ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কের আতঙ্ক সিএনজি-মাহেন্দ্র-লেগুনা

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
সড়কের আতঙ্ক সিএনজি-মাহেন্দ্র-লেগুনা সড়কের আতঙ্ক সিএনজি-মাহেন্দ্র-লেগুনা/ছবি-বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: নড়েবড়ে কাঠামো নিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্র ও লেগুনা।

আনাড়ি-অদক্ষ চালকেরা এসব ছোট যান চালানোয় ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

সড়কে নিয়ম-কানুন না মেনে চলা এসব বাহন স্থানীয় যাত্রীদের কাছেও আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।



বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহ শহর, ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ২০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্র ও লেগুনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এসব ছোট যানের সংখ্যা।

লোকাল বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীরাও বাধ্য হয়েই চড়ে বসছেন এসব ছোট যানে।

সূত্র মতে, গত দু’ বছরে সিএনজি ও লেগুনা নামক ছোট এসব বাহনে চড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। সর্বশেষ গত বছরের ০৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের তারাকান্দা উপজেলার মুজাহারদি এলাকায় ট্রাক ও থ্রি-হুইলার মাহেন্দ্রের সংঘর্ষে নিহত হন তিন যাত্রী।

শহরতলীর আকুয়া এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম সোহাগ বলেন, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, তিন চাকার মাহেন্দ্র ও লেগুনা যেন আকাশ দিয়ে উড়ে যায়। চালকদের এমন ভাব, যেন তারা হেলিকপ্টার চালাচ্ছেন। বাসকেও সাইড দিতে চান না। জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে এসব ছোট যানে চড়তে হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘচনার ভয়-আতঙ্কও সবার মাঝে কাজ করে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার আবুল কাশেম বলেন, অটোরিকশা চালক নিজের সিটেও যাত্রী বসান। ফলে চালক নিজেও ঠিকমতো বসতে পারেন না। বয়সে তরুণ এসব চালকদের বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই।

আরেক যাত্রী বলেন, ‘উড়াল পাইরা চইল্ল্যা এরাই দুর্ঘটনা ডাইক্ক্যা আনে। নিজেও মরে, যাত্রীগরেও মারে’।

বিভিন্ন সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা অভিযোগ করেন, এক সময় ময়মনসিংহ শহরে টাউন সার্ভিস বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন উপজেলা সড়কেও লোকাল বাসের সংখ্যা কমে এসেছে।

কোনো কোনো উপজেলায় লোকাল বাস একেবারেই উঠে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের এসব বাহনে চড়তে হচ্ছে।

‘ছোট যানগুলো এখন আতঙ্কের পাশাপাশি বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে’- এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, সড়কে এদের দাপট কমাতে হলে জেলা-উপজেলায় লোকাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ময়মনসিংহ নগরীতে টাউন সার্ভিস ফের চালু করতে হবে।  

এসব আনাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা দরকার উল্লেখ করে একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, এসব পদক্ষেপ নিলে কিছুটা হলেও দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরা যেতে পারে।

ময়মনসিংহ বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক শহীদুল আযম বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্সবিহীন এসব চালকদের ধরতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহের পুলিশ বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ছোট এসব যানে মানুষ বাধ্য হয়েই চলাচল করেন। আনাড়ি-অদক্ষ চালকরা যেন নিয়ম মেনে ধীরগতিতে চলাচল করেন, সেজন্য সভা-সমাবেশসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এমএএএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।