ঢাকা: অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৮ম সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ও আসন্ন পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয় করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি, টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসাতে হবে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বস্তিতে অভিযান বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক একগুচ্ছ নির্দেশমালা জারি করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. ঈদের সময় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ অধিদপ্তর এবং প্রযোজ্য অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সকল কন্ট্রোল রুম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের (01320001223) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
২. ঈদের সময় ট্রাফিক ও যানজট নিয়ন্ত্রণ: যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু এবং ফ্লাইওভারসহ টোলপ্লাজাসমূহে যানজট নিরসনে ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহসহ (ইটিসি) দ্রুত টোল আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৩. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনকারী বা যাত্রীবাহী যানবাহন ব্যতীত স্থলবন্দর ও নৌবন্দরসহ যেকোনো জায়গা থেকে ছেড়ে আসা নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী ও লম্বা যানবাহনসমূহ ঈদের আগের তিনদিন ও পরের ৩ দিন যেন মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে বা নৌ-রুটে ফেরি পারাপার করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৪. ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পরিবহন নির্বিঘ্ন করার জন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা হয় ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা হয় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/দপ্তর/সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং যাত্রী সাধারণকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
৫. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকাণ্ড তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন, বিশেষ বিশেষ রাস্তায় ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন, টাকা স্থানান্তরে মানি এস্কর্ট প্রদান, জাল টাকার বিস্তার রোধ ও শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৬. ঈদের ছুটির আগেই গার্মেন্টস/শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা। অন্যথায় গার্মেন্টস/কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গার্মেন্টস কারখানা, অন্যান্য শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী ও ইন্ধনদাতা মালিক, শ্রমিক এবং বহিরাগতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৭. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট- ‘জিরো টলারেন্স’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সকল ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ যাবৎ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণ মামলার বিচার কেবল দ্রুতই নয়, বিচারটা যাতে নিশ্চিত ও যথাযথ হয় ব্যবস্থা নিতে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন কঠোর করা হচ্ছে। তাছাড়া সভায় মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
জিসিজি/এমজে