনতা ভেঙে গেলো। আমিই প্রথম মুখ খুলি:
-মার্গারেট, তোমার অফিসের সঙ্গে আমার কাজের যোগসূত্র স্থাপন করলে কিভাবে?
মিষ্টি হাসলো মার্গারেট:
-সারপ্রাইজ! আমরা তোমার কাজকে অফিসিয়ালি টেক ওভার করতে চাই। এজন্য কিছু ফান্ডও তোমাকে দেবো। সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, আমার প্রতিষ্ঠান মাদক পাচার ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমরা তোমার গবেষণার তথ্য, উপাত্ত এবং তোমার সাজেশনকে আমাদের অ্যাকশন প্ল্যানে কাজে লাগাতে চাই।
আমি ভিন্নমতের সুরে বলি:
-কিন্তু আমি তো একটি উপন্যাসের চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজটি শুরু করেছি। তুমিও আমাকে সেভাবেই প্রণোদিত করেছো।

আমার কথায় বিশেষ বিচলিত হলো না মার্গারেট। স্থির কণ্ঠে বললো:
-জানি। কিন্তু পেশাগত দিক থেকে তুমি একজন অধ্যাপক ও গবেষক। উপন্যাসে তুমি যা বলতে চাও, সেটা গবেষণায় পারবে না। গবেষণায় যা দেখাতে চাও, সেটা উপন্যাসে পারবে না। আসলে তুমি এক সঙ্গে একই বিষয়ে দু’টি কাজ সম্পন্ন করেছো। আমি চাই তোমার দু’টি কাজই যথাযোগ্য স্বীকৃতি লাভ করুক। অন্যভাবে বললে, তোমার দু’টি কাজ থেকে আমরা দু দিক দিয়ে উপকৃত হতে চাই।

আমি গভীর মুগ্ধতায় মার্গারেটের সৌন্দর্য ও বৌদ্ধিক প্রভার খোঁজে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।  

কনফারেন্স রুমে যাওয়ার আগে আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হলো। আমি সব ঘটনা সবিস্তারে ওকে জানালাম। এনামুল, মলি, জেনিফার, পরী, শফি মামা, ফুলি, মিসেস খোন্দকার-কারও বিষয় বাদ দিলাম না। কেন জানি, অন্তরার কথাটি আমি মার্গারেটকে জানাতে পারি নি। আমি ঠিক বুঝি নি, অন্তরার কথা জানালে ভালো হতো, নাকি না জানানোয় ভালো হয়েছে।

সব শুনে মার্গারেট বললো:
-এখন সবচেয়ে বেশি সাবধানতার সময়। তুমি ওপেন হয়ে গেছো ওদের বিরুদ্ধে। তবে আমি চাই, এখনই তুমি কারও নাম-পরিচয় বলে তোমার কাজকে নস্যাৎ না করো। তোমার নিজের জন্যেও ঝুঁকি ডেকে না আনো।
মার্গারেটের কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই সে বললো:
-আমাকে ভুল বুঝ না। অফিসিয়ালি আমরা নন-পলিটিক্যাল, নন-গভার্নমেন্ট অর্গানাইজেশন। এটা ভালো করে খেয়াল রাখবে। আমাদের সঙ্গে থেকে তুমি তোমার রিসার্সের ব্যাপারে একটি সেমিনার দাও। সরকারি-বেসরকারি এক্সপার্টরা এতে মতামত দিক। মিডিয়ায় ফিডব্যাক হোক। সেসব তুমি নোট নাও। তারপর দেশের বাইরে গিয়ে একটি রিসার্স পেপার এবং একটি উপন্যাস লিখো। তখন তুমি থাকবে মুক্ত এবং নিরাপদ। তোমার সব কথা সেখানে অকপটে লিখতে পারবে।
মার্গারেট কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখে পবিত্র মুগ্ধতা আর আস্থার দ্যুতি। আমার সম্মতিসূচক ভঙ্গি দেখে সে বললো:
-তুমি জানো, তোমার কাজের সাফল্য দেখে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তোমার কাজের শেষ অর্জনটুকু দেখার জন্য। আমি আনন্দিত যে, তোমার কাজের একটি পর্যায়ে আমি সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করতে পারছি।

