ঢাকা: আলোচিত মাইন্ড এইড হাসপাতালে তিনটি সাউন্ড প্রুফ রুম আছে এবং সেগুলো টর্চার রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বাবুর্চি শারমিন আক্তার। হাসপাতালটির তিন তলা বিল্ডিংয়ের প্রতি তলায় ১টি করে টর্চার রুম আছে বলে জানান তিনি।
শারমিন আক্তার বলেন, সাউন্ড প্রুফ রুমগুলোর মধ্যে নিচতলায় মহিলা রোগীদের যেখানে রাখা হয়, সেখানে একটি। আর তৃতীয় তলার সাউন্ড প্রুফ রুমটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আদাবর এলাকায় মাইন্ড এইড হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান শারমিন। বাবুর্চি শারমিন আক্তার হাসপাতালটিতে প্রায় দুই মাস কর্মরত আছেন।
শারমিন বলেন, সিসিটিভিতে দেখলাম চিকিৎসা নিতে আসা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম স্যারকে টেনে হেঁচড়ে ও ধস্তাধস্তি করে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। দোতলার ওই রুমে নেওয়ার পর তাকে মেঝেতে উপুর করে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরা হয়।
তিনি আরও বলেন, মাইন্ড এইড হাসপাতালের আরিফ মাহমুদ জয়, রেদোয়ান সাব্বির, শেফ মাসুদ, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ ও হাসান ভাই মূলত রোগীদের এই রুমে নিয়ে আসেন। রোগীরা বেশি উত্তেজিত হলে এখানে এনে তাদেরকে মারধর করা হয়। এরপর রোগীরা শান্ত বা স্বাভাবিক হলে তাদের বেডে নিয়ে যাওয়া হয়।
শারমিন বলেন, যখন কোনো রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়, আমরা সাধারণত কেউ দেখতে আসি না। সেদিন হঠ্যাৎ করেই এলাম। রান্না করছিলাম আর বলছিলাম, রোগীটাকে একটু দেখে আসি। এরপর সিসিটিভি রুমে গিয়ে দেখি। এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেল।
এর আগে সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন আনিসুল করিমের পরিবার।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরই আনিসুল করিমকে ছয় থেকে সাত জন টেনে হেঁচড়ে একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মেঝেতে ফেলে চেপে ধরা হয়। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এসময় একটি কাপড় দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন আনিসুল করিম।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের এই শিক্ষার্থী ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের বাবা আনিসুল করিমের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
এমএমআই/এইচএমএস/