ঢাকা: ডিমের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে তৃণমূল খামারিদের ঝরে পড়া রোধে স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতসহ সরকারিভাবে ডিম-মুরগির ‘সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য’ নির্ধারণের পাশাপাশি ‘সর্বনিন্ম মূল্য’ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্ট নেতারা।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পোল্ট্রি নেতারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় পোল্ট্রি খাতের নেতারা বলেন, চলতি মাসে ডিমের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ বার ডিম-মুরগির দরপতন হচ্ছে, অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছেন। খামারির সুরক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।
তৃণমূল খামারিদের ঝরে পড়া রোধে ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে:
১. স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে;
২. সরকারিভাবে ডিম-মুরগির ‘সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য” নির্ধারণের পাশাপাশি ‘সর্বনিন্ম মূল্য’ নির্ধারণ করতে হবে;
৩. কোল্ডস্টোরে ডিম সংরক্ষণের সরকারি বাধা প্রত্যাহার করতে হবে;
৪. অফ-সিজনে তৃণমূল খামারিদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে;
৫. ফিডের দাম কমাতে এআইটি, টিডিএস, ভিডিএস হার শূণ্য করতে হবে এবং
৬. ডিম-মুরগির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বিষয়ক কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে গড়ে ৮.৫০ টাকায়। অন্যদিকে টাঙ্গাইল ও নরসিংদিসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হয়েছে গড়ে প্রায় ৮ টাকায়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিটি ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে- খামার পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা, পাইকারিতে ১১.০১ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা (সংযুক্তি)। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১০.১৯ টাকা। সে হিসেবে প্রতিটি ডিম বিক্রি করে খামারির লোকসান হচ্ছে গড়ে প্রায় ১.৬৯ টাকা থেকে ২.১৯ টাকা।
তিনি বলেন, ডিমের দৈনিক উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি পিস ধরলে, বিগত ২১ দিনে খামারির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৯ থেকে ২০৬ কোটি টাকা। লোকসান সামাল দিতে না পেরে অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন- যা অত্যন্ত আশংকাজনক কারণ রমজান শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত খুললে চাহিদা বাড়বে আর তখন সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হলে দাম বাড়বে।
ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এর সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশি দেশে খামার থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে দামের ব্যবধান থাকে মাত্র এক টাকা; সেখানে আমাদের দেশে ৩ থেকে ৪ টাকা। তাই ডিমের দাম কমাতে হলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা কমাতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তারা বলেন, আগামী কয়েক বছরে ডিমের চাহিদা আরও বাড়বে। আশাকরা হচ্ছে মাথাপিছু ডিমের চাহিদা ১৩৫ থেকে বেড়ে ৩০০ হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন আড়াই গুণ বৃদ্ধি করতে হবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে না পারলে আমদানি করে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবেনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪,২০২৫
জিসিজি/এমএম