মার্গারেটের কথা না মানার কোনও কারণ নেই। সে বরং আমার কাজের গতিপথকে সহজ করে দিয়েছে। আমরা একমত হয়ে কনফারেন্স রুমে চলে এলাম। অফিসের দায়িত্বশীল সবাই অপেক্ষা করছে। মার্গারেট সবার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। আমার পদবি সে সবাইকে বললো, তাদের প্রজেক্টের কনসালটেন্ট। আলোচনার এজেন্ডা একটিই। ‘বাংলাদেশে মাদকচক্র অনুসন্ধান’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন। মার্গারেট যে সাতদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছে, এর মধ্যেই সেমিনারটি করতে হবে। সে নিজে এতে উপস্থিত থাকবে এবং বক্তৃতা দেবে। অফিসের স্টাফদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হলো। কে হল বুক করবে, কে গেস্ট আনা-নেওয়া করবে, কে মিডিয়া সামলাবে, কে খাবার-দাবারের দিকটি দেখবে, কে সরকারি ও বেসরকারি ভিআইপিদের প্রটোকল দেবে-সব কিছু অতিদ্রুত ঠিক করে দিল মার্গারেট। ওর স্কিল ও ইফিশিয়েন্সি দেখে আমার মুগ্ধতার সঙ্গে এসে মিলল খানিক শ্রদ্ধাবোধ। মিটিং শেষে মার্গারেট আমাকে আর তানিয়াকে ওর রুমে ডেকে নিল। সে তানিয়ার কাছে জানতে চাইলো:
-তানিয়া, আমার ট্যুর প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছে?
তানিয়া সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল:
-ইয়েস ম্যাডাম।
মার্গারেট বিস্তারিতভাবে সব কিছু জানার জন্য তানিয়াকে প্রশ্ন করলো:
-কেমন করলে সব কিছু, একটু বলবে আমাকে?
তানিয়া দ্রুতই উত্তর দিল:
-শিওর ম্যাডাম। আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটে আপনি চিটাগাং যাচ্ছেন। সেখানে একদিন থেকে কক্সবাজার। তারপর বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি। সব জায়গাতেই একদিন করে। আমাদের প্রজেক্টগুলো ভিজিট। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং।
মার্গারেট আরও বিস্তারিত জানতে চেয়ে বললো:
-তারপর?
তানিয়া জানায়:
-আপনি ঢাকায় ফিরবেন যে দিন, সে দিন সকালে স্যারের সেমিনার। রাতে আপনার চলে যাওয়ার ফ্লাইট। এখান থেকে আপনি যাবেন মোজাম্বিক। সেখানে আপনার ট্যুর প্রোগ্রাম সেট করা আছে।

মার্গারেট খুব করুণভাবে হাসলো। তারপর ম্লান কণ্ঠে বললো:
-তার মানে আমি একটি রাতও ঢাকায় থাকার সুযোগ পাচ্ছি না।
তানিয়া কিছু বলতে পারলো না। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মার্গারেট পরিবেশ স্বাভাবিক করতেই বোধ হয় বললো:
-ইটস ওকে। আমারই ব্যাড লাক।
শেষ কথাটি বললো সে আমার দিকে চেয়ে। আমি আমার নিজের উদাস চাহনি ফেরত দিলাম মার্গারেটকে। অনেকক্ষণ কেউ কোনও কথা বলতে পারছি না। মিনিট পাঁচেক পর মার্গারেট হাতের ঘড়ি দেখে বললো:
-আমার ফ্লাইটের এখনও দু’ ঘণ্টা বাকি। আমি অফিসে কিছু কাজ সেরে নিই। এখান থেকেই আমি এয়ারপোর্ট চলে যাবো।
আমি উঠে আসার জন্য চেয়ার ছাড়ছি। মার্গারেটকে নিজের কাজের জন্য ফ্রি টাইম দেওয়া দরকার। সে আমাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে বললো:
-তুমি আমার সঙ্গে এয়ারপোর্ট যাবে। তার আগে তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তোমার মালপত্র নিয়ে এসো। আমি ট্যুর থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি আমার রেস্ট হাউসেই থাকবে। আগের জায়গায় থাকা তোমার জন্য নিরাপদ নয়।

আমি আর তানিয়া থ হয়ে গেলাম। এটা কি অফিসিয়াল অর্ডার, না আমার প্রতি টান ? আমি স্তম্ভিতের মতো তানিয়াকে নিয়ে মার্গারেটের অফিস থেকে বের হলাম।
আমার মালপত্র বিশেষ কিছু নেই। অল্পক্ষণেই তানিয়ার সঙ্গে সব নিয়ে ফিরে এলাম। মার্গারেটের ফ্লাইট ধরার তাড়া আছে। এয়ারপোর্টের রাস্তায় আমি আর মার্গারেট পাশাপাশি গাড়ির পিছনে বসে আছি। যদিও ক্লান্তি ওকে স্পর্শ করতে পারে নি, তবুও উদাস ভাব তাকে ঘিরে রয়েছে। আমি মার্গারেটের একটি হাত ধরি। সে সম্বিত ফিরে আমার হাতটি সজোরে চেপে রইল। আমি মৃদু কণ্ঠে বলি:
-ডাকলেই যখন, তখন কাছে রইলে না কেন?
মার্গারেট কিছু বললো না। ওর ঠোঁটে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ভালো লাগার আমেজ। গাড়ি এয়ারপোর্টে ঢুকার আগে মার্গারেট আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসে বললো:
-আমি সব সময়ই তোমার সঙ্গে আছি। আজ বুঝ নি। একদিন নিশ্চয় বুঝবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

উপন্যাস এর সর্বশেষ