ঢাকা, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

১৩ বছর পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকে

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
১৩ বছর পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকে উপকূলবাসী। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজো সেদিনের ক্ষত ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ।

সেই ঝড়ের কথা মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। উপকূলের বিপন্ন জনপদে এখনও যেন সিডরের ক্ষত চিহ্ন পড়ে রয়েছে।  

ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু-পাখি, জমির ফসল, পুকুর ও মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন আয়ের উৎস হারিয়ে আজো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকে।  

সিডর বিধ্বস্ত ভেলুমিয়া, ইলিশা, রামদাসপুর, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিডরে ক্ষতিগস্ত মানুষের করুণ চিত্র। সহায়-সম্বল হারিয়ে তাদের দুঃখ দুদর্শার সীমা নেই। আয়ের উৎস ও মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে তাদের আশ্রয় হয়েছে নদীর কূলে বেড়িবাঁধে উপর কিংবা রাস্তায়। তার উপর আবার বাঁধের বাইরের বাসিন্দরা জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধ ও নদীর তীরবর্তী বিপন্ন এলাকায় এখনো সিডরের ক্ষত চিহ্ন। ঝড়, জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙনসহ একের এক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।  
ভোলার বিচ্ছিন্ন এলাকা ও উপকূলের জনপদে একের পর এক দুর্যোগ এলেও এখনও অরক্ষিত উপকূলের মানুষ। এখনো উপকূলের অনেক মানুষ ঝড়ের পূর্বাভাস পায় না। যার ফলে ঝড়ের সময় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেন না তারা।

লর্ডহার্ডিঞ্জ এলাকার লোকমান হোসেন, সিরাজ উদ্দিন ও লাল মিয়াসহ অন্যরা বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই বুঝতে পারি ঝড় আসবে, কিন্তু কত নম্বর সিগনাল তা জানতে পারি না।  

সদরের ইলিশা গ্রামের বেড়িবাঁধের আশ্রিত মো. হোসেন ও তোফাজ্জল জানান, নদীর কাছে বসবাস করে আসছি, বান-তুফান এলে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করি কিন্তু ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।
 
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। যারা দুর্গম এলাকায় গিয়েও দুর্যোগের বিষয়ে প্রচারণা চালায়। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে প্রচারণা হয় না।

তিনি বলেন, সিডরের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তখনকার চেয়ে বর্তমানে সিপিপির প্রচারণায় কিছুটা আধুনিকায়ন এসেছে, দক্ষ করে তোলা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের। দুর্যোগের আগেই প্রস্তুত থাকে তারা।
 
এদিকে উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানু, বুলবুল ও আম্পানসহ ছোট বড় অর্ধশতাধিক ঝড় বয়ে গেলেও সিডরের ভয়াবহতার কথা আজো ভুলতে পারছে না উপকূলের মানুষ।

সিডরে জেলায় ৪২ জন প্রাণ হারায় ও ৫২ হাজার ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ কিলোমিটার বাঁধ।

এদিকে ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিখোঁজ ৯ জেলে পরিবারে এমন অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সন্ধ্যান মেলেনি সেই ৯ জেলের। অনেক খোঁজাখুজি করেও তাদের মরদেহ পাওয়া যায়নি। তারা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন তাও জানে না কেউ। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা আজো তাদের প্রতিক্ষায় আছেন। প্রিয়জনের কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন স্বজনরা। এ কান্নার যেন শেষ নেই।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের না পেয়ে এসব পরিবারে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। স্বজনদের হারিয়ে অভাব অনাটনের মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের জীবন।

চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, জসিম মাঝির ট্রলার নিয়ে সিডরের কয়েকদিন আগে মাছ শিকারের গিয়েছিলেন ভোলার চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের ৯ জেলে। মাছ শিকার শেষে কারো নতুন ঘর তৈরি, কারো বিয়ে বা সন্তানের বইখাতা আর স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিলো। কিন্তু সিডরের ঝড়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন বজলু, রুবেল, জসিম, নুরু, সহিদুল, ইব্রাহিম, মামুন, জামাল আর রুবেল নামের ৯ জেলে। তারা ফিরে না আশায় অসমাপ্ত কাজগুলোর কিছুই করা হয়নি তাদের। স্বজনকে না পেয়ে ১৩ বছর ধরে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এখনো তাদের মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা। কেউ কেউ আবার তাদের ফেরার অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